নীচে গেটের সামনে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। আমার দিকে পিছন ফিরে বাস স্টপে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। কি আশ্চর্য, গত রাতের জামার হাতটা যে নকশার ছিল তার পরনের কাপড়টাও সেই নকশার। এসময়ই তার হাতের দিকে নজর গেল আমার। হায় খোদা! গত রাতের হাতের আংটিগুলো এই হাতেও আছে।
পিছন ফিরে থাকায় চেহারাটা দেখতে পেলাম না। আরও ভাল মত দেখার জন্য একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।
এসময়ই একটা বাস এসে দাঁড়াল রাস্তায়। বাস স্টপের তিনজন মানুষ, দুজন পুরুষ আর রহস্যময় মহিলা, বাসে ওঠা শুরু করলেন। সবার শেষে উঠলেন মহিলাটি। বাসের নীচের ধাপে একটা পা দিয়ে ধীরে ধীরে আমার দিকে ঘুরলেন।
শরীরে শিরশিরে একটা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল। মহিলাটি আমার দিকে তাকালেন। একটা হাসি দিলেন। তারপরই গাড়ির ভিতরে অদৃশ্য হলেন। আর কোনো দিন তাঁকে দেখিনি। এখনও ভাবি কখনও কি আর তাকে দেখতে পাব? আর যদি দেখা হয় কোন্ পরিস্থিতিতে?
বুড়ো ভিখারি
এবারের অভিজ্ঞতাটি বেশ নতুনই বলা চলে। এই বছর দুই-ছিন আগের কথা। অঞ্জলি নামে এক ভারতীয় তরুণীর কাহিনি এটি। বছর পাঁচেক আগেও তিনি আমেরিকা ছিলেন। এখন স্বামীর সঙ্গে থিতু হয়েছেন। চাকরি করেন মুম্বাইয়ে।
যখনকার কথা তখন তার বয়স সাতাশ, আর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মাতৃকালীন ছুটি কাটাচ্ছেন আর প্রথম শিশুর পৃথিবীতে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঘটনার দিন স্বামী অফিস থেকে ফেরার পর দুজনে ঠিক করলেন শিবাজী পার্কে বেড়াতে যাবেন। তাদের বাসা থেকে বেশি দূরে না জায়গাটি। তখনও পার্কে প্রচুর মানুষ। কিছুক্ষণ ঘোরাফেরার পর বাসায় ফিরে আসা স্থির করলেন দুজনে। তাঁর স্বামী চালকের আসনে বসলেন। অঞ্জলি সামনের অন্য পাশের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকবেন এমন সময় একজন বুড়ো ভিক্ষুক মহিলা তার জামার হাত ধরে টান দিল। ভারতে এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কাজেই এটাতে আতংকিত হওয়ার কোনো কারণ অনুভব করলেন না। মহিলাটির দিকে মুখ তুলে চাইলেন। সাধারণ এক বুড়ি ভিক্ষুকের মতই লাগল তাকে। তাকে কিছু না দিয়েই গাড়ির ভিতর ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন অঞ্জলি। বাসার দিকে রওয়ানা হলেন তাঁরা।
মোটামুটি মিনিট তিনেক গাড়ি চালাতেই বাড়ির কাছাকাছি চলে এলেন। এসময়ই লাল বাতি জ্বলায় গাড়ি থামাতে হলো। তখনই রাস্তার পাশে ভিখারি বুড়িটিকে দেখলেন আবার। অবাক হলেও আতংকিত হয়ে পড়লেন না, অঞ্জলি। বরং ওই সময় এটা নিয়ে আর কিছু চিন্তাও করলেন না। বাসায় ফিরে এলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই। রাতে অস্বাভাবিক কিছু ঘটল না। পরের দিন অঞ্জলির স্বামী অফিসে গেলে বাসায় একা