প্রত্যাবর্তন
কেউ মারা যাওয়ার পর তার ভূত হাজির হওয়ার রেকর্ড আছে আকছার। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবদেরই দেখা দেয় মৃত ব্যক্তির আত্মা। এমন ঘটনাগুলো পাবেন ‘প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে।
১. সাগর থেকে ফিরে
সাগর থেকে ফিরে
টম পটারকে সে অর্থে দুষ্ট ছেলে বলতে পারবেন না আপনি। কিন্তু সে দারুণ অস্থির, যেখানেই থাকবে একটা একটা না গোলমাল, ঠিক পাকাবে। কখনও কোনো পড়শির জানালা ভাঙতে চায় না সে। কিন্তু যখনই একটা বলে লাথি মারে কীভাবে না কীভাবে ওটা কাঁচের জানালার দিকেই ছুটে যায়।
ওহ, টম পটার! তোমাকে নিয়ে আমরা কী করব? লোকেরা বলে। টম কেবল দুষ্টুমি মাখা ঝকঝকে একটা হাসি দেয়। আর এটাই মন জয় করে নেয় সবার, মাফ পেতেও সময় লাগে না তার।
১৮৬০ সালের কথা। টমের বাবা নেই। কাজেই মা-ছেলে দুজনের ভরণপোষণের জন্য চাকরি করতে হয় টমের মাকে। এসময়ই হাওয়ার্ড নামের এক ভদ্রলোকের বাড়িতে চাকরি হলো তাঁর। ইংল্যাণ্ডের গ্রিনউইচে বিশাল এক বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন মি. হাওয়ার্ড।
বাড়ির ওপরের তলার একটা কামরায় আপনি থাকতে পারেন, নতুন মালিক বললেন মিসেস পটারকে। আর টম যদি কাছের কোনো স্কুলে ভর্তি হয়, তবে সম্ভবত সে একটু স্থির হবে।
ধন্যবাদ, স্যর, খুশি হয়ে বললেন মিসেস পটার। টম আসলে চমৎকার একটা ছেলে। আমার মনে হয় স্কুলে সে ভাল করবে, আর আপনার অনুগ্রহের মর্যাদা দেবে।
টমের মাথা ভাল। সে দারুণ চটপটে আর বুদ্ধিমানও। স্কুলে তার দিনগুলো ভালই কাটতে লাগল। কখনও কখনও যে সে দুষ্টুমি করে না তা না, তবে ওই আগের মতই মাফও পেয়ে যায়।
টম যে স্কুলটাতে পড়ে সেটা চালায় একটা রোমান ক্যাথলিক এতিমখানা। এই এতিমখানাটার দায়িত্বে আছেন নরম মনের একজন পাদ্রী, ফাদার টড। শুরুতেই টমের সঙ্গে পাদ্রীর দারুণ ভাব হয়ে গেল। কয়েকটা বছর বেশ শান্তিতেই কাটল। টম পড়ালেখাও করছে মনোযোগ দিয়ে। কিন্তু কৈশোরে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে আবার দুরন্তপনা পেয়ে বসল তাকে। টমকে বাগ মানানো রীতিমত অসম্ভব হয়ে পড়ল তার মার পক্ষে।
টম পটারকে নিয়ে আমরা কী করব? একদিন ফাদার টডের কাছে জানতে চাইলেন মি. হাওয়ার্ড।
টমের বয়স এখন চোদ্দ, পাদ্রী জবাব দিলেন। তাকে ভাল একটা কাজে লাগিয়ে দেওয়ার এটা চমৎকার সময়। দেখি কী করতে পারি।
অতএব কাজ করতে গেল টম। সুতির কাপড় বানায় ম্যনচেস্টারের এমন একটা বড় খামারে পাঠানো হলো তাকে। এখানে কিছু দিন আরামেই থাকল। তারপরই আবার অস্থিরতা পেয়ে বসল তাকে। মা আর ফাদার টডকে লিখে জানাল তার খুব ইচ্ছা সাগরে যাবে। এতটাই আবেগের সঙ্গে আর গুছিয়ে লিখল কথাগুলো, মনে-মনে আশঙ্কা চেপে বসলেও তাকে যাওয়ার অনুমতি দিলেন তার মা আর ফাদার টড।
