মাইকেল মেডেন, ফ্রেড অলিফ্যান্ট আর আমি একটা ছাউনির ভিতর এঞ্জিন ধুচ্ছিলাম। রাত সাড়ে বারোটার দিকে ছাউনির সবগুলো দরজাতে কে বা কারা যেন ধাক্কাতে শুরু করল। সেই সঙ্গে শুরু হলো টানা একটা অপার্থিব চিৎকার। আমরা তিনজন একটা দরজার কাছে এগিয়ে গেলাম। দিব্যি দিয়ে বলতে পারি যেটা দেখেছি সেটা মানুষের চেহারারই, তবে গায়ে গতরে অনেক বিশাল। মনে হলো মূৰ্ছা যাব। মাথার সবগুলো চুল দাড়িয়ে গেছে আমার। সাহায্যের জন্য পাগলের মত চিৎকার শুরু করলাম তিনজনে। এসময়ই প্রহরী আৱ সিগন্যাল ম্যান দ্রুত এগিয়ে এল আমাদের সাহায্য করার জন্য। হাতের ক্রোবারটা (বাঁকানো লোহার ডাণ্ডার মত জিনিস) নিয়ে ভয়ঙ্কর জিনিসটার দিকে দৌড়ে গেল সিগন্যাল ম্যান। কিন্তু আঘাতটা যেন ওটার শরীর কেটে বেরিয়ে গেল। রাত আড়াইটা পর্যন্ত ছাউনির চৌহদ্দিতে শূন্যে ঝুলে রইল আত্মাটা চাঁদের আলোয় ওটাকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম আমরা। পরে ওটা অদৃশ্য হলে একটা এঞ্জিনের ছাদে উঠে সেখানে লুকিয়ে রইলাম তিনজন, ভোর না হওয়া পর্যন্ত।
পরের রাতেও ওটা এল, এবার দেড়টার দিকে। অলিফ্যান্ট আত্মাটার দিকে এগোল। কিন্তু দুই গজের মধ্যে গিয়ে মাটিতে পড়ল ধড়াম করে। ভয়ঙ্কর শব্দে চেঁচিয়ে উঠল ওটা। কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার মুখের দিকে এভাবে তাকাল রক্ত পানি হয়ে গেল। এবার ওটাকে দেখলাম মোটমাট সাত জন। ছাউনির মধ্যে আমাদের পোশাকসহ যা কিছু ছিল সব ছুঁড়ে মারল দানবটা।
এঞ্জিনের কাজ করা অন্য শ্রমিকদেরও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তাদের কথার সঙ্গে পিংকারটনের কথার কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি। এদের একজন বলল পানির একটা ট্যাংকের দিকে-যাওয়া মই বেয়ে ওটাকে বার-বার ওঠানামা করতে দেখেছে সে। এক পর্যায়ে ওই ট্যাঙ্কের ভিতরে অদৃশ্য হয় জিনিসটা। এদিকে সিগন্যাল ম্যান জানাল কীভাবে সে ক্রোবার দিয়ে আত্মাটাকে আঘাত করে আর মনে হয় জিনিসটা ওটার শরীরের ভিতর দিয়ে চলে গেছে। শেষমেশ একটা জানালা দিয়ে চলে যায় আত্মাটা।
পুরো ঘটনাটা শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এতগুলো মানুষের একসঙ্গে মতিভ্রম হওয়ার কোনো কারণ নেই। সবাই মিথ্যা বলেছে এটাও ভাবা যায় না। তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বছর কয়েক আগে এই ছাউনির ধারে একটা লোক খুন হয়। এই ঘটনার সঙ্গে রাতের এই দানবটার আগমনের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি কখনওই।শেষ বাস (প্রথম পর্ব)
