প্রতি অক্টোবরে কি ওয়েস্টের কাস্টমস হাউসে কাঁচের ডিসপ্লেতে সাজিয়ে রাখা হয় রবার্টকে। জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়কদের মতে রবার্টের সঙ্গে দেখা করার এটাই সেরা সুযোগ। আর এসময় রবার্টের সঙ্গে নিজের পরিচয় তুলে না ধরা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তবে এই দ্রতাটুকু দেখাননি এমন লোকেরও অভাব নেই। তাদেরই একজন অরল্যাণ্ডোর এক নারী বলেন রবার্ট কিংবা তার মত দেখতে কেউ একজন কাস্টমস, হাউস থেকে বের হয়ে আসার পর তাকে বাড়ি পর্যন্ত অনুসরণ করে। শুধু তাই না ওই রাতে একটু পর পরই তার শোবার ঘরের জানালায় পুতুলটার ছায়া দেখেছেন। বাড়ির আর সবখানে বিদ্যুৎ থাকলেও সে রাতে তাঁর শোবার ঘর অন্ধকারে ডুবে ছিল।
রবার্টের পাশেই থাকে পিপারমিন্ট। যেগুলো জাদুঘরের কর্মচারীরা তার পাশে রেখে দেয়। কে জানে, ওগুলো চিবুতেচিবুতে রবার্ট হয়তো এমন কোনো পরিবারের খোঁজ করে যাদের কেবল একটি বাচ্চা আছে গেনের মত, আর তাঁরা রবার্টকে ভালবাসবে সত্যিকারের ছেলের মতই।
রাত সাড়ে তিনটা
সিঙ্গাপুর যখন ব্রিটিশদের শাসনে ছিল তখনকার ঘটনা। দুই জিগির দোস্ত ছিল। শ্রমিকের কাজ করে তারা। একজন আবার নতুন বিয়ে করেছে তখন। কাজেই সবসময় তার চিন্তা থাকে কীভাবে একটু বেশি কামাই করা যায়।
একদিন তার বন্ধু তাকে জানাল ব্রিটিশরা একটা সেতু তৈরির কাজে এক শিফটের শ্রমিকদের সাধারণ মজুরির চেয়ে বেশি টাকা দিচ্ছে। তবে সমস্যাটা হলো সময়টা একেবারেই খারাপ। এই শিফটের কাজ শুরু হয় ভোর চারটায়। বিবাহিত বন্ধুটি এক বাক্যে রাজি। কাজেই তার বন্ধু নির্মাণ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ককে বলে দুজনের কাজ পাঁকা করে ফেলল। তারপর বিবাহিত বন্ধুটিকে জানাল রাত সাড়ে তিনটার দিকে তার বাসায় আসবে সে। তারপর দুজন একসঙ্গে কাজে যাবে।
রাতে বিবাহিত পুরুষটি শুধু বিছানায় এপাশ-ওপাশ করল। তার স্ত্রীর মেজাজ চটলেও কিছু করার নেই। কারণ লোকটার ঘুম আসছে না, কাজে যাবার চিন্তায়।
এভাবে কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে গেল। এসময়ই লোকটির মনে হলো বন্ধু তার নাম ধরে ডাকছে। বউকে বলে টুকটাক জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এল। এদিকে তার বন্ধুটি রাস্তার ধারের একটা ল্যাম্প পোস্টের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকায় চেহারা বোঝা যাচ্ছে না তার।
চলো, বলেই বন্ধুটি দ্রুত হাঁটা ধরল। বিবাহিত লোকটি চাইল বন্ধুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে। কিন্তু যখনই কাছাকাছি হবার চেষ্টা করে মনে হয় যেন বন্ধুটি দূরে সরে যায়।
এদিকে স্বামী চলে যাওয়ার পর স্ত্রী আবার বিছানায় যায়। একটু পরেই পারিবারিক বন্ধুটির দরজা ধাক্কানোর আর তার স্বামীর নাম ধরে ডাকার শব্দ শুনতে পেল। কী হয়েছে বুঝতে না পেরেও চিন্তিত মহিলাটি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল। দেখে বন্ধুটি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