১৮৬৪ সালে উলউইচের একটা প্রশিক্ষণ জাহাজে চাকরি পেল টম। এখান থেকে তাকে পাঠানো হলো রাণীর একটা যুদ্ধ জাহাজে। প্রথম কিছু অভিযান দারুণ উপভোগ করল টম। তারপর আবার সক্রিয় হয়ে উঠল তার সেই অস্থির মন। নৌ বাহিনীর কড়া নিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল সে। কয়েকজন বন্ধুসহ জাহাজ ছেড়ে পালাল। কঠিন পরিশ্রম আর নিয়মের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে যেন হাতে চাঁদ পেল ছেলেরা। দুষ্টু বুদ্ধি মাথা চাড়া দিয়ে উঠল তাদের। বোকার মত কিছু অঘটন ঘটাল। আর এগুলোই তাদের ঝামেলায় ফেলল।
একদিন টম হাজির হলো গ্রিনউইচে মি. হাওয়ার্ডের বাসায়। ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত, পরনে শতচ্ছিন্ন কাপড়। প্রচণ্ড অসুস্থ সে। মার সেবায় যখন সুস্থ হয়ে উঠল তখনই জানা গেল জাহাজ থেকে পালানোর অপরাধে তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে।
মন ভেঙে গেল হতভাগী মার। টম, তোমাকে নিয়ে আমরা কী করব? হতাশায় কাঁদতে-কাঁদতে বললেন তিনি।
এদিকে এবার মি, হাওয়ার্ডেরও ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। টমকে আর এখানে জায়গা দিতে নারাজ তিনি। মিসেস পটারকে বললেন, আমার মনে হয় ফাদার টডের পরমর্শ নেওয়া উচিত আপনার।
দয়ালু পাদ্রী কথা দিলেন এই বিপদ থেকে টমকে উদ্ধার করার জন্য তাঁর পক্ষে যতটুকু সম্ভব করবেন। জাহাজের ক্যাপ্টেন আর নৌ বাহিনীর কর্মকর্তাদের টমের, পক্ষ নিয়ে বুঝালেন তিনি। টম মন থেকে খারাপ ছেলে নয় মোটেই, বললেন পাদ্রী। আমি তাকে ভালমত চিনি। সে দুষ্ট স্বভাবের আর একটু স্বেচ্ছাচারী। কিন্তু আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত ভালই করবে টম।
পাদ্রীর কথায় মন গলল নৌ কর্তাদের। টমকে আবার জাহাজে ফিরিয়ে নিতে আর তার শাস্তি হালকা করে দিতে রাজি হলেন তারা। এবার টমকে পাঠানো হলো পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জগামী রণতরী ডরিসে।
তার চাকুরিদাতা আর পাদ্রী দুজনের প্রতিই কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠল মিসেস পটারের মন। যখন খবর পলেন সব ঠিক আছে আর টম আবার সাগরে বেরিয়ে পড়েছে, সম্পূর্ণ বদলে যাওয়া এক মহিলায় রূপান্তরিত হলেন। এদিকে জন কুপার নামের এক লোক মি. হাওয়ার্ডের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। একদিন তিনি টমের মাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন, ভদ্রমহিলাও রজি হয়ে গেলেন। যেদিন চাকরি ছাড়লেন, মি. হাওয়ার্ড করমর্দন করে বললেন, আপনি চাকরিটা ছেড়ে দেওয়ায় এক দিক থেকে ভালই হলো। আপনাকে মিসেস কুপার বলে ডাকার অভ্যাস কখনওই করতে পারতাম না আমি। আশা করি সুখী হবেন। ওই দুরন্ত ছেলেও আর কখনও দুশ্চিন্তার কারণ হবে না আপনার।