সকালে ঘুম থেকে উঠে পোশাক পরে আমার বোনকে কী দেখেছি তা খুলে বললাম। সে জানাল বাড়িটার ভুতুড়ে বলে বদনাম আছে। এখানে একটা খুন হয়। তবে সে যতদূর জানে, আমি যে কামরাতে ছিলাম তাতে খুনটা হয়নি। সেদিন এই বাড়ি ছাড়ার সময় আমার বোনকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করালাম, রহস্যটা ভেদ করার জন্য যতটুকু সম্ভব সে করবে।
বুধবার সকালে বোনের একটা চিঠি পেলাম। এতে জানাল আমি চলে আসার পর আরও খোঁজখবর নিয়েছে সে। আর জানতে পেরেছে যে কামরাটায় আমি ছিলাম খুনটা হয়েছে সে কামরাতেই। আরও বলল, আগামীকাল আমার এখানে আসার পরিকল্পনা করেছে। আর আমাকে সে রাতের ঘটনাটি বিস্তারিত লিখে রাখার পাশাপাশি ওই কামরাটার একটা নকশা এঁকে, যেখান থেকে রহস্যময় কাঠামোটা দেখা দেয় আর অদৃশ্য হয় সে জায়গা দুটো চিহ্নিত করে রাখার অনুরোধ করল।
দেরি না করে তার কথামত কাজ করলাম। পরদিন যখন এল, জানতে চাইল আমি কী তার অনুরোধ মত কাজ করেছি। কিনা? জবাবে ড্রইং রুমের টেবিলের ওপর রাখা কাগজটার দিকে ইশারা করে বললাম, হ্যাঁ, এখানেই ঘটনার বর্ণনা আর কামরার নকশাটা আছে।
বোন যখন ওটা পরীক্ষা করতে এগোল তখন বাধা দিয়ে বললাম, তোমার যা বলার আছে খুলে না বলে ওটার দিকে তাকিয়ো না। কারণ ওটা পড়ে অবচেতনভাবেই তোমার কাহিনিটার মধ্যে রং চড়িয়ে ফেলবে।
এবার সে জানাল, যে কামরাটায় আমি রাত কাটিয়েছি তার গালিচাটা উঠিয়ে দেখেছে। মেঝের একটা নির্দিষ্ট অংশে খুন হওয়া মানুষটির রক্তের চিহ্ন পেয়েছে সে। আমার অনুরোধে কামরাটার একটা নকশা এঁকে যেখানে-যেখানে রক্তের ছোপ আছে তা চিহ্নিত করল। এবার আমার আর বোনের আঁকা নকশা দুটো মিলালাম। কী আশ্চর্য! বোনের নকশায় যেখান থেকে রক্তের চিহ্ন শুরু আর শেষ দেখানো হয়েছে এর সঙ্গে আমার নকশায় দেখানো মহিলার মূর্তিটা দেখা দেওয়ার আর অদৃশ্য হওয়ার জায়গা একেবারেই মিলে গেছে।
৫. কাটামুণ্ডু
কাটামুণ্ডু
মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটে আয়ারল্যাণ্ডের ডাবলিনের উত্তর অংশে। দুইশো বছরের বেশি আগের কথা। তরুণ এক সরকারী কর্মকর্তাকে ডাবলিনে পাঠানো হয়। ভদ্রলোক একটা বাড়ি ভাড়া করেন নিজের আর পরিবারের জন্য। শুরুতেই স্ত্রী আর দুই সন্তানকে ওখানে পাঠিয়ে দেন। কয়েক দিন পর নিজে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেবেন।
একজন নার্স আর ছেলেমেয়ে দুটোসহ তাঁর স্ত্রী ওখানে গিয়ে দেখলেন বাড়িটাতে একজন বুড়ো আয়া ছাড়া আর কেউ নেই। তারা এখানে পৌঁছার একটু পরেই আয়াটি বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। টুকিটাকি কিছু জিনিস কিনতে নার্স বাড়ি থেকে বের হয়। কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফিরে এসে মহিলাটির কাছে জানতে চায় বাচ্চারা ঠিক আছে কিনা। কারণ ভুভুড়ে দুটো কাঠামো দরজার দিয়ে বের হয়ে যেতে দেখেছে সে। মহিলাটি জানালেন তার ধারণা বাচ্চারা ভালই আছে। কিন্তু তাদের কামরাটায় গিয়ে দেখলেন দুটো বাচ্চারই গলা কেটে রেখে গেছে কেউ। খুনিকে কখনওই খুঁজে বের করা যায়নি। এমনকী কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে তারও কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। হতভাগী মা পাগল হয়ে যান বাচ্চাদের শোকে। বলা হয় এর পরে অনেক বছর পর্যন্ত এই বাড়িটাতে ঢুকলেই অজানা একটা আতংক আর অস্বস্তি পেয়ে বসত লোকেদের। এমনকী যে কামরাটায় হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে। তার জানালায় নাকি মাঝেমাঝেই দেখা যেত ছোট্ট দুটো মাথা।
৬. পর্দার ফাঁকে কার মুখ?
