কিন্তু একটা মেয়ে একই সঙ্গে গাড়ির ভিতরে আর বাইরে থাকে কীভাবে? সম্ভবত এই একই জিনিস শিল্পপতিকে আতংকিত করে তুলেছিল। হয়তো পাশের সিটে আর গাড়ির বাইরে একই নারীকে দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারেননি ভদ্রলোক। আর তাই ব্রেকের বদলে অ্যাক্সিলারেটরে চাপ দিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন। যতদূর জানা যায় রাতের একটা পার্টি শেষে বাড়ি ফিরছিলেন শিল্পপতি।
আগের বছর যে সময় তাহিরা মারা যায় ওই একই সময় মৃত্যু হয় শিল্পপতির। শুধু তাই না দুর্ঘটনার জায়গাও ছিল একই।
পরের বছর একই দিন মারা যান আবদুর রউফ। অবশ্য কোনো কোনো সূত্র দাবী করে জ্বরে নয়, সাগরে ডুবে মরেছেন আবদুর রউফ। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি কখনোই।
এর ঠিক এক বছর পরের ঘটনা। জুলাইয়ের ১৭ কি ১৮ তারিখ। শুল্ক বিভাগের সঙ্গে জড়িত এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা শিকারে পরিণত হলেন তাহিরার। বাড়ি ফেরার পথে মেয়েটির সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। গাড়ি থামাবার ইশারা করে মেয়েটা। তারপর পুলিশ কর্মকর্তাকে বলে একটা দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে সে। তাকে যেন তিনি দয়া করে বাড়ি পৌঁছে দেন।
মেয়েটার গলায় তাজা ক্ষতচিহ্ন দেখে আর্দ্র হয়ে ওঠে ওই কর্মকর্তার মন। তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে চান। কিন্তু মেয়েটি বলে বাড়িতেই যাবে সে। কি আর করা তাকে তার বাংলোর সামনে নামিয়ে দেন। কিন্তু তার চোখের সামনে বাড়িতে ঢোকার আগেই অদৃশ্য হয়ে যায় মেয়েটি। এর মাত্র দু-দিন বাদে আফিম কারবারীদের একটা দলের গোপন আস্তানায় হামলা চালানোর সময় গুলিতে মারা পড়েন পুলিশ কর্মকর্তা।
তারপর থেকে অনেকগুলো বছর রাস্তার ধারে নীল শাড়ি পরা, কোনো মেয়েকে দেখলে আর গাড়ি দাঁড় করাতেন না চালকেরা। বিশেষ ক্লরে জুলাই মাসের ১৭ কিংবা ১৮ তারিখ আরো বেশি সতর্ক থাকতেন চালকেরা। তবে তাহিরার এই কাহিনি ছড়িয়ে আছে পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায়। শহর ভেদে এর মধ্যে কিছু পার্থক্য চোখে পড়ে। তবে পুরো সত্যি জানা যায়নি কখনোই। তাই তাহিরা রয়ে গেছে এক রহস্যই।
৩. জিপানি ভ্রমণ
জিপানি ভ্রমণ
এই অভিজ্ঞতাটি বর্ণনা করেছেন ফিলিপাইনের ম্যাথু। চলুন তাঁর মুখ থেকেই শুনি।
এটি আমার এক বান্ধবী আর তার জিপানি ভ্রমণের সত্যি ঘটনা। আপনারা যারা জিপানি চেনেন না তাদের বলছি জিপানি হল ফিলিপাইনের সাধারণ মানুষ পরিবহনের জনপ্রিয় একটা যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহার করা আমেরিকান পরিত্যক্ত সামরিক জীপগুলোকে ঠিকঠাক করে জিপানিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এ ধরনের গাড়ি জাকাল সাজসজ্জা আর প্রচুর লোক উঠানোর জন্য বিখ্যাত।
আমার বান্ধবীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্টের কাজ শেষে বাসার পথে রওয়ানা হতে হতে বেশ দেরি হয়ে যায় এদিন। কিছুদিন আগে থেকে ইউনিভার্সিটি অভ দ্য ফিলিপিন্সের ডিলিমান ক্যাম্পাসে থাকতে শুরু করেছে সে। আর এত রাতে ট্যাক্সির চেয়ে জিপানি ব্যবহার করাই নিরাপদ মনে হয় তার কাছে। যখন জিপানিতে উঠল তখন বেশ রাত। একটু পরেই অস্বস্তি শুরু হলো তার। চালক গাড়ির রিয়ার ভিউ মিররে তাকে দেখছে একটু পর পরই। শুধু তাই না মাঝে মাঝে পিছন ফিরেও তাকাচ্ছে। কিন্তু এত রাতে গাড়িতে একা থাকায় কিছু করাও সম্ভব হলো না তার পক্ষে। এখন প্রতিটি জিপানির নির্দিষ্ট রুটে আছে। রাস্তা বদলে অন্য পথে কোনো শর্টকাট কোনোভাবেই ব্যবহার করতে পারবে না। কারণ সেক্ষেত্রে পুলিশের রোষানলে পড়ে যেতে পারে। কিন্তু এই চালক যে শুধু তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে তা না। একটু পরপরই রাস্তা বদল করছে সে। চালকের মতিগতি বুঝতে না পেরে চিন্তায় পড়ে গেল আমার বান্ধবী। এদিকে আবার রাস্তার মোটামুটি মাঝপথে চলে এসেছে। এই : অবস্থায় নেমে গিয়ে আরো বিপদে পড়তে পারে। তাই গাড়িতেই বসে রইল। শেষ বাঁকটা ঘোরার পর আবিষ্কার করল চালক আবার মূল পথে ফিরে এসেছে।
বাস স্টেশনে পৌঁছার আগে চালক আমার বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে যদি ভয় পাইয়ে দিয়ে থাকি তবে দুঃখিত। আসলে আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। আর বাসায় ফিরে অবশ্যই পরনের কাপড়গুলো পুড়িয়ে ফেলবে। এবার রীতিমত অবাক হয়ে আমার বান্ধবীটি তার এই অদ্ভুত আচরণের কারণ জানতে চাইল। জিপানির চালক তখন ব্যাখ্যা করল, আমি তোমার দিকে তাকিয়েছিলাম, কারণ গাড়ির পিছনের ভিউ মিররে যখন দেখছিলাম, তোমার শরীরের সঙ্গে মাথা ছিল না। তখনই আমার সন্দেহ হয় এর মধ্যে অশুভ কিছু একটার কারসাজি আছে। তাই গাড়ির রাস্তা বদলে ফেলছিলাম। আশা করেছিলাম এতে ওই এলাকাটায় যে পিশাচটা আছে ওটার আওতার বাইরে চলে যেতে পারব। আর তোমার কাপড় পুড়িয়ে ফেলতে বলছি কারণ আমার মনে হচ্ছে ওটা এখনো তোমার কাপড়ের মধ্যে থেকে যেতে পারে।
আমার বান্ধবী যখন বাড়িতে পৌঁছল তখনও সে আতংকে কাঁপছে। তারপরও এই অবস্থাতেই যত দ্রুত সম্ভব পোশাকগুলো পুড়িয়ে ফেলল। এর কয়েকদিন পরেই সে খবর পেল সেদিনের ঘটনার পরদিনই ওই জিপানি চালক মারা গেছে। হায়! দুর্ভাগা চালক আমার বান্ধবীর জন্য ভয় পেলেও অশুভ জিনিসটার নজর পড়েছিল আসলে তার ওপর।
৪. সেতুর ধারের নারী
সেতুর ধারের নারী