- বইয়ের নামঃ সব ভুতুড়ে
- লেখকের নামঃ ইশতিয়াক হাসান
- সিরিজঃ সেবা হরর সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী বই
- বিভাগসমূহঃ ভূতের গল্প
সব ভুতুড়ে
ভূমিকা
হবিগঞ্জের দেবনগরে নানাবাড়িতে ঢোকার মুখেই পাশাপাশি দুটো গাছ-একটা তেঁতুল আর একটা বট। রাতের বেলা গাছগুলোর নীচ দিয়ে কখনও একা যাওয়ার সাহস হতো না। অনেকেই এখানে অপ্রাকৃত কিছুর উপস্থিতি টের পেয়েছেন। কেউ রহস্যময় ছায়ামূর্তি দেখেছেন, কেউ শুনেছেন চিৎকার। গ্রাম বা মফস্বল তো বটেই, খোদ ঢাকা শহরেও ভৌতিক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন অনেকে। আমার নিজেরও সেগুনবাগিচার এক পুরানো বাড়িতে এমন এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ওই বাড়িরই একজনের সঙ্গেই বসে আছি তিন তলায়, হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া নানান ধরনের শব্দ হতে লাগল পাশের কামরাগুলো থেকে। মনে হচ্ছে যেন কেউ জোরে জোরে জানালা, দরজা আটকাচ্ছে, খুলছে। অথচ আমরা দুজন ছাড়া ওখানে আর কেউ ছিল না। বাতাসও ছিল না একরত্তি।
পৃথিবীর এমন কোনো জায়গা সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে এ ধরনের ভৌতিক, অপ্রাকৃত ঘটনার মুখে পড়েননি মানুষ। অনেকে সেগুলোকে যুক্তি দিয়ে বিচার করার চেষ্টা করেন, কেউ আবার মনে করেন স্বাভাবিকের বাইরে অন্য কোনো শক্তি এসব ঘটনার জন্য দায়ী। ভূত-প্রেত আছে, না নেই-এই তর্কে যাব না। তবে পৃথিবীতে যে ব্যাখ্যার অতীত অনেক ঘটনাই ঘটে তা অস্বীকার করতে পারবেন না ঘোর যুক্তