আমার ভাই সবসময়ই বেশ ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। তবে এই সপ্তাহে সে কেমন উদ্ভট আচরণ করতে লাগল। ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করে কী যেন বলে, আরা সারা রাত এপাশ-ওপাশ করে। কখনও কখনও তার ঘুমের মধ্যে কথা বলার শব্দে আমাদেরও ঘুম ভেঙে যায়। ধীরে-ধীরে ওজন হারাতে লাগল সে। এমনকি কেউ তার সঙ্গে কথা বললেও সেদিকে নজর থাকে না। খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম আমরা। তার এক বন্ধুকে বিষয়টা জানালাম। বাসায় এসে একবার ওর দিকে তাকিয়েই বলল, এটা মোটেই সাধারণ কোনো ব্যাপার মনে হচ্ছে না।
ভাইয়ের বন্ধু তাকে দুজন লোকের কাছে নিয়ে গেল। তাদের পারিবার যে কোনো অস্বাভাবিক সমস্যার মুখোমুখি হলেই এই দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের একজনই ধরতে পারলেন ভাইয়ার সমস্যাটা।
যেদিন ভাইয়ার প্রথম মনে হয়েছে দুটো চোখ তার পিছনে সেঁটে আছে সেদিনই ঘটনাটি ঘটে। কাজ থেকে ফিরবার সময় একটা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের জায়গার পাশ দিয়ে আসছিল সে। এসময় এমন একটা পথে পা দিয়ে বসে যেটা একটা আত্মা অন্য পৃথিবীতে যাবার জন্য ব্যবহার করে। দুর্ভাগ্যক্রমে ওই একই সময়ই অন্য পৃথিবীতে যাওয়ার পথে ছিল ওটা। ভাইয়া তার যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে আত্মাটা তার শরীরে ঢুকে পড়ে। এখন সে পথ হারিয়েছে।
আত্মাটা তার যাত্রাটা শেষ করতে চায়, আর ভাইয়াও চায় মুক্তি। এর একটাই সমাধান। তা হলো ভাইয়াকে আবার সেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের জায়গাটার কাছে গিয়ে পথটার ঠিক যেখানে পা দিয়েছে সেটা খুঁজে বের করে সেখানে দাঁড়াতে হবে। আর আত্মাটাও সেক্ষেত্রে খুশি মনে তাকে ছেড়ে যাবে।
ভাইয়া লোকটির পরামর্শটা মেনে নিল। তারপর যেখানে ঘটনাটা ঘটেছে সেখানে ফিরে গেল। সৌভাগ্যক্রমে যে জায়গায় আত্মাটা তার ওপর সওয়ার হয়েছিল বলে মনে হয়েছে সেটা খুঁজে পেল। পরে সে আমাদের বলেছে ঠিক সেই মুহূর্তে তার দারুণ শান্তি লাগে। আর মনে হয় কী একটা বোঝা শরীর থেকে সরে গেছে।
ভুতুড়ে পুতুল
রবার্ট দ্য হান্টেড ডল নামেই বেশি পরিচিত সে। আমেরিকার ছোট্ট, পৈশাচিক এই মুখটিকে একবার যে দেখেছে ভুলতে পারবে না যতদিন বেঁচে থাকবে।
ভুতুড়ে পুতুল নিয়ে নানান ধরনের কিচ্ছা কাহিনি তৈরি হয়ে আসছে সম্ভবত মানুষ পুতুল বানানো শেখার পর থেকেই। তবে রবার্ট অন্যদের চেয়ে আলাদা, কারণ অনেক লোকই রবার্টকে পুতুলত্বের খোলস ছেড়ে, চলাফেরা কিংবা কাজ করতে দেখার দাবি করেছে। কেউ-কেউ আবার তার আক্রোশের শিকারও হয়েছে।
রবার্ট দ্য হন্টেড ডলের অশুভ প্রভাব বিস্তারের শুরু গত শতকের গোড়ার দিকে, যখন খেয়ালি শিল্পী রবার্ট ইউজেন অটো ফ্লোরিডা শহরের কেন্দ্রে বিখ্যাত আর্টিস্টস হাউস-এ বসবাস শুরু করেন।
