১৮৭৯ সালের ১৭ অক্টোবর, বুধবার। বন্ধুর কাছ থেকে একটা চিঠি পেলাম। চিঠিটা পড়ে উৎফুল্ল হয়ে উঠলাম। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই গতকাল আবার বাবা হয়েছেন তিনি। আর সব কিছু ঠিকঠাকভাবেই এগুচ্ছে। কয়েকটা দিন কেটে গেল। পরের বুধবার রাত দশটার দিকে বিছানায়, গেলাম। আমার স্ত্রী, বাচ্চা আর ভৃত্য দুজন ওপরতলায় ঘুমিয়ে পড়েছে। এক তলায় স্টাডিতে ছোট্ট একটা বিছানা আছে। কখনও কখনও এখানেই ঘুমাই। অন্ধকারের চাদরে মুড়ি দিয়েছে গোটা বাড়িটা। রাতের নীরবতায় ছেদ টানছে কেবল হলরুমের ঘড়িটার টিক টিক শব্দ।
ঘুম আসবে আসবে করছে এমন সময় হালকা,দ্রুত একটা পায়ের আওয়াজ পেলাম। মনে হলো পলকা দেহের কোনো নারী হল ঘরের দরজা পেরিয়ে ঘরের ভিতর দিয়ে আসছে। তারপর মনে হলো যেন একটু দ্বিধা করল। এবার স্টাডির দিকে আসা বারান্দা ধরে হেঁটে দরজার সামনে এসে থামল। পাতলা, চঞ্চল একটা হাত দরজার হাতল হাতড়াবার আওয়াজ পেলাম। ইতিমধ্যে আমি প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছি, আমার স্ত্রী নীচে নেমে এসেছে। সম্ভবত হঠাৎ কোনো দরকার পড়েছে। বিছানায় উঠে বসে নাম ধরে ডেকে জানতে চাইলাম, কী হয়েছে। কিন্তু অপর তরফ থেকে কোনো সাড়া পেলাম না। বরং মৃদু শব্দটা থেমে গেল। কৌতূহলী হয়ে ম্যাচ ধরিয়ে একটি মোম জ্বাললাম। কিন্তু মোম হাতে দরজা খুলে কাউকে পেলাম না। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এসে দেখলাম সবগুলো দরজা লাগানো, অথৈ ঘুমে তলিয়ে আছে সবাই। বিস্মিত হয়ে স্টাডিতে ফিরে এলাম। দোর টেনে মোমটা জ্বেলে রেখেই আবার বিছানায় গেলাম। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই টের পেলাম তার উপস্থিতি। আগের ঘটনাটারই পুনরাবৃত্তি ঘটল যেন। তবে এবার দরজার হাতল চেপে ধরেছে অদৃশ্য হাতটা। অর্ধেক ঘুরালও, তারপর থেমে গেল। বিছানা থেকে নেমে আগের মতই খোঁজাখুঁজি করলাম। কিন্তু একটা জনপ্রাণীর দেখাও পেলাম না। ঘড়িতে এগারোটা বাজল। তারপর সব কিছু থেমে গেল।
শুক্রবার একটা চিঠি পেলাম। এটা পড়েই জানতে পারলাম আমার বন্ধু পত্নীটি বুধবার রাতে মারা গিয়েছেন। দেরি না করে অ্যাডারিতে হাজির হলাম। প্রিয় বন্ধুকে সান্ত্বনা দিলাম, তার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললাম। তবে আলাপচারিতার একটা অংশ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরব। তিনি জানালেন বুধবার সকাল থেকে তাঁর স্ত্রীর অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। রাতে রীতিমত প্রলাপ বকতে শুরু করেন। অসংলগ্নভাবে এমন ভাবে কথা বলতে থাকে যেন একসময়ে খুব পরিচিত আর চেনা জায়গাগুলোতে আবার হাজির হয়েছে। ভাবছিল ও তোমার বাসায়। বললেন বন্ধুটি, মনে হলো যেন তোমার সঙ্গে কথাও হয়েছে তার। কারণ কখনও কখনও কথায় বিরতি টানছিল, যেন