রিভিও অভ রিভিওস-এ আশ্চর্য একটা ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন ডব্লিও.টি.স্টিড। ইংল্যাণ্ডের নিউক্যাসলের একটি স্টুডিওতে এটা ঘটে। এই কাহিনিটার সত্যতা সম্পর্কে তিনি জোর গলায় বলতে পারার কারণ ছিল একাধিক মানুষ এতে সাক্ষী হিসাবে ছিলেন। আর একটা নষ্ট ছবিও এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসাবে কাজ করে।
৪৩ গ্রেইনজার স্ট্রীটের এই দোকানটির মালিক ছিলেন মি. ডিকিনসন।
১৮৯১ সালের ৩ জানুয়ারি। সকাল আটটার একটু আগেই দোকানে পৌঁছে গেলেন ডিকিনসন। আজ একটু তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন, কারণ যে ছেলেটার কাছে সাধারণত চাবি থাকে সে অসুস্থ। বাইরের লোহার গেটটার তালা খুলে ভিতরের ছোট গেটটাও খুললেন। তারপর দোকানে ঢুকে গ্যাস বাতি জ্বাললেন। এসময়ই বুঝলেন একজন আগন্তুক এসেছেন দোকানে। কোট আর মাথায় টুপি পরা একজন মানুষ। রোগা আর দুর্বল মনে হওয়া ছাড়া অতিথির মধ্যে আর কোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ল না ডিকিনসনের।
আমার ছবিগুলো কি নিতে পারব? জানতে চাইলেন আগন্তুক।
আপনি কে? আমরা এখনও দোকান খুলিনি। একটু রূঢ়ভাবেই বললেন মি. ডিকিনসন। আগন্তুক জানালেন তার নাম থম্পসন। ডিসেম্বরে ৬ তারিখ এখানে ছবি তোলেন তিনি। পরীক্ষা করে ডিকিনসন দেখলেন ভদ্রলোকের কথা ঠিকই আছে। ৬ ডিসেম্বর ১৮৯০, শনিবার হেপবার্ন কুয়ারির মি. জে.এস.থম্পসনের নাম লিপিবদ্ধ আছে। ছয় কপি ছবির দামও পরিশোধ করেছেন ভদ্রলোক। ছবিগুলো তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। তাই তাঁকে কয়েক ঘণ্টা বাদে যোগাযোগ করতে বললেন।
পুরো রাত ভ্রমণ করে এসেছি। আবার আসা সম্ভব হবে না আমার পক্ষে হতাশ কণ্ঠে বললেন মি. থম্পসন। যখন দোকান ছেড়ে যাচ্ছেন তখন দোকান মালিক জানতে চাইলেন ছবিগুলো কী তারা ডাকে পাঠিয়ে দেবেন কিনা। কিন্তু কোনো উত্তর এল না অপর তরফ থেকে।
ডিকিনসনের তরুণী, বুদ্ধিমতী সহকারী মিস.সিমন এল নয়টার দিকে। মি. থম্পসনকে অস্বাভাবিক রকম মনমরা লাগছিল। তাই শুরুতেই এই বিষয়টা দেখতে, বললেন মেয়েটাকে।
কেন? গতকালই তো একজন বুড়ো মানুষ গুলোর খোঁজে এসেছিলেন। জবাব দিল সে, আমি তাকে বলেছি খারাপ আবহাওয়ার কারণে এই সপ্তাহে ওগুলো তৈরি হবে না। খারাপ আলো মোটামুটি তিন সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়েছে আমাদের সব কাজ। পাঠকদের অনেকেরই হয়তোবা ধারণা আছে আবহাওয়া ছবির একটা ডার্ক রুমের ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে। তাও আজ থেকে সোয়াশো বছর আগে। তারপরও সন্তুষ্ট হতে পারলেন না ডিকিনসন। মেয়েটাকে প্লেটটা দেখাতে বললেন তিনি। ওটা উল্টে থাকলেও আজ সকালের আগন্তুককে চিনতে কষ্ট হলো না তার। যখনকার কথা বলা হচ্ছে তখন নেগেটিভ প্রিন্ট করা হত গ্লাস পেটে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রিন্টগুলো নেওয়ার আগেই প্লেটটা ভেঙে গেল। মি. ডিকিনসন দেরি না করে দুঃখ প্রকাশ করে থম্পসনকে চিঠি লিখলেন। সেই সঙ্গে কষ্ট করে আরেকবার এসে ছবি তুলে যাওয়ার অনুরোধ করলেন। তবে নতুন করে এর জন্য আর খরচ গুণতে হবে না তাকে। তারপরই বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে, অন্য কাজে, মনোযোগ দিলেন।