প্রচুর বিত্তশালী ছিল অটো পরিবার। ফ্লোরিডার জীবনে বেশ মানিয়ে গেলেন তাঁরা। স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে এই বাড়িতে থাকত তাঁদের ছোট্ট ছেলে আর বেশ কিছু চাকর-বাকর। স্থানীয় কিংবদন্তী বলে অটোরা নিয়ম-কানুনের ব্যাপারে খুব কড়া ছিলেন। কর্মচারী আর বাড়ির চাকর-বাকরদের কাছ থেকেও পুরো আনুগত্য আশা করতেন। ছেলে গেনের দেখভালের জন্য জ্যামাইকান একটা মেয়েকে চাকরি দেন তাঁরা। অটোরা বেশিরভাগ সময় আমেরিকার বিভিন্ন জায়গাসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়াতেন। এসময় এই জ্যামাইকান মহিলাই শিশুটাকে সঙ্গ দিত। কিন্তু ছোট্ট ছেলে আর জ্যামাইকান মহিলার এই চমৎকার সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হলো না।
একদিন মিসেস অটোর বিছানায় বসার জন্য চাকরি গেল জ্যামাইকান সেবিকার। তবে যাবার আগে গেনেকে সে দিয়ে গেল হাতে বোনা একটা স্টাফ করা পুতুল। লোকে বলে জ্যামাইকান এই নারী ভুডু আর কালো জাদুর কৌশল জানত। পুতুলটা বানানো হয় গেনের চেহারার আদলে। যদিও একেবারে পুরোপুরি গেনের আদল পায়নি পুতুলটা, তারপরও ওটা দারুণ মনে ধরল ছোট্ট ছেলেটির।
পুতুলটার নাম দেওয়া হল রবার্ট, গেনের নামেরই প্রথম অংশ এটা। জ্যামাইকান সেবিকার কাছ থেকে পুতুলটা নেওয়ার পর থেকে আর ওটাকে এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হতে দিল না ছোট্ট গেনে। সব জায়গাতেই পুতুলটাকে নিয়ে যাওয়া চাই তার। শহরের লোকেরা প্রায়ই মিসেস অটো আর ব্যক্তিগত পরিচারকদের সঙ্গে গেনে আর রবার্টকে শহরে ঘুরে বেড়াতে দেখতে লাগল।
খাবার সময় গেনের পাশেই নিজের ছোট্ট চেয়ারটায় বসে রবার্ট। আর মা-বাবার অগোচরে কখনও কখনও পুতুলটার মুখে দু-এক দলা খাবার পুরে দেয় গেনে। গোসলের সময় পানিতে ভিজতে-ভিজতে কাঠের জাহাজ নিয়ে যখন খেলা করে গেনে, রবার্টও থাকে পাশেই, একটা শুকনো তোয়ালের আশ্রয়ে। রাতে ঘুমে ঢুলতে থাকা ছেলেটার পাশে শুইয়ে দেওয়া হয় রবার্টকে, স্বপ্নেও ছোট্ট ছেলেটার সঙ্গী হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত তখন সে।
তবে ধীরে-ধীরে গেনে আর তার পুতুলের সম্পর্ক একটা অশুভ দিকে মোড় নিল। গেনেকে তার খেলার ঘরে লাফালাফি, হৈচৈ করতে দেখে যায় কিছুক্ষণ। তারপর মুহূর্তের বিরতি। এবার নিচু গলায় কথা-বার্তার আওয়াজ ভেসে আসে পরিচারকদের কানে। প্রথমে গেনের বালকসুলভ কণ্ঠ, তারপরই সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটা কণ্ঠ। কখনও কখনও গেনের কণ্ঠ কোনো কারণে চড়ে যায়। তবে অপর তরফ থেকে যেন কেবল বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করা হয় তাকে। এই সময় থেকেই অস্বস্তি শুরু হলো বাড়ির চাকর-বাকর এমনকি মিসেস অটোর মধ্যেও। কখনও কখনও উদ্বিগ্ন মা আবিষ্কার করেন ছেলেটা জড়সড় হয়ে কামরার এক কোনায় বসে আছে। আর পুতুলটা বিছানায় কিংবা নিজের চেয়ারে বসে যেন একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।