কী সৌভাগ্য, তিনি আমাদের দেখতে এসেছেন।
কিন্তু কিছুক্ষণ পার হয়ে যাওয়ার পরও তাঁকে বসবার কামরায় আসতে না দেখে তাদের একজন বেল বাজালেন। পরিচারিকা মহিলাটি এলে বললেন, তাদের পরিচিত ভদ্রলোকটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে বলা হলো সে যেন তাড়াতাড়ি তাঁকে ভিতরে নিয়ে আসে। পরিচারিকাটি হলঘরের দরজার দিকে গেল। কিন্তু একটু পরেই সে ফিরে এসে জানাল সেখানে কেউ নেই। পরদিন বান্ধবী দুজন জানতে পারলেন গতদিন যে সময় পথটা ধরে হেঁটে আসতে দেখেছেন ভদ্রলোকটিকে, সেসময়ই মারা গেছেন তিনি।
ভুতুড়ে প্রাণী
মানুষের ভূত বা অতৃপ্ত আত্মা থাকতে পারলে অন্য প্রাণীদের থাকবে না? ‘ভুতুড়ে প্রাণী’তে রোমাঞ্চিত হবেন এমন প্রাণীদের নিয়ে কিছু ভৌতিক ঘটনার বর্ণনা শুনে।
অশুভ সাদা বাঘ
চার্লস দ্য সিলভা নামের এক লোক ভারতের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। পূর্ণিমা না হলেও চাঁদের বেশ আলো আছে। এসময়ই পিছন থেকে ট্যাপ, ট্যাপ, ট্যাপ শব্দ শুনলেন। চরকির মত ঘুরে দাঁড়িয়েই অসহায় একটা লোককে দেখলেন। সে শুধু যে অন্ধ আর খোড়া তাই নয় তার শরীরে বাসা বেঁধেছে ভয়ঙ্কর কুষ্ঠ। এদিকে বেচারা চার্লস দ্য সিলভা, জঙ্গলকে যতটা ভয় পান তার চেয়েও বেশি ভয় পান কুষ্ঠকে। দ্রুত বাড়ির পথে হাঁটতে লাগলেন। তবে অন্ধ লোকটার লাঠির ট্যাপ, ট্যাপ, ট্যাপ তাঁকে অনুসরণ করতে লাগল। ধীরে ধীরে যেন তাদের মধ্যে ব্যবধান আরও কমতে লাগল। লোকটার শরীরে মাখা তেলের, যেটা কুষ্ঠে রঞ্জিত হয়ে সাদা হয়ে গেছে, গন্ধও যেন পাচ্ছেন সিলভা।
সাহেব, তুমি যেই হও, দাঁড়াও। অনুনয় করল অসহায় লোকটা।
কিন্তু সিলভা জঙ্গলের ভিতর দিয়ে তাড়াতাড়ি হাঁটতে লাগলেন। এসময়ই হঠাৎ সামনের ঝোপ ফাঁক করে একটা শিয়ালকে আবির্ভূত হতে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। প্রাণীটা এমনভাবে তাকাল যে শরীরে কাঁপন ধরে গেল সিলভার। তারপরই যেন বাতাসে মিলিয়ে গেল ওটা। তারপর আরও একটা শিয়াল এল। তবে, ওটা আগেরটার মত অদ্ভুতুড়ে না। তাকে দেখে ছুটে পালাল শিয়ালটা।
ট্যাপ, ট্যাপ, ট্যাপ। আবার কাছাকাছি হলো কুষ্ঠরোগী। তবে এবার আশপাশে একটা বাঘের উপস্থিতির আশংকা করায় লোকটার উপস্থিতিতে অখুশি হওয়ার বদলে বরং কৃতজ্ঞতা অনুভব করলেন সিলভা। লোকে বলে শিয়াল নাকি বাঘ ডেকে নিয়ে আসে। আর ভারতের জঙ্গলে এই অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেক শিকারীরই।
কুষ্ঠরোগী অনুনয় করে বলল, খোদার দোহাই, সাহেব, থামো! শিয়ালগুলোকে দেখনি? গন্ধ তাদের পরিচয় ফাস করে দিয়েছে আমার কাছে। দয়া করে আমার সঙ্গে হাঁটো, সাহেব।
