জেমস যা বলছে তা বিশ্বাস করা কঠিন। আশপাশে কোনো বন নেই। কথা নেই বার্তা নেই, একটা বানরের মত দেখতে প্রাণী হাজির হবে কীভাবে। তারপর আবার ওটার চোখ নাকি নীল। কিন্তু ঘটনা হলো ওর বয়স খুব কম নয়। আর কখনও বানিয়ে বা মিথ্যা কিছু বলার অভ্যাস নেই তার। ওর সঙ্গে কামরাটায় গেলাম। সেখানে গিয়ে একটা ধাক্কা খেলাম। বিছানার যে কোনাটায় ওটা বসেছিল বলছে সে জায়গাটা গভীরভাবে দেবে গেছে। মনে হয় যেন ভারি কিছু বসেছিল। এবার আমিও নিজে আতংকিত হয়ে পড়লাম। তারপর থেকে এই কামরাটায় থাকতে জেমসকে মানা করে দিয়েছি। এখন সে তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে একই কামরায় থাকে।
ভুতুড়ে কামরা
বিশেষ কোনো কামরাকে ঘিরেও ঘটতে থাকে ব্যাখ্যার অতীত নানান আজগুবি কাণ্ডকীর্তি। ‘ভুতুড়ে কামরা’য় পাবেন এসব কামরার কাহিনি ‘সব ভুতুড়ে’।
১. আলমারিতে কঙ্কাল
আলমারিতে কঙ্কাল
এই কাহিনিটি শুনিয়েছেন সিঙ্গাপুরের এক ব্যাংক কর্মকর্তা। তাঁর এক বান্ধবীর অভিজ্ঞতা এটা।
আমার বান্ধবী তার মার সঙ্গে থাকে। আন্টি আবাসিক একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দেখভাল করেন।
মধ্যবয়স্ক এক মহিলা ওখানের একটা কামরায় থাকতেন। একদিন হঠাৎ মারা গেলেন তিনি। কামরাটা পরিষ্কার করতে গিয়েই আলমারির মধ্যে একটা কংকাল আবিষ্কার করলেন আন্টি আর অন্যরা। কঙ্কালটা কীভাবে আসল সেখানে তা কেউই বলতে পারবে না।
এরপর থেকে মহিলাটির মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে ওই কামরাটা থেকে অদ্ভুত একটা বদ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। প্রথম বছর ওটার কারণ খুঁজতে আন্টি গিয়েছিলেন ভিতরে। কিন্তু ওটা এতটাই তীব্র যে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তার। কোনো মতে পালিয়ে বাঁচেন। পরের বছর থেকে গন্ধটা একটু হালকা হয়, কিন্তু মৃত্যুবার্ষিকীর দিন নিয়ম করে ওটার উপস্থিতিতে কোনো ছেদ পড়েনি।
গত বছর মহিলাটির মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে আমার বান্ধবী ওই কামরার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সিঁড়ি বেয়ে নামতে যাবে এমন সময় মনে হলো পিছন থেকে তার নাম ধরে ডাকছে কেউ। কণ্ঠটা তার মায়ের আর ওটা আসছে ওই ভুতুড়ে কামরাটার ভিতর থেকে!
কিন্তু সে নিশ্চিত মিনিট কয়েক আগেও তার মা ছিলেন নীচের তলায়। আবার বান্ধবীটির নাম ধরে ডাকল। সন্দেহ নেই। কামরাটার ভিতর থেকেই আসছে ওটা। ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল সে। তাকে যেন কেউ টেনে নিয়ে চলেছে। যতই কাছে যাচ্ছে গন্ধটা তত তীব্র হচ্ছে। এসময়ই শুনল তার মা তাকে ডাকছেন। কণ্ঠটা চড়া আর পরিষ্কার।
তবে আসছে নীচের তলা থেকে!
