এবারের অভিজ্ঞতাটি হয় মানস্টার অ্যাণ্ড লেইনস্টার ব্যাংকের মি. জে. জে. উলির। আয়ারল্যাণ্ডের ক্লনমেলের বাইরে, একটা
সড়ক চলে গেছে পর্বতের ধারে পুরানো এক বসতির দিকে। এই রাস্তা ধরেই ক্রউলি যাচ্ছিলেন তার দুই বন্ধুর বাসায়। বন্ধু দুজনও চাকরি করেন ব্যাঙ্কে। রাত আটটার মত বাজে তখন। আকাশে চাঁদ নেই। একসময় একটা সেতুর পোয়া মাইলের মধ্যে চলে এলেন। ছোট্ট একটা ঝরণার ওপরে সেতুটা। ওটার ধারেই তাঁর বন্ধুদের বাড়ি। এসময়ই একটা মেয়েকে দেখলেন। পরনে সাদা পোশাক, তবে কালো একটা কাপড় ঝুলছে কাঁধ থেকে, দীঘল চুল। আস্তে আস্তে সেতুতে উঠছে। তারপরই সেতুর অপর পাশ দিয়ে নীচে নেমে অদৃশ্য হয়ে গেল। অবাক হয়ে ক্রউলি ভাবলেন এত দূর থেকে চাঁদহীন রাতে কাঠামোটা এত পরিষ্কারভাবে দেখতে পাওয়ার কারণ কী তাঁর? মনে হলো নিশ্চয় কোনো ধরনের আলো মেয়েটির ওপর পড়েছে, কিংবা আশপাশে অন্য কেউ আছে, যে একটা ম্যাচ জ্বেলে। সেতুর কাছে পৌঁছলেন যখন, চারপাশে ভালভাবে খুঁজে কাউকে পেলেন না।
বন্ধুদের বাড়িতে পৌঁছে কী দেখেছেন বললেন। এসময় তাঁদের একজন একটা ঘটনা বললেন। কয়েক রাত আগে হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে যায়। তারপরই দেখেন বিছানার ধারে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। মেয়েটার পরনের পোশাক আর গঠন ক্রউলির বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়। ভয়ে বন্ধুটি তখনই এই কামরা ছেড়ে দৌড়ে বের হয়ে যান। রাতে কাটান বাড়ির অন্য এক ভাড়াটের সঙ্গে। ঘটনাটি বাড়িওয়ালীকে জানান পরে। ভদ্রমহিলা তখন বললেন নারীমূর্তিটিকে এই এলাকায় মাঝেমাঝেই দেখা যায়। এটা তারই এক মেয়ের আত্মা। বছর কয়েক আগে বেশ কম বয়সে মারা যায় মেয়েটা। আর মারা যাওয়ার আগে তার পরনে ছিল তারা যে পোশাকে রাত নারীমূর্তিটিকে দেখেছেন ঠিক সেই পোশাক। মেয়েটার কাঠামো আর আকার-আকৃতিরও রাতে দেখা দেওয়া রহস্যময় নারীর সঙ্গে মিল আছে। ক্রাউলি ছায়ামূর্তিটিকে দেখার আগে বাড়িওয়ালীর মেয়ের ভূত সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। কাজেই এটা তার উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা কিংবা দৃষ্টিবিভ্রম, এমনটা হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
৫. পিছনে কে?
পিছনে কে?