সিংগাপুরের চাঙ্গির দিকে যাওয়া শেষ বাস এটি। তানাহ মেরাহর দিকে রাস্তাটা বিপজ্জনক সব বাঁকে ভরা। তবে গাড়ির চালক খুব ওস্তাদ লোক। বেশ দ্রুতগতিতে একটার পর একটা বাঁক পেরিয়ে যাচ্ছে। তারপরই হঠাৎ বাস দাঁড় করাতে হলো তাকে। কারণ, তার নজরে পড়েছে রাস্তায় দাঁড়ানো সাদা জিন্স পরা একটা মেয়ে গাড়ি থামানোর ইশারা করছে। গাড়ির মাঝখানে দাঁড়ানো কণ্ডাক্টর আর একটু হলে হুমড়ি খেয়ে পড়ত মেঝেতে।
বাসে উঠে পড়ল মেয়েটি। চালক আর কণ্ডাক্টর কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইল এই রাতে একা একা কী করছে সে। কিন্তু মেয়েটা কেবল ভাড়া দিল, কোনো জবাব না। কণ্ডাক্টর তাকে একটা টিকেট ধরিয়ে দিল। তারপর তার প্রতি মনোযোগ হারাল। কারণ পুরো দিনের হিসাব-কিতাব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সে।
এদিকে মনের সুখে গাড়ি উড়িয়ে নিয়ে চলেছে চালক।
বাস যখন শেষ স্টেশনের কাছাকাছি চলে এল তখন কণ্ডাক্টরের মনে হলো মেয়েটা এখনও গাড়ি থেকে নামেনি। উঠেই বাসের পিছনের দিকে চলে গিয়েছিল সে। মেয়েটা কোথায় নামতে চায় জানার জন্য পিছন দিকে ঘুরল সে।
কিন্তু বাসের পিছনে কেউ নেই।
ভয় পেয়ে গেল সে। দৌড়ে গিয়ে চালককে জানাল কী ঘটেছে। অবিশ্বাসভরা দৃষ্টিতে পিছনে তাকাল চালক। কিন্তু কণ্ডাক্টরের মতই সেখানে কাউকে দেখতে পেল না সে-ও।
বাসটা যখন দাঁড় করাল চালক, তখন কণ্ডাক্টর মেয়েটার দেওয়া কয়েনগুলো বের করার জন্য মানিব্যাগে হাত পুরল। কিন্তু মানিব্যাগের মধ্যে তার হাতে অদ্ভুত কিছু একটা ঠেকল। আর যখন বের করল, আঁতকে উঠে সঙ্গে-সঙ্গে ফেলে দিল। কী হয়েছে দেখার জন্য ঘুরল চালক। কণ্ডাক্টরের চোখ যেন গাড়ির মেঝেতে আটকে আছে। তবে তার আসন থেকে কিছু নজরে এল না চালকের।
ওটা কী? জানতে চাইল সে।
যখন কথা বলার অবস্থায় পৌঁছল কণ্ডাক্টর, সে বলল, একটা হাড়। সে বাসের ভাড়া মিটিয়েছে আঙুলের একটা হাড় দিয়ে।
শেষ বাস (দ্বিতীয় পর্ব)
সিংগাপুরের দুই বন্ধু শেষ বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। তবে মনে-মনে তাদের আশংকা ছিল ওটা চলে গেছে আগেই। কারণ এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে তাদের। যে বাস স্টপে দাঁড়িয়ে আছে এর সামনের রাস্তা দিয়ে কোনো গাড়ি যাচ্ছে না। আশপাশে কোনো ফোনও নেই। ( কাহিনিটি যখনকার তখনও মোবাইল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি)। বেশ চিন্তায় পড়ে গেল দুজনে। তারা এখন কী করবে?
তারপরেই দেখল একটা বাস ধীরে-ধীরে এগিয়ে আসছে এদিকে। ওহ! শেষ বাস। যাক তাহলে ওটা চলে যায়নি, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল দুই বন্ধু।
কাহিনিটা অনেক দিন আগের। তখন বাসের মাঝখানে একটা দরজা থাকত কেবল। বাসটা থামতেই হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে পড়ল দুই তরুণ।