একটি ঘটনা বলা যাক। বাড়ির আলোকিত তিনটি কামরায় তেরোজন লোক বসে ছিলেন। এদের কয়েকজন বেশ কিছুটা সময় ধরে সময় কাটানোর জন্য তাস খেলছিলেন। তবে তাদের শান্তিতে থাকতে না দেওয়ার পণ করেছিল কিছু একটা। কারণ পুরো সময়টা জুড়ে বাড়ির নানা প্রান্ত থেকে অদ্ভুত সব শব্দ ভেসে আসতে লাগল। একবার মনে হলো বাড়ির প্রধান সিঁড়ি পথ ধরে সেনাদের একটা দল হুড়মুড় করে নেমে আসছে। দেয়ালে ঝুলানো ছবিগুলো গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়াই ভয়ানকভাবে দুলতে শুরু করল। তারপর দেয়ালে প্রচণ্ড ধাক্কার শব্দ শোনা গেল। আবার মনে হলো বন্ধ দরজা আর জানালাগুলোর ওপর কিছু দিয়ে দুম দুম করে বাড়ি দিচ্ছে কেউ। শব্দটা অনেকটা কাপড়ে পেঁচিয়ে বিশালাকার কোনো হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে যেমন মনে হবে তেমন।
দু-বার একতলার একটা কামরা কালিগোলা অন্ধকারে ডুবে গেল, অথচ বাইরে সূর্য অবিরাম আলো ঢেলে যাচ্ছে। আরেকবার কয়েকজন মানুষ এখানে উপস্থিত হলেন আসলেই ভৌতিক কোনো ব্যাপার ঘটে নাকি পরীক্ষা করে দেখার জন্য। মাঝরাতের ঠিক আগে বাড়ির সব বাতি হঠাৎ নিভে গেল। সেই সঙ্গে চারপাশ থেকে শোনা যেতে লাগল চিল্কার আর বিকট হাসি। বিশেষ করে খালি কামরাগুলো থেকে আওয়াজ এল সবচেয়ে বেশি। যারা তখন বাড়িতে উপস্থিত থাকলেন তাঁর অদৃশ্য কারো হাতে বেদম মার খেলেন। শুধু তা-ই না, সিঁড়ি থেকে কালির বিশাল একটা বোতল ছুঁড়ে মারা হলো।
এই অস্বাভাবিক ঘটনার উৎস আবিষ্কারের জন্য সব ধরনের চেষ্টাই ব্যর্থ হলো। মাঝখানে কয়েক মাসের জন্য এই ধরনের অস্বাভাবিক কীর্তি-কলাপ বন্ধ ছিল। তারপর আবার শুরু হয়। এরপর থেকে বিরতি দিয়ে চলতেই থাকে। কি একবার ঢুঁ মেরে আসবেন নাকি ফ্রান্সের এই ভুতুড়ে বাড়িতে?
৬. টু লেট
টু লেট
বেশ অদ্ভুত এই বাড়িটার কাহিনি শুনিয়েছেন আয়ারল্যাণ্ডের মি. ই, বি. লেসি। বালক বয়সে তিনি থাকতেন শহরতলীতে। প্রতিদিন সকালে ডাবলিন শহরের স্কুলে আসতে হত তাকে। এসময় এমন একটা রাস্তা দিয়ে আসতে হত যেখানে নিঃসঙ্গ একটা বাড়ি পড়ে। ওটা খালি পড়ে থাকত অনেক সময়ই। কোনো ভাড়াটে আসার পর কয়েক মাস পরেই দেখা যেত বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন তাঁরা। তারপর বাড়ি ভাড়ার নোটিশ ঝুলত। এভাবে কয়েক মাস খালি থাকার পর হয়তো নতুন ভাড়াটে আসত। তবে কাউকেই পাকাপাকিভাবে খুব বেশিদিন থাকতে দেখেননি এখানে। আট-ন বছর এই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটল। মাঝে মাঝেই তার মনে প্রশ্ন জাগত বাড়িটাতে ভাড়াটে থাকে না কেন? একদিন এক বন্ধুকে প্রশ্নটা করতে সে জানাল এটা হানাবাড়ি হিসাবে বদনাম কামিয়েছে।