এই অভিজ্ঞতাটি ভারতীয় তরুণ হরিহরের। বছর কয়েক আগের ঘটনা। বেড়াতে গিয়েছিলেন কর্নাটকের ছোট্ট শহর কামতাতে, খালার বাসায়। তাঁর বাসাটা গজনির কাছে। এখানে বেশ কিছু ছোট্ট লেকের দেখা পাওয়া যায়। প্রথমবার এই এলাকায় বেড়াতে আসায় জায়গাটাতে ঘুরে আসার ব্যাপারে একটা কৌতূহল ছিল তাঁর। বাকি অংশটা বরং হরিহরের জবানীতেই শোনা যাক।
খালা বেশ ধার্মিক মহিলা। কেন যেন ওই লেকগুলোর দিকে যাওয়ার জন্য পই পই করে বারণ করে দিলেন। কারণ জানতে চাইলে শুধু বললেন জায়গাটা ভাল না। তারপর এখানেই এই বিষয়টার ইতি টানলেন।
রাত সাড়ে নটার দিকে খাওয়া-দাওয়া শেষে হাঁটতে বের হলাম। এখনো মনে আছে রাতটার কথা। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। লেকের জলে তার রূপালি ছটা পড়ছে। আর এতে গজনিকে আরো মোহনীয় মনে হচ্ছে, ঠাণ্ডা বাতাস আমাকে যেন জোর করে ওদিকেই নিয়ে যেতে লাগল। গজনির রাস্তার আলোগুলোও এখান থেকে মোহনীয় মনে হচ্ছে।
গজনির দিকে মোটামুটি আধমাইলটাক এগিয়েছি। এমন সময় কেমন একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি শুরু হলো। শীতল বাতাস শরীরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। শান্ত, নিশূপ উপত্যকা দিয়ে এগুনোর সময় হঠাৎ পিছনে বেশ কয়েক জন মানুষের পায়ের আওয়াজ পেলাম। মনে হলো যেন আমার পিছনে একটা দল আসছে, আর তাদের হাসি, কথা-বার্তার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। তবে সব কিছুই কেমন অস্পষ্ট। হঠাৎ কী মনে করে চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরলাম। বিস্মিত হয়ে আবিষ্কার করলাম সেখানে একজন অশীতিপর বৃদ্ধা দাড়িয়ে আছে, আর কেউ নেই।
মনে হলো জ্ঞান হারাব। এতজন লোকের পায়ের আওয়াজ, কণ্ঠ পেলাম। আর ভোজবাজিতে সব অদৃশ্য হয়ে হাজির হলো এক বুড়ি। এলোমেলো, লম্বা চুল তার, হাতে লাঠি; সামনের দাঁত নেই। আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু একটা হাসি দিল। কেন যেন আঁতকে উঠে চেঁচিয়ে উঠলাম। মনে হলো বিদ্যুতের একটা প্রবাহ বয়ে গেছে শরীরের ভিতর দিয়ে। নড়তে পারছি না, পা জোড়া কাঁপতে শুরু করেছে। এভাবে মনে হয় দশ-পনেরো সেকেণ্ড থাকলাম। তারপরই বড় রাস্তার দিকে দৌড়তে শুরু করলাম। যখন সেখানে পৌঁছে ফিরে তাকালাম, গজনির দিকে কাউকে দেখতে পেলাম না।
বাসায় ফিরে খালাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। গজনিতে যাওয়ার জন্য ইচ্ছামত বকাবাদ্য করলেন খালা আর খালাতো বোন। তারপর ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলো। রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। মনে হলো যেন কে আঠা দিয়ে শরীরটা বিছানার সঙ্গে আটকে দিয়েছে। মাথা এপাশ-ওপাশ করতে এমনকী মুখ দিয়ে একটা শব্দও করতে পারলাম না। খুলতে পারলাম না চোখও।
কাঁদার চেষ্টা করলাম। হ্যাঁ, সেটা পারলাম। আর কান্নার শব্দ শুনে আমার খালাতো বোন দৌড়ে এল আর খালাকে ডেকে নিয়ে এল। বিছানায় বসিয়ে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলেন তাঁরা। কিছু না বলে শুধু কাঁদতেই থাকলাম। আমার মাথায়, বুকে আর পায়ে অ্যাপাতিসাল নামের এক ধরনের ভেষজ মলম লাগিয়ে দিলেন তারা। আস্তে আস্তে ভাল লাগতে শুরু করল আমার। তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দু-দিন জ্বর থাকল খুব। তবে দ্রুতই ভাল হয়ে উঠলাম।
৬. রহস্যময় সেই লোকটা
রহস্যময় সেই লোকটা