কই? ঘুমকাতুরে লোকটা কোথায়? উঠে রেডি হয়েছে তো? জানতে চাইল সে।
কী বলছেন? মাত্র আধ ঘণ্টা আগে না আপনার ডাক শুনে বেরিয়ে গেল সে? চমকে উঠে বলল মেয়েটা।
আধ ঘণ্টা আগে? আমার সঙ্গে? কিন্তু আমি তো কেবলই এলাম। এখন সাড়ে তিনটা বাজে, তাই না? অবিশ্বাসভরা কণ্ঠে বলল বন্ধুটি।
এবার ঘড়িটার দিকে তাকাল মহিলাটি। দেখল ঠিকই তো ঘড়িতে তিনটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। এবার স্বামীর জন্য ভয় হতে লাগল তার। কীভাবে একজন লোক এসে তার স্বামীকে নাম ধরে ডেকেছে আর সে উঠে চলে গেল, পুরো ঘটনাটা খুলে বলল বন্ধুটিকে।
এদিকে বন্ধুটিও এখন চিন্তায় পড়ে গেছে। নিশ্চয়ই রহস্যময় কোনো ব্যাপার আছে এর মধ্যে, ভাবল। কেউ একজন তার বন্ধুকে ভুলিয়ে নিয়ে গেছে। দ্রুত সেতুর কাজ যেখানে চলছে সেদিকে রওয়ানা হলো সে। বন্ধু আসলেই সেখানে পৌঁছে থাকলে তার দেখা পেয়ে যাবে।
পথেই পেল বন্ধুকে। তবে শুধু কাটা মাথাটা, রাস্তার ধারের একটা গর্তের মধ্যে। কোনো দিনই আর ধড়টা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ক্লান্ত চালক
সিংগাপুরের এক গাড়ি চালক মালয়েশিয়ান হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালাচ্ছিল। কুয়ালালামপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে যাবে সে। পথে এক জায়গায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গেল। আশপাশে কোনো বসতি চোখে পড়ল না। শুধু রাবারের বন। সাহায্যের জন্য কোথায় যাবে এ সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। এমনকী পাশ দিয়ে শাঁ শাঁ করে ছুটে চলা একটা গাড়িও দাঁড়াল না তার ইশারায়। চারপাশে আরও একবার ভালভাবে নজর বুলাল উপায়ন্তর না দেখে, যদি জনমানবের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়। এসময়ই রাবার বনের গভীরে একটা আলো নজরে এল। যাক, অন্তত ওখানে সাহায্য করার মত কাউকে না কাউকে পাওয়া যাবে, ভাবল লোকটা। সৌভাগ্যক্রমে রাবার বাগানের ভিতর দিয়ে পায়ে-চলা একটা পথ চলে গেছে। ক্লান্ত শরীরটা টেনে-টেনে আলোটার দিকে এগুতে লাগল এই পথটা ধরে।
কাছাকাছি হতেই নির্মাণ শ্রমিকদের কাঠের তৈরি দু-তলা কাঠামোটা চোখে পড়ল। সিংগাপুর, মালয়েশিয়ায় নির্মাণ প্রকল্পের এলাকায় এক সময় এ ধরনের অস্থায়ী বাড়ি বেশ দেখা যেত। কিন্তু বাড়িতে পৌঁছার আগেই বৃষ্টি শুরু হলো। অল্প সময়ের মধ্যে বৃষ্টির বেগ বেড়ে গেল। চালাঘরটার সামনে যখন পৌঁছল ততক্ষণে ভিজে একসা হয়ে গেছে।
জোরে দরজায় ধাক্কা দিল সে। গেঞ্জি আর পাজামা পরা একটা লোক দরজা খুলল। তার সমস্যাটা খুলে বলল সিংগাপুরের লোকটা। তারপর জানতে চাইল তাদের এখানে ফোন আছে কিনা আর সেটা সে ব্যবহার করতে পারবে কিনা। শ্রমিক লোকটা তখন বলল, গাড়িটা যদি ঠিকও করতে পার তাহলেও এই আবহাওয়ায় গাড়ি চালানো ঠিক হবে না তোমার। তার চেয়ে বরং রাতটা এখানে কাটিয়ে দাও। সকালে আমরা দেখব তোমার গাড়ির জন্য কী করতে পারি।