সঙ্গে সঙ্গে ঘোর কেটে গেল। দৌড়ে নীচে নেমে মাকে সেখানে পেল। তাকে ঘটনাটা খুলে বলতেই দারুণ একটা ধাক্কা খেলেন। তবে যতটা না ভয় পেলেন তার চেয়ে বেশি রেগে গেলেন। কিন্তু অশরীরীর বিরুদ্ধে কী-ই বা করার আছে তাঁর।
যতদূর বোঝা যাচ্ছে মৃত মহিলাটি সেদিন ওই কামরার মধ্যে ঢুকাতে চেয়েছিল আমাকে। আমার বান্ধবীটি আমাকে বলল, ভাগ্য ভাল। একেবারে ঠিক সময়ে মা আমাকে ডাকটা দিয়েছেন।
২. রুশ ভূত
রুশ ভূত
এবার যে কাহিনিটি বলব এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মি. ডব্লিউ. ডি. এডিসন। আর এটা তিনি পাঠান মি. ডব্লিউ. টি. স্টিডকে, যিনি এটা প্রকাশ করেন বর্ডারল্যাণ্ডে।
১৮৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়াতে মি. এডিসনের বাসায় ঘটনাটি ঘটে। মাত্র সপ্তাহ পাঁচেক আগে তাঁদের প্রথম সন্তানটি পৃথিবীতে এসেছে। তাই ড্রইং রুমে পাতা একটা বিছানায় আপাতত ঠাই হয়েছে এডিসনের। খুব একটা বড় না হলেও বাসাটা বেশ খোলামেলা আর আলো-বাতাস ঢোকার বেশ ভাল সুযোগ আছে।
ঘটনার রাতে দশটার একটু পর পরই বিছানায় চলে গেলেন এডিসন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তলিয়ে গলেন গভীর ঘুমে। সাধারণত সকাল পর্যন্ত টানা ঘুম হয় তাঁর। তবে এই রাতে স্বপ্নহীন ছোট্ট একটা ঘুমের পরেই জেগে উঠলেন। কেন যেন মনে হয়েছে কেউ মাম ধরে ডেকেছে তাঁকে। উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা ভেবে চিন্তাটা ঝেটিয়ে বিদায় করে দেবেন এমন সময় আবার শুনলেন শব্দটা। ফিসফিস করে সত্যি কেউ তার ডাক নাম ধরে ডাকছে, উইলি। এখন যে নার্সটি বাচ্চাটার দেখাশুনা করে আর শোবার ঘর লাগোয়া ডাইনিংয়ে থাকে, কয়েক দিন হলো সে অসুস্থ। গত সন্ধ্যায়ও তার স্ত্রী এডিসনকে ডেকে নিয়ে গেছেন সাহায্য করার জন্য। কাজেই যখন ফিসফিস শব্দটা শুনলেন প্রথমেই তার মনে হল, ওহ! বাবুটা যন্ত্রণা করছে আবার।
কামরাটায় জানালা আছে তিনটা। আকাশে চাদনেই তবে তারারা ঝলমল করছে। এদিকে তুষার পড়ার কারণে এতে প্রতিফলিত আলোও আছে। কাজেই ঘরের ভিতরটা অন্ধকার বলা যাবে না।
মাথা ঘুরিয়ে বিছানার কিনারায় একটা নারী মূর্তি আবিষ্কার করলেন এডিসন। কোনো ধরনের চিন্তা ছাড়াই ধরে নিলেন ওটা তার স্ত্রী।
কী ঘটনা? জানতে চাইলেন।
কিন্তু ছায়ামূর্তিটা নীরব আর স্থিরই রইল। ইতোমধ্যে অন্ধকারে চোখ সয়ে গেছে এডিসনের। লক্ষ করলেন, নারীদেহটার কাঁধ আর মাথা ধূসর একটা শালে ঢাকা। তারচেয়ে বড় কথা কাঠামোটা তাঁর স্ত্রীর তুলনায় আরও বেঁটে। একদৃষ্টিতে ছায়ামূর্তিটার দিকে তাকিয়ে রইলেন। ভাবছেন কে হতে পারে এটা?
এবার এখানকার ভাষায় জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী চাও?