কিন্তু তাকে সাহায্য করার বদলে সিলভা যে কাজটা করলেন এর জন্য তাকে সারা জীবন ভুগতে হলো। সিলভা ওই মুহূর্তে নিজের বিবেককে বুঝালেন তিনি তাঁর স্ত্রীকে গভীরভাবে ভালবাসেন। অপর দিকে এই কুষ্ঠরোগীর না আছে কোনো স্ত্রী, সন্তান আর ভবিষ্যৎ। যেদিকে বাঘটা ঘাপটি মেরে আছে বলে সন্দেহ করছেন সেদিকে একটু এগিয়ে একটা ঝোপের আড়ালে সরে পড়লেন সিলভা। এদিকে অন্ধ লোকটা আস্তে আস্তে তাকে পেরিয়ে গেল। যাবার সময় লাঠিটা এক চুলের জন্য সিলভার পা স্পর্শ করল না। রাস্তাটা যেখানে দু-ভাগ হয়েছে সেখানে দাঁড়াল অন্ধ কুষ্ঠরোগী। উজ্জ্বল চাঁদের আলোয় তাকে খুব ফ্যাকাসে আর অসুস্থ দেখাচ্ছে। দৃষ্টিহীন দুই চোখ চারদিকে ঘুরাচ্ছে, পথের দিশা পাচ্ছে না। এসময়ই অন্ধকার জঙ্গল থেকে বিশাল একটা প্রাণী লাফ দিল। এক মুহূর্তের জন্য সিলভা ভাবলেন তার জীবনের অন্তিম সময় উপস্থিত। তারপরই কুষ্ঠরোগীর আতংকিত চিৎকার শুনতেই বুঝে গেলেন এ যাত্রা রেহাই পেয়ে গেছেন। ওদিকে তাকাতেই দেখলেন বিশাল একটা বাঘ হতভাগা লোকটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
কয়েক ঘণ্টা পরের ঘটনা। সিলভা নিরাপদেই বাড়ি পৌঁছেছেন। এসময় হঠাৎ আবার যেন ভয়ঙ্কর সেই চিৎকারটা শুনতে পেলেন। আর এর সঙ্গে যেন মৃত লোকটার তাঁকে অভিশাপ দেওয়ার শব্দও কানে এসে বাজল। তাঁর স্ত্রীকে এটার কথা বললেন না সিলভা। এমনকী ঘটনাটা বললেন অনেক রেখেঢেকে।
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, তুমি বেঁচে গেছ। বললেন ভদ্রমহিলা, তবে দুর্ভাগা কুষ্ঠ রোগীর জন্য খুব মন খারাপ হচ্ছে আমার। আমার ধারণা তোমারও কিছু করার ছিল না।
আমার রাইফেলটা সঙ্গে রাখতে পারতাম। অপরাধবোধে ভুগছেন এমন ভাব করলেন সিলভা, তবে তাতেও মনে হয় না লোকটাকে বাঁচানো যেত।
তবে আলাদাভাবে ব্যক্তিগত পরিচারক কুসাইকে কুষ্ঠরোগীর অভিশাপের বিষয়টা বললেন।
ওহ খোদা! ওটা মনে হয় নাহরা। বলল সে। আপনাকে যদি অভিশাপটা সে দিয়ে থাকে, তবে সাবধান! সে কালো জাদু জানে। একটা প্রার্থনা করে পেটের ব্যামো সারিয়ে দিতে পারত, আবার চাইলে যে কারও শরীরে জ্বর নামাতে পারত।
ভয়ে কেঁপে উঠলেন চার্লস দ্য সিলভা। ভারতে অনেক বছর ধরেই আছেন তিনি। তার এটাও জানা আছে এখানকার কোনো কোনো লোক অস্বাভাবিক আর অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। কুসাইকে তার ছোট্ট ছেলেটার দিকে নজর রাখতে বললেন। স্ত্রীকে বাঘটা না মারা যাওয়া পর্যন্ত তাঁর কোনো আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে থাকতে বললেন। কিন্তু ভদ্রমহিলা রাজী হলেন না।
শুকনো মৌসুম পার হলো, বর্ষা এল। তবে সিলভারা তাঁদের পুরানো বাসস্থানেই আছেন। জঙ্গলের সেই ভয়ঙ্কর রাতের অভিজ্ঞতার এক বছর পর ভয়াবহ একটা মানুষখেকো বাঘের খবর এল সিলভার কাছে। তবে তার আত্মা পানি করে দিল খবরের যে অংশটা তা হলো, যে-ই বাঘটার আক্রমণের শিকার হয়ে বেঁচে ফিরছে সে-ই কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সিলভা কুসাইয়ের কাছে জানতে চাইলেন বাঘটাকে সবাই, সাদা বাঘ বলে কেন?