কয়েক বছর পরের কথা। একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন লেসি। এসময়ই একদিন এমন একজন মহিলার সঙ্গে ব্যবসায়িক কাজে দেখা করার প্রয়োজন পড়ল, যিনি ওই মুহূর্তে হানাবাড়িটাতে বসবাস করছেন। ব্যবসা নিয়ে আলাপের এক পর্যায়ে মহিলাটি জানালেন বাড়িটি ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি। এমনিতেই এই বাড়িটা নিয়ে লেসির আগ্রহের শেষ নেই। কাজেই এমন একটা সুযোগ পায়ে ঠেলবেন তা কী করে হয়। ভদ্রমহিলাকে অনুরোধ করলেন এই বাড়িটার ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর যতটুকুন জানা আছে, বললে হেসির কৌতূহল মিটত। ভদ্রমহিলা খুশি মনেই বললেন। কাহিনির মূল রস অক্ষুন্ন রাখার জন্য মহিলাটির বর্ণনাই আমরা তুলে ধরছি পাঠকদের সামনে।
বছর চল্লিশেক আগে উইল করে এক ভদ্রলোককে দেওয়া হয় বাড়িটা। এখানে খুব বেশিদিন থাকতে পারেননি। কারণ তারপরই হঠাৎ পাগল হয়ে যান। একটা পাগলাগারদে পাঠিয়ে দেওয়া হলো তাঁকে। তারপর ভদ্রলোকের এজেন্ট এক মহিলাকে ভাড়া দিলেন বাড়িটা। গোড়ার দিকে অস্বাভাবিক কিছুই ঘটল না। কয়েক মাস পর এক সকালে রান্নাঘরের পিছনের কামরাটায় ঢুকে আবিষ্কার করলেন বাড়ির ছাদের হুকে একটা দড়িতে ঝুলছে রাঁধুনি। এর কিছুদিনের মধ্যে মহিলাটি বাড়ি ছেড়ে চলে যান।
তারপর কিছুদিন খালি পড়ে থাকে বাড়িটা। তারপর আবার টু লেট ঝুলানো হয়। আর একজন মহিলা তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করা হয়। একরাতে, একটার মত বাজে তখন, একজন কনস্টেবল টহল দিচ্ছেন, এমন সময় বাড়ির ভিতর থেকে সাহায্য চেয়ে চিৎকার শুনলেন। তারপরই দেখলেন হানাবাড়ির নারী তত্ত্বাবধায়ক জানালার কড়িকাঠ যত শক্ত করে সম্ভব আঁকড়ে ধরে আছে। মনে হচ্ছে যেন কেউ তাকে পিছন থেকে টানছে। কনস্টেবল মহিলাটিকে বললেন ভিতরে গিয়ে হলের দরজা খুলে তাঁকে ঢুকতে দিতে। কিন্তু মহিলাটি আবার কামরাটায় ঢুকতে অস্বীকৃতি জানাল। এবার কনস্টেবল বেশ শক্তি প্রয়োগ করে দরজা খুলে ফেলতে পারলেন। তারপর মহিলাটিকে টানতে টানতে হলরুমে নিয়ে এলেন। কিন্তু তখনই আবিষ্কার করলেন পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে তত্ত্বাবধায়ক।
আবার খালি হলো বাড়িটা। ঝুলল টু-লেট। এবার এক মহিলা ভাড়া নিলেন পাঁচ বছরের জন্য। কিন্তু কয়েক মাস থেকেই তালা লাগিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন। বন্ধুরা কেন ওটা ছেড়ে দিলেন জানতে চাইলেন তাঁর কাছে। জবাবে ভদ্রমহিলা বললেন নিজে এখানে থাকা কিংবা অন্য কাউকে এখানে থাকতে দেওয়ার চেয়ে বরং এর পাঁচ বছরের ভাড়া পরিশোধ করতে রাজি আছেন তিনি। তবে কেন এই বাড়ি ছাড়লেন এ সম্পর্কে কিছুই বললেন না।