মজুরের গল্পটা এখানেই শেষ। কয়েক বছর পরের ঘটনা। ইতিমধ্যে তার বলা কাহিনিটা একবারেই ভুলে গেছি। এসময়ই আমার এক বন্ধুর পরিবার, যে বাড়িটার প্রবেশদ্বারের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে ওই বাড়িটা কিনে নিল। তারা সেখানে বসবাস শুরু করার পর বাড়িটাতে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করলাম। এখানে আসার পর থেকেই একটা কালো কুকুর নিয়ে ঝামেলায় পড়ে তারা। সত্যি বলতে আমি কখনও দেখিনি ওটাকে। তবে বন্ধুর পরিবারের অনেকের সামনেই দেখা দিয়েছে ওটা। বাড়ির দিকে চলে যাওয়া রাস্তাটা বেশ লম্বা। আর হঠাৎ হাজির হয়ে ললাকেদের রাস্তার বড় একটা অংশ সঙ্গ দেওয়ার বদভ্যাস গড়ে ওঠে অশুভ কুকুরটার। শেষমেশ ওটার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে আমার বন্ধুরা এই বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় বসবাস শুরু করে। আর তাদের এই অভিজ্ঞতা যেন বেশ কয়েক বছর আগে বলা মজুরের কাহিনিটিরই সত্যতা প্রমাণ করে।
আয়ারল্যাণ্ডের ভৌতিক বিড়াল
আয়ারল্যাণ্ডের ডাবলিনের উপকূলের কাছে কিলাকি হাউস নামে একটি বাড়ি আছে। বিশালাকায় একটা কালো বিড়াল এখানে দেখে গেছে অনেকবারই। বিশেষ করে ১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে এই বিড়ালটা নানান ধরনের অঘটনের জন্ম দেয়। এমনকী এখনও হঠাৎ হঠাৎ হাজির হয়ে লোকজনকে ভয় পাইয়ে দেয় ওটা।
মিসেস মারগারেট ওব্রেইন নামের এক মহিলা আইরিশ আর্ট সেন্টার স্থাপনের জন্য কিলাকি হাউস কিনবার পর থেকেই মূলত বিড়ালটাকে দেখা যেতে শুরু করে। সেসময় অট্টালিকাটির সংস্কার কাজ চলছিল। আর তখনই প্রথম ওটাকে দেখা যায়। যদিও এ ধরনের একটি ভৌতিক কালো বিড়ালের উপস্থিতির গুজব এই এলাকায় ছড়িয়ে ছিল অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে।
নামী চিত্রকর টম ম্যাকাসে মিসেস ওব্রেইনের সঙ্গে বাড়িটার সাজ-সজ্জায় ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন। দুজন শ্রমিকও সাহায্য করছিল কাজে। এক রাতে একটা দরজা লাগিয়ে ছয় ইঞ্চি লম্বা একটা স্কু দিয়ে ভালভাবে আটকে দেন তারা। কিছুটা সময় পেরোনোর পরই ওটা অদৃশ্য হয়। আপনা আপনি যেন দরজাটা খুলে গেল। শ্রমিক দুজন সহ গ্যালারিতে হাজির হলেন ম্যাকাসে, কী ঘটেছে দেখতে। অন্ধকারে কিছুই চোখে পড়ল না ঠিকমত। এসময়ই এক কোনায় কালো ছায়ার মত একটা জিনিস নজরে পড়ল। ম্যাকাসে ভাবলেন কেউ তাদের সঙ্গে মজা করছে। জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন, যেই থাক বেরিয়ে এসো। আমরা তোমাকে দেখতে পেয়েছি।
কর্কশ কণ্ঠে কেউ জবাব দিল, তুমি কখনওই আমাকে দেখতে পাবে না। দরজা খোলা রাখো। তা না হলে, আমার জানা আছে কীভাবে বেরোবার পথ খুঁজে নিতে হয়।
এরপর আর সেখানে দাঁড়াবার সাহস করল না শ্রমিক দুজন। এই কামরা থেকে পালাল তারা। দরজা লাগিয়ে সরে এলেন ম্যাকাসেও। তারপর আঁর চোখের সামনে নিজে থেকেই খুলে গেল দরজাটা। বড়সড় কুকুরের আকারের একটা কালো বিড়াল হলরুমে হাজির হলো, পরমুহূর্তেই অদৃশ্য হলো।
আয়ারল্যাণ্ডের পোল ভোল্ট চ্যাম্পিয়ান ভাল ম্যাকগান অনেকবারই রহস্যময় এই কালো বিড়ালটিকে দেখেছেন। এমনকী একবার নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে গুলিও ছোঁড়েন ওটার দিকে। তবে এতে বিড়ালটার কোনো ক্ষতি হয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
নীল চোখের বানর
এবারের কাহিনিটি বলেছেন আমেরিকার মিসৌরির ক্যারলিন নামের এক নারী। আমরা বরং এটা তার মুখ থেকেই শুনি।
বছর তিনেক আগের একটা দিন। তখন মোটামুটি ভোর সাড়ে পাঁচটার মত বাজে। আমি এবং আমার স্বামী আমাদের শোবার ঘরে ঘুমাচ্ছিলাম। আর বাচ্চাদুটো তাদের নিজেদের কামরায়। এসময়ই হঠাৎ আমার বড় ছেলে জেমস আমাদের ঘরে ঢুকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলল আমাকে। বলল একটা কিছু তাকে ঘুম থেকে তুলে ফেলেছে। ভাবলাম কোনো স্বপ্ন-টপ্ন দেখেছে। তাই বললাম আবার বিছানায় গিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে। সকালে নাস্তার সময় হলে তাকে জাগিয়ে দেব। কী মনে করে আমার কথা মেনে নিল ও। তারপর কামরাটা থেকে বের হয়ে হলওয়ে ধরে তার শোবার ঘরের দিকে চলে গেল।
কিন্তু একটু পরই জেমসকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে শুনলাম। আমি এগোবার আগেই জোরে দৌড়ে আসার শব্দ শুনলাম ওর। আমার রুমে ঢুকেই বিছানার ওপর লাফিয়ে পড়ল। কী হয়েছে বুঝতে না পেরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে। ও কেবল বলল আমার বিছানায় ওটা উঠেছে। বার বার একই কথা বলতে লাগল। শেষ পর্যন্ত বুঝিয়ে-শুনিয়ে অনেক কষ্টে শান্ত করা গেল ওকে। এবার বললাম পুরো ঘটনা ধীরে-সুস্থে খুলে বলতে। তারপর সে যেটা বলল সেটা হজম করা কঠিনই হলো আমার জন্য।
জেমস যখন নিজের কামরায় দরজা দিয়ে ঢুকছে তখন অবাক হয়ে দেখে বানরের মত, তবে অনেক বড় একটা জিনিস তার বিছানায় বসে আছে। শুধু তাই না একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে ওটা। এত জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল যে পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছিল সে। তারপরই বলল, ওটার চোখের রং তার চোখের রংয়ের মত। কিন্তু জেমসের চোখের রং নীল। একটা বানরের চোখের রং নীল হবে এটা বিশ্বাস করি কীভাবে? জিজ্ঞেস করলাম কেমন করে বুঝল ওটা বানরই ছিল। জবাবে চেহারাটার বর্ণনা দিল। আর বলল ওটার দিকে সে এতক্ষণ তাকিয়ে ছিল যে প্রাণীটার পায়ের লোমও দেখতে পাচ্ছিল।