আমার মনে হয় এরপর এই বাড়িতে উঠি আমি। আঠারো মাস আগে তিন বছরের জন্য এটা লিজ নিই। ইচ্ছা ছিল ভাড়া দিয়ে কিছু রোজগার করব। কিন্তু এখন এই আশা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ কেউই এক-দু সপ্তাহর বেশি থাকে না। কেন বাড়িটা ছেড়ে যাচ্ছে এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো কারণ দেখায় না কেউই। তবে এটা বলেছেন, আমার দিক থেকে কোনো ধরনের ত্রুটি খুঁজে পাননি তারা। বরং কী কারণে যেন বাড়ির কামরাগুলো পছন্দ করতে পারছেন না। অথচ কমরাগুলো, আপনি চাইলে দেখতে পারেন, বড়সড় আর আলো-বাতাসপূর্ণ। আমি নিজেও ভূতে বিশ্বাস করি না। এখানে কিংবা অন্য কোথাও অস্বাভাবিক কিছু দেখিনি আমি। তবে যদি জানতাম এর হানাবাড়ির দুর্ণাম আছে তবে কখনো এটা ভাড়া করতাম না।
৭. বেয়াড়া আত্মা
বেয়াড়া আত্মা
পনেরো বছরের ফিলিপ নিজের জন্য এক কাপ কফি এবং দাদি সারাহর জন্য এক কাপ চা বানিয়েছে। দুই হাতে কাপ দুটো নিয়ে দাদির কামরায় ঢুকল সে। আর ঢুকেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। একটা ধূসর-সাদা ধোয়ার মেঘ যেন দাদিকে ঘিরে আছে। আজকের আবহাওয়াটা চমৎকার হলেও কামরার ভিতরে খুব শীত শীত লাগছে। বাইরে রোদ, তবে এই কামরাটা এত ঠাণ্ডা হলো কীভাবে, অবাক হয়ে ভাবল ফিলিপ। পায়ের শব্দ পেয়ে দাদি মুখ তুলে তাকিয়েছেন। অপার্থিব একটা মেঘ চারপাশ থেকে তাঁকে ঘিরে আছে দেখে থ হয়ে গেলেন সারাহও। চট করে উঠে দাঁড়ালেন, তবে ধোঁয়ার মেঘটা ঘিরেই থাকল।
এখানেই শেষ হলো না। বাড়ির সব কিছুর উপর সাদা গুঁড়োর একটা স্তর পুরু হয়ে পড়ে থাকতে দেখল তারা। এমনকী নিজের কফি এবং দাদির চায়ের ওপরও ওই একই গুঁড়ো আবিষ্কার করল ফিলিপ। তার ফুপু মেরি রান্না ঘরে ঢুকলেন আবর্জনাগুলো পরিষ্কার করতে। কিন্তু এখানে মেঝের ওপর প্রচুর পানি জমে আছে। কিন্তু রান্না ঘরের কোনো কল খোলা নেই। এত পানি তবে এল কোথা থেকে, অবাক হয়ে ভাবলেন মেরি। এদিকে মেঝেতে আরো পানি আসছে। কিন্তু মেঝেটাতে কোনো গোলমাল নেই। আশপাশে কোনোখান থেকে পানি চুইয়েও পড়ছে না। পানির কাজ করা লোকেদের খবর দিয়ে আনা হলো। কিন্তু তারাও পানির উৎস খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়ে চলে গেল।
এই ঘটনাটি ঘটে ১৯৬৬ সালের আগস্টের কোনো এক দিনে। ইংল্যাণ্ডের ইয়র্কশায়ারের পনটারাক্ট নামের এক গ্রামে। খুব পুরানো, ছোট্ট একটি গ্রাম এটি।
এদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে আরো অদ্ভুত সব কাণ্ড-কীর্তি শুরু হল বাড়িতে। ফিলিপ আর তার দাদি টিভি দেখছে তখন। রান্না ঘরে চা পাতা আর চিনি ছড়িয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেল। তারা যখন অবাক হয়ে দৃশ্যটি দেখছে তখন আপনাআপনি চা পাতার বাক্স মেঝেতে পড়ে গেল। বাড়ির কোনোখান থেকে বিস্ফোরণের চড়া একটা শব্দ শোনা গেল। বিষয়টা কী তদন্ত করতে হলের দিকে দৌড়ে গেল ফিলিপ। সেখানে কাউকেই দেখতে পেল না। তবে আরেকটা আশ্চর্য বিষয় নজর কাড়ল তার। সিঁড়িতে রাখা মাটির টবটা খালি, আর এর গাছটা শূন্যে ভাসছে। সাড়ে নটার দিকে ফিলিপকে নিয়ে তার কামরায় ঢুকলেন দাদি। এখানকার জিনিসপত্র রাখার খোপ, কাপড় সব কিছু যেন মাতালের মত টলছে।
গ্রামের সবচেয়ে নামকরা ওঝা অলিভার ডোনাল্ডকে ডেকে আনা হলো রাত দুটোর দিকে। কিছুই নজরে পড়ল না তার। বললেন, যদি সত্যি কোনো ভূত বাড়িতে আস্তানা গেড়ে থাকে তবে এর কোনো না কোনো চিহ্ন থাকবে, যেমন কিছু ছবি আপনা আপনি ছিঁড়ে যেতে পারে। তার কথা শেষ হতে না হতেই প্রিচার্ড দম্পতির ছবি দেয়াল থেকে মাটিতে পড়ে গেল। ছবিটা ঠিক মাঝখান থেকে দু-ভাগ হয়ে গেল, মনে হয় যেন ধারাল কোনো ছুরি দিয়ে দু-টুকরো করে ফেলা হয়েছে।
মেয়ে ডায়নাসহ মি. ও মিসেস প্রিচার্ড যখন একটা বনভোজন থেকে বাড়িতে ফিরে এলেন তখন বাড়িতে এমন সব কাণ্ড-কীর্তি ঘটে গেছে বিশ্বাসই করতে চাইলেন না তারা। পরের দু-বছর কিছুই ঘটল না। সব কিছু চলল স্বাভাবিক নিয়মেই।
অচেনা এই ভূত বা আত্মা যখন আবার সরব হয়ে উঠল তখন ফিলিপের বয়স সতেরো, আর ডায়নার চোদ্দ। বছরটা বদলেছে, তবে মাসটা সেই আগের মতই আগস্ট।
শুরুতে ফিলিপ আর ডায়নার কামরার জিনিসপত্র মাটিতে পড়তে লাগল। পরের চোটটা গেল মাটির টবগুলোর ওপর দিয়ে। একটার পর একটা ভাঙতে লাগল ওগুলো। বাড়ির বিভিন্ন জিনিসপত্র কোনো কারণ ছাড়াই লাফিয়ে ওপরে উঠে, তারপর নীচে পড়তে লাগল। ডায়নার কামরার জানালাটা আপনা আপনি বিচ্ছিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ল। রুমে রাখা একটা বুরুশ উড়ে এসে মেয়েটির নাকে লাগল। তবে নাকে একটা দাগও পড়ল না। সবচেয়ে অস্বস্তিকর ব্যাপার হলো অশুভ আত্মাটা সমস্ত ঘটনা ঘটাতে লাগল যখন ডায়না বাড়িতে থাকে তখনই। ঘরের বাতিগুলো আপনা আপনি নিভে যায় মাঝে মাঝেই।
স্থানীয় গির্জার এক পাদ্রীকে ভূতটাকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হলো প্রিচার্ড পরিবারের পক্ষ থেকে। ওই ভদ্রলোক, রেভারেণ্ড ডেভি যখন বাড়িটাতে এলেন এসব ঘটনাকে গাল-গপ্পো বলেই ধরে নিলেন। কিন্তু বাড়িতে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই এসব ভুতুড়ে কাজ কারবারে বিশ্বাস না রেখে উপায় থাকল না। একপর্যায়ে পাদ্রী নিজেই ভয় পেয়ে গেলেন। কামরার কোনায় থাকা বাতির স্ট্যাণ্ডটা হঠাৎ বিনা কারণে লাফিয়ে উঠল। ভিতরের একটা কামরা থেকে ধপাস একটা শব্দ হলো। মনে হলো যেন ভারি কোনো টেবিল উল্টে পড়েছে। যখন কামরাটায় ঢুকল সবাই, দেখল কাপ, পিরিচ মেঝেতে পড়ে আছে। তবে একটাও ভাঙেনি।