এই কাহিনিটি পাওয়া গেছে রেভারেণ্ড এইচ.আর.বি. গিলেসপির কাছ থেকে। ঘটনাটা যাঁরা দেখেছেন তাঁদের একজনই এটা বলেন তাঁকে। এটা উনিশ শতকের শেষদিকের ঘটনা।
চন্দ্রালোকিত এক রাতে আয়ারল্যাণ্ডের লেইট্রিমের এক গ্রাম্য রাস্তা ধরে ঘোড়ার গাড়িতে আসছিলেন এক লোক, তার দুই মেয়ে আর ভদ্রলোকের এক বন্ধু। একসময় খাড়া একটা পাহাড়ের কাছে এলেন। ঘোড়াটার বোঝা কমাতে চালক ছাড়া বাকিরা নেমে হাঁটা শুরু করলেন রাস্তা ধরে। মেয়েদের একজন সামনে, তার পিছনে বাকি দুজন। খুব বেশিদূর এগোননি এমন সময় পিছনের দুজন দেখলেন সামনের মেয়েটার পাশেই জীর্ণ, ছেঁড়াখোড়া পোশাকের এক লোক হাঁটছে। তবে মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে না পাশের লোকটার উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন সে। লোকটা কে হতে পারে ভেবে, তাকে ধরার জন্য জোরে পা চালালেন পিছনের দুজন। কিন্তু যখনই প্রায় ধরে ফেলেছেন এমন সময় দৌড়ে রাস্তার পাশের একটা পরিত্যক্ত কামারশালার ছায়ায় অদৃশ্য হয়ে গেল ওটা। ঘোড়াটা, যেটা এতক্ষণ খুব শান্ত ছিল, প্রচণ্ড অস্থির হয়ে উঠল। এদিকে যে মেয়েটার পাশে রহস্যময় লোকটা হেঁটেছে সে কিছু দেখেনি এমনকী কোনো শব্দও শুনতে পায়নি। রাস্তার কিনারায় গাছপালার সারি কিংবা কোনো ঝোপ-জঙ্গল নেই। তাই চাঁদের আলোয় দৃষ্টিবিভ্রম ঘটেছে এটাও বলা যাবে না। মেয়েদের একজন পরে স্থানীয় এক শ্রমিককে ঘটনাটি খুলে বললে এর একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। শ্রমিকটা জানায়, এটা সম্ভবত সেই কামার, ছমাস আগে যাকে মৃত অবস্থায় ওই কামারশালায় পাওয়া যায়।
৭. শিকল পায়ে কে যায়?
শিকল পায়ে কে যায়?
এই কাহিনিটি বলেছেন আয়ারল্যাণ্ডের ডাবলিনের এক মহিলা। মোটামুটি সোয়াশো বছর আগের ঘটনা এটি।
চমৎকার এক রাতে দুই বোন থিয়েটার থেকে বাড়ি ফিরছেন। কিমেজ রোডের খুব নির্জন একটা অংশ পার হচ্ছেন তারা। গল্প আর হাসি-ঠাট্টায় এতটাই মশগুল যে অন্য দিকে তেমন একটা নজর নেই। এসময়ই তাদের দিকে শিকল পরা কারও এগিয়ে আসার শব্দ পেলেন। ক্লিক, ক্লিনক। প্রথমে ভাবলেন এটা নিশ্চয়ই কোনো ছাগল কিংবা গাধা। ছুটে গিয়ে, শিকল মাটিতে হেঁচড়ে হেঁচড়ে তাদের দিকে আসছে। কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছেন
তারা। শিকলের শব্দ ছাড়া কানে আসছে না অন্য কোনো আওয়াজও। কিন্তু রাস্তাটা পরিষ্কার আর সোজা চলে গেছে। শব্দটা ক্রমেই কাছে আসছে, সেই সঙ্গে চড়ছে। যখন তাদের পাশ কাটাল, একটা দমকা বাতাস এসে লাগল গায়ে। অজানা একটা আতংকে যেন নড়াচড়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। তারপর খুব কষ্টে বাকি পোয়া মাইল পেরিয়ে বাড়ি পৌঁছলেন। এদের মধ্যে বড় জনের স্বাস্থ্যের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। তাকে বলতে গেলে বয়ে নিয়ে আসতে হলো ছোটজনকে। বাড়িতে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে বড় বোন শরীর ছেড়ে দিলেন। ব্র্যাণ্ডি খাইয়ে তাঁকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলো।