৯ জানুয়ারি, ১৮৯১। মিস সিমন এসে জানাল একজন ভদ্রলোক এসেছেন ওই নেগেটিভটার খোঁজে।
কোন্ নেগেটিভ? জানতে চাইলেন তিনি।
গত সপ্তাহে যেটা আমরা ভেঙে ফেলেছি সেটা। বলল মিস. সিমন।
আমি এই মুহূর্তে ব্যস্ত, তাই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারছি না। তবে তুমি আমার প্রস্তাবটা জাগে। তাই যত দ্রুত সম্ভব মি. থম্পসনের সঙ্গে একটা সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করো।
কিন্তু তিনি তো মারা গেছেন।
দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে নীচে নেমে এলেন ডিকিনসন। সেখানে বয়স্ক একজন লোকের সঙ্গে দেখা হলো তাঁর। বিষাদ মাখা কণ্ঠে মি. থম্পসনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করলেন তিনি। কিন্তু এটা খুবই অপ্রত্যাশিত, বললেন ডিকিনসন। গত শনিবারই মাত্র তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে।
আপনি ভুল করছেন, স্যর। বললেন বুড়ো মানুষটি। গত শনিবার মারা গেছে সে।
বুড়ো লোকটি থম্পসনের বাবা। গত শুক্রবার তাঁরই মিস. সিমনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তাঁর ছেলে ছবির জন্য খুব চেঁচামেচি করতে থাকায় বাধ্য হয়েই এখানে এসেছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন ছবি পেলে হয়তো ছেলেটা একটু শান্তি পাবে।
শনিবার সকালে মি. ডিকিনসনের সঙ্গে তবে কে দেখা করেছে তা এক রহস্যই রয়ে গেল। বুড়ো ভদ্রলোক নিশ্চিত করেছেন শরীরের ওই অবস্থায় বিছানা ছেড়ে এখানে আসা তাঁর ছেলের পক্ষে ছিল এবারেই অসম্ভব। ও এখানে আসেনি। বললেন তিনি। কারণ ছেলে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে তিনি আর তাঁর স্ত্রী সবসময়ই তার পাশে বসে ছিলেন। ডিকিনসন যে সময় তাঁর এখানে মি. থম্পসন এসেছেন বলছেন তখন সে আসলে এখান থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে নিজের বাড়িতে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে।
ঘটনাটিকে যদি আপনি সত্যি হিসাবে মেনে নেন তবে এর যুক্তিসংগত কোনো ব্যাখ্যা নেই। কারণ আর কেউ মি. থম্পসনের ছবি নিতে আসার কোনো কারণ নেই। আর প্লেট দেখে এবং পরে সারাই করা প্লেট থেকে বের করা ছবি দেখে থম্পসনকে চিনতে কোনো ভুল হয়নি দোকান মালিকের। আপনি হয়তো বলতে পারেন সকালে ওভারকোট আর টুপি পরা একজন লোককে দেখে ডিকিনসন ভুল করতে পারেন। হ্যাঁ, এটা হতেই পারে। তবে প্রায় কাছাকাছি চেহারার একজন মানুষ কোন্খান থেকে মি. থম্পসনের ছবি দাবি করতে আসবে সে প্রশ্ন রয়েই গেল।
২. উদ্ধার
উদ্ধার