তোমার কথা বা জবাব শুনছে। আমার মাথায় তখন অন্য একটা চিন্তা ঢুকে পড়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, ঠিক কোন সময় আমার সঙ্গে তার এই কাল্পনিক আলাপচারিতার ঘটনা ঘটেছে বলতে পারবেন কিনা? বন্ধুটি জানালেন সময়টা নির্ভুলভাবেই বলতে পারবেন। কারণ ওসময় তাঁর ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়েছিলেন। ওটা সাড়ে দশটা থেকে এগারোটার মাঝখানে। তাহলে আমার অনুমানই ঠিক, ভাবলাম। ওই সময়ই আমার বাসায় পাতলা শরীরের একজন নারীর উপস্থিতি টের পেয়েছিলাম।
৪. রহস্যময় আলো
রহস্যময় আলো
আয়ারল্যাণ্ডের এক নারী তার নিজের এই অভিজ্ঞতাটি পাঠিয়েছিলেন। এটা উনিশ শতকের শেষদিককার ঘটনা। চলুন মহিলাটির মুখ থেকেই শুনি।
আমার এক বোন ছিল। আমার বাসা থেকে বেশ দূরে তার বাসা। শরীর কখনওই খুব একটা ভাল থাকত না তাঁর। একবার বেশ কিছুদিন দেখা না হওয়ায় আমাকে যাওয়ার জন্য লিখলেন। আমিও সম্মতি জানিয়ে দিলাম। কোন দিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাব তাও স্থির করে ফেললাম। তখন ফেব্রুয়ারি মাস। যেদিন যাব তার আগের দিন সন্ধ্যায় ছোট্ট বসবার কামরাটায় আগুনের ধারে বসে আছি। ঘড়িতে দেখলাম পাঁচটা বাজে। ফায়ারপ্লেসের আগুন ছাড়া কামরায় আর কোনো আলো নেই। ওটার পাশেই একটা আরাম কেদারা। আমার বানটি যখন এ বাড়িতে আসেন তখন সাধারণত ওখানেই বসে সময় কাটান। এসময়ই হঠাৎ আলোকিত হয়ে উঠল আরামকেদারাটা। আলোটা এত উজ্জ্বল যে মনে হলো যেন ওটার ঠিক নীচে একটা বাতি রেখে দিয়েছে কেউ। অথচ ওটা ছাড়া গোটা কামরাটাতেই আলো আঁধারির খেলা। অবাক হয়ে চেঁচিয়ে উঠলাম, কী হলো চেয়ারটার? পরমুহূর্তেই আলোটা অদৃশ্য হলো। চেয়ারটা আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেল।
পরদিন সকালে জানতে পারলাম গত সন্ধ্যায় আমার বোন পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন। আর মারা গেছেন ঠিক ওইসময়ই যখন রহস্যময় আলোটা দেখা গিয়েছিল আরাম কেদারাটায়।
৫. দরজার সামনের লোকটা
দরজার সামনের লোকটা
এই কাহিনিটি প্রকাশ করেছেন গ্রিন পার্কের মিস গ্রীন। আর এটা তাঁকে বলেছিলেন তাঁর পরিচিত এক অভিজাত নারী।
ভদ্রমহিলা তখন তার এক বান্ধবীর সঙ্গে ডাবলিনের শহরতলীর এক বাড়িতে থাকতেন। বাড়ির সামনেই ঘাসে ঢাকা জমি। একে দু-ভাগ করে দিয়েছে কাঁকর বিছানো একটা পথ। রাস্তার দিকে মুখ করা গেটটা পর্যন্ত চলে গেছে পথটা।
সেদিন বাড়ির সামনের দিকের একটা কামরায় বসে সেলাইয়ের কাজ করছেন মহিলা দুজন। এসময়ই গেট খোলার শব্দ পেলেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে পরিচিত একজন বয়স্ক মানুষকে পথটা দিয়ে হেঁটে আসতে দেখলেন। তিনি যখন দরজার দিকে এগিয়ে আসছেন দুজনেই উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে উঠলেন, ওহ