পর্দার ফাঁকে কার মুখ?
শ দেড়েক বছর আগের ঘটনা এটি। একটি স্কুল ঘরে ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা হয় এক পাদ্রীর। তিনি ছিলেন ডাবলিনের একটা গির্জার যাজক। কিন্তু ভদ্রলোক থাকতেন বাবা-মার সঙ্গে শহর থেকে বেশ দূরে, মালাহাইডের দিকে। কখনও কখনও দেখা যেত সন্ধ্যায় কোনো কাজ পড়ে গেছে তার কিংবা কোনো সভায় উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। এদিকে তাদের বাড়িটা বেশ দূরে। তখনকার দিনে যোগাযোগ ব্যবস্থাও এখনকার মত উন্নত হয়নি। কাজেই সে বিশেষ দিনগুলোতে একটা স্কুল ঘরে রাত কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে যান। বিশাল, আসবাবশূন্য এই কামরাটিতেই সাধারণত সভাগুলো হয়। যেহেতু মাঝেমাঝে রাত কাটাতে হয় কামরাটায়, তাই এক পাশে নিজের শোবার জন্য একটু জায়গা আলাদা করে নিলেন। একটা দণ্ড টাঙিয়ে এর মধ্যে দুটো পুর্দা ঝুলিয়ে দিলেন, টান দিলে মাঝখানে এসে মিলে যায় পর্দ দুটো।
এক রাতে একটা সভা শেষে খালি স্কুলঘরটার দরজার খিল আটকে দিলেন যাজক। তারপর বিছানায় গেলেন। চন্দ্রালোকিত রাত হওয়াতে ভিতরের সব কিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।
বিছানায় যাওয়ার একটু পরেই অদৃশ্য কিছু একটার উপস্থিতি অনুভব করলেন। পরমুহূর্তেই পর্দা দুটো নড়তে দেখলেন, যেন ওপাশ থেকে কেউ গুডলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারপরই আতংকে শিউরে উঠলেন, এক জোড়া হাত ওপাশ থেকে পর্দা টানছে। পর্দা দুটো মাঝখানে এসে মিলল। এবার একটু ফাক হলো ওগুলো, আর এর মাঝখানে উঁকি দিল ভয়ঙ্কর একটা মুখ। ওটার চেহারায় এমন একটা পৈশাচিক ভঙ্গি আর নির্দয় দৃষ্টি খেলা করছে যে, গা কাঁটা দিয়ে উঠল যাজকের। কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকল মুখটা, তারপর পর্দার আড়ালে সরে পড়ল। পর্দা দুটোও জোড়া লেগে গেল আবার। যাজক বেশ সাহসী মানুষ। ওটা অদৃশ্য হতেই বিছানা থেকে লাফিয়ে নেমে পুরো কামরা তন্নতন্ন করে খুঁজলেন। যা ভেবেছেন, কাউকে পেলেন না। যত দ্রুত সম্ভব কাপড় পরে এখান থেকে বেরিয়ে এলেন। তারপর অন্ধকারে বাড়ির পথে হাঁটা ধরলেন। এই স্কুল ঘরে আর কখনও রাত কাটাননি তিনি।