পরে জানা গেল, রাস্তার যেখানে বোনদের এই অভিজ্ঞতা হয় এর ধারেই এক বুড়ো মহিলাকে অর্থ-কড়ি হাতাবার জন্য খুন করে এক ভবঘুরে। ধারণা করা হয় কিমেজ রোডে ভুতুড়ে কাণ্ড-কীর্তির সঙ্গে ওই মহিলার কোনো সম্পর্ক আছে।
৮. দৌড় শুধু দৌড়
দৌড় শুধু দৌড়
এবারের ভৌতিক অভিজ্ঞতাটি হয়েছে সিংগাপুরের এক তরুণীর। এটা বরং তার মুখ থেকেই শুনি।
গত বছর জীবনের সবচেয়ে ভীতিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। আরেকটু হলেই মরতে বসেছিলাম।
আমার ষান্মাসিক পরীক্ষার দু-মাস আগের ঘটনা। ক্লাসের শিক্ষক ক্রস-কান্ট্রি দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য বাছাই করলেন আমাকে। অনেক গাঁইগুই করেও পার পেলাম না। কারণ গত বছরও এতে অংশ নিয়েছিলাম আমি।
অনেক দিন ধরে দৌড়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। প্রস্তুতিটা ঠিকমত হওয়ার জন্য নিয়মিত দৌড় অনুশীলনের সিদ্ধান্ত নিলাম, কয়েকজন বান্ধবীর সঙ্গে। ঠিক হলো ম্যাকরিটচি রিজার্ভে অনুশীলন করব আমরা।
পরের শনিবার একদম সকালে সেখানে হাজির হয়ে গেলাম। তখনও খুব একটা আলো হয়নি। তবে দুটো মেয়ে ইতিমধ্যে উপস্থিত হয়ে গেছে। এখনও এসে না পৌঁছননা তিনটা মেয়ের জন্য অপেক্ষা না করে দৌড়নো শুরু করে দিলাম আমরা।
কয়েকশো গজ এগুবার পরই বুঝে গেলাম অনেক দিন না দৌড়নোতে আর আগের মত সাবলীল নেই আমি। বান্ধবীরা আমার থেকে অনেক ফিট এখন। তারা যেন বুনো খরগোশের মতই দৌড়চ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে বেশ পিছনে পড়ে গেলাম। মনে মনে আমার শিক্ষককে, দু-পাশের এই জঙ্গলকে আর নির্বাচিত হওয়ার জন্য নিজের কপালকে অভিশাপ দিতে দিতে একা একা ধীর গতিতে ছুটতে লাগলাম।
দৌড়বার সময় বানরদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পেলাম। বনের যেখানটায় এখন আছি এদিকে গাছপালা বেশ গভীর। সকালের সূর্যের আলো ভালমত ভিতরে ঢুকতে পারছে না। এ কারণেই ম্যাকরিটচি রিজার্ভকেই, যেটাকে লোকে পোষ মানানো একটা বাগান বলে, গভীর জঙ্গল বলে মনে হতে লাগল।
চারপাশের গাছপালার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দৌড়চ্ছি, যদি একটা বানরের দেখা পেয়ে যাই এই আশায়। এসময়ই হঠাৎ বাম গালে জ্বালা ধরানো একটা ব্যথা অনুভব করলাম। মনে হলো যেন নিচু হয়ে ঝোলা কোনো ডালের বাড়ি খেয়েছি। কিন্তু চারপাশে তাকিয়ে এমন কোনো ডাল-পালা নজরে এল না। মনে মনে বললাম, তবে নিশ্চয় কোনো পোকামাকড় কামড়েছে।