১৯৪৫ সালের পর থেকে এই রাস্তায় অনেক চালকই গাড়ি দুর্ঘটনার জন্য হাত দুটোকে দায়ী করেছেন। হাত দুটো কখনো কখনো, গাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ে স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে। এসময় গুডলোকে দেখে মনে হতে পারে কোনো আনাড়ী গাড়ি চালানো শেখার চেষ্টা করছে। আর গাড়ির ভিতরে ভুতুড়ে হাত দেখে কোন চালকেরই বা মাথা ঠিক থাকে! বেশিরভাগ সময়ই গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারান তাঁরা। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জেকব পিটার এক সাংবাদিককে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, মসৃণভাবে আমার গাড়িটা চলছিল। পোস্টব্রিজের কাছে দুটি ছোট সেতু পেরোনোর পর আশ্চর্য একটা অনুভূতি হয় আমার। তারপরই দেখলাম দুটো হাত আমার হাতের ওপর চেপে বসেছে। ভয় পেয়ে গেলাম। এগুলো কার হাত কিছুই বুঝতে পারলাম না, কারণ হাত ছাড়া শরীরের আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। উল্টো দিক থেকে আসা একটা গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে এক পাশে নিয়ে গেলাম গাড়িটা। হাতদুটো তখন আরো দ্রুত উল্টো দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করল ওটাকে। বড় কোনো দুর্ঘটনা এড়ানো গেলেও জোরে রাস্তার ওপর লাফিয়ে পড়ল গাড়িটা।
একের পর এক দুর্ঘটনায় বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ বিকল্প রাস্তা তৈরি করল। কিন্তু মনে হয় গোটা এলাকাটাই শাসন করছে অশুভ হাত জোড়া। কারণ নতুন বিকল্প রাস্তাতেও সে ভড়কে দিতে লাগল চালকদের।
১৯৫৫ সালের ঘটনা। নব বিবাহিত এক দম্পতি গাড়ি নিয়ে এই রাস্তায় যাচ্ছিলেন। হঠাৎ প্রচণ্ড কুয়াশায় ঢেকে গেল চারপাশ। কুয়াশার কারণে একটু দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছে না, তারপর আবার সময়টা শীতকাল। রাস্তার পাশেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা। সঙ্গে আনা খাবার খেয়ে গাড়ির পিছনের অংশে শুয়ে পড়লেন দুজনে। রাতে মেয়েটার ঘুম ভেঙে গেল। তার মনে হলো কেউ একজন গাড়ির দরজার কাঁচে টোকা দিচ্ছে। প্রথমে ভাবলেন এটা নিশ্চয়ই পাড়া বেড়ানো কুকুরের কাজ। শীতের থেকে বাঁচার জন্য ভিতরে আশ্রয় পাবার আশায় নখ দিয়ে দরজা আঁচড়াচ্ছে। স্বামীর দিকের দরজার কাচে চোখ পড়তেই পাথর হয়ে গেলেন। দুটো ভয়ঙ্কর হাত চলাফেরা করছে কাচের ওপর। চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করতে শুরু করলেন। তারপরই অদৃশ্য হয়ে গেল হাত জোড়া।
এই অশুভ হাত জোড়া নিয়ে প্রচুর গল্প ছড়িয়ে আছে। এর কোনোটা সত্যি, কোনোটা আবার লোকের বানানো। তবে ১৯৬০ সালের একটা ঘটনা ভয়াল হাত দুটোর ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে ঘোরতর অবিশ্বাসীকেও বাধ্য করল।
রাস্তার অভিশপ্ত অংশটাতে নিজের গাড়ির ধবংস্তুপের নীচে পাওয়া গেল এক চালকের মৃতদেহ। গাড়িটা উল্টে গেছে। কিন্তু রাস্তায় অন্য কোনো গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষের চিহ্ন নেই। গাড়ির এঞ্জিনও চমৎকার অবস্থায় ছিল। এমনকী অন্য কোনো ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটিরও আভাস মিলল না। ড্রাইভিং লাইসেন্স নিশ্চিত করছে ভদ্রলোক পাকা চালক। কারণ বারো বছর ধরে তিনি গাড়ি চালাচ্ছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মাতাল ছিলেন এমন কোনো তথ্যও পাওয়া গেল না।
পুলিশ আবিষ্কার করে মৃত ব্যক্তির হাত জোরে স্টিয়ারিংয়ের ওপর চেপে বসে আছে। আঙুল ভেঙে গেলেও স্টিয়ারিং থেকে হাত শিথিল করেননি ভদ্রলোক। ডিক কেলি নামের এই ভদ্রলোকের হাতে বল প্রয়োগের চিহ্নও মিলল। আতংকে বড় বড় হয়ে আছে তার চোখ। গলা নীচের দিকে বেঁকে আছে- যতদূর বোঝা যাচ্ছে ভীতিকর কোনো কিছুর দিকে কেন্দ্রীভূত ছিল তাঁর সমস্ত মনোযোগ।
২. তাহিরা-রহস্য
তাহিরা-রহস্য
আবদুর রউফ গাড়ির একটা গ্যারেজের মেকানিক। কাজ শেষ করে সেদিন যখন বাড়ি ফিরছেন বেশ রাত হয়ে গেছে। এসময়ই দেখলেন এক তরুণী রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে খুব বিপদে পড়েছে। রউফ ভাবলেন এত রাতে বাড়ি ফেরার মত কিছু না পেয়ে আতংকিত হয়ে পড়েছে মেয়েটা।
স্কুটারের পিছনে মেয়েটাকে নিয়ে নিলেন। একট রাস্তার সামনে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল মেয়েটি। তারপরই অবিশ্বাস্য ঘটনাটা ঘটল। কয়েক কদম এগিয়েই ভোজবাজির মত তার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল সে। পরদিন সকালে বন্ধুবান্ধব আর তাঁর সহকর্মীদের ঘটনাটি খুলে বললেন রউফ। তবে কেউ এটাতে কান দিল না। ঠিক চারদিন পর, ১৯৭৯ সালের ২২ জুলাই প্রচণ্ড জ্বরে মারা গেলেন আবদুর রউফ।
ঘটনার উৎস খুঁজতে দু-বছর পিছনে যেতে হবে আমাদের। বন্ধুর বাড়ি থেকে বাড়ি ফিরছিল তাহিরা নামের একটি মেয়ে। গাড়ির চালকের আসনে ছিল তার ভাই। হঠাৎ গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারাল। তারপর গিয়ে ধাক্কা খেল একটা বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে। এতে উল্টে পড়ল গাড়িটা। ঘটনাস্থলেই মারা গেল তাহিরা।
যতদূর জানা যায় দুশ্চরিত্র এক শিল্পপতি ছিলেন ঘটনার পিছনে। এক মেকানিক আর পুলিশ কর্মকর্তার সাহায্যে দুর্ঘটনার নাটকটি সাজান তিনি। তবে পরিকল্পনা ছিল দুর্ঘটনাটায় চালকের, আসনে বসা ভাইটি মারাত্মক আহত হবে। তখন তাহিরাকে অপহরণ করা সহজ হবে। কিন্তু মারা গল উল্টো তাহিরাই।
এর ঠিক এক বছর পর ওই শিল্পপতিও মারা গেলেন দুর্ঘটনায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন নীল রঙের শাড়ি পরা এক নারীকে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে তারা গাড়িটা যখন বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আঘাত হানে তখন। অপর দিকে পুলিশের একটা টহল দল দাবি করেছে গাড়ির ভিতরে নীল শাড়ি পরা একজন নারীকে দেখেছেন তাঁরা।