হয়ে পড়লেন। দুপুর আড়াইটার মত বাজে তখন। খাওয়া-দাওয়া শেষে হালকা একটা তামত চলে এসেছে তাঁর। হঠাৎ খুব শীত করতে লাগল। মনে হচ্ছে যেন শরীরে কাঁপন ধরে যাবে। চোখ মেললেন, তারপর যা দেখলেন কোনো মতেই বিশ্বাস করতে মন চাইল না। পরিষ্কার দেখলেন কাল রাতের সেই বুড়ো মহিলাটি তাঁর খাটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হাতটা বাড়িয়ে তার কাছে আসার ইশারা করছে যেন মহিলাটি। এক মুহূর্তের জন্য অঞ্জলির মনে হলো স্বপ্ন দেখছেন। চোখ বন্ধ করে ফেললেন। তারপর সাহস সঞ্চয় করে আবার চোখ মেললেন। মহিলাটি এখনও আছে। এবার আর নির্জেকে সামলানো সম্ভব হলো না তার পক্ষে। বার-বার শুধু মনে হচ্ছে, বাচ্চাটার যদি কোনো ক্ষতি করে সে। দৌড়ে কামরা এবং বাসা থেকে বের হয়ে পাশের বাসার দরজায় ধাক্কা দিলেন। দরজা খুললে স্বাভাবিকভাবে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলেন। প্রতিবেশী মহিলাটিকে কিছু বললেন না, পাছে আবার ভাবেন পাগল হয়ে গেছেন কিংবা অন্তঃসত্ত্বা থাকার কারণে দুশ্চিন্তায় উল্টো-পাল্টা দেখেছেন। তখনই স্বামীকে বাসায় আসতে বললেন ফোন করে। ভদ্রলোক যখন এলেন তখনই কেবল বাসায় ঢুকলেন আবার। তবে তখন বাসায় কাউকে পেলেন না।
মায়ের পরামর্শে বাসায় বিশেষ একটা পূজা দিলেন অঞ্জলি। তারপর অবশ্য আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। বাচ্চাটা নিয়েও কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। আর কখনও দেখা যায়নি ওই বুড়ো মহিলাকেও। তবে অঞ্জলির পীড়াপীড়িতে ওই বাসা বদলে নতুন ফ্ল্যাটে উঠে পড়েন তাঁরা।
প্রেতাত্মার প্রতিশোধ
১৭ অক্টোবর ১৯৬৩। ঘড়ির কাঁটা রাত দশটার আশপাশে ঘুরঘুর করছে। গ্রিনহা বাড়ির দিকে রওয়ানা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমেরিকার আলাবামার এই পুলিশ প্রধানকে ধরা হয় সবচেয়ে তরুণ পুলিশ চীফদের একজন হিসাবে। দারুণ যুক্তিবাদী মানুষ হিসাবে সুনাম আছে তাঁর। ভূত, অতৃপ্ত আত্মা এসবে বিশ্বাস নেই এক রত্তিও। এমনকী এসব নিয়ে ভাবাটাকেও সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু মনে করেন না।
ক্যামেরাটা তুলে নিয়ে সরকারি গাড়িটায় উঠলেন। তারপর ফাল্কভিলেতে তার বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। আবাসিক এলাকায় প্রবেশের ঠিক আগে রাস্তার মাঝখানে অস্বাভাবিক একটা মানুষের কাঠামো চোখে পড়ল তার। অন্তত সাত ফুট লম্বা হবে ওটা। জ্বলজ্বলে কিছুতে রঞ্জিত মনে হচ্ছে দেহটা। রূপার মত ঝিকমিক করছে। এক মুহূর্তের জন্য গ্রিনহার মনে হলো লোকটার মাথায় শিং আছে।
এই অদ্ভুত জিনিসটা কী? মনে-মনে নিজেকেই প্রশ্ন করলেন গ্রিনহা। এটা কি তবে ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী? তবে চৌহদ্দিতে কোনো ধরনের উড়যান বা ফ্লাইং সসার দেখা যাচ্ছে না। কাজেই এটা ভিনগ্রহের প্রাণী এই সম্ভাবনাটা বাদ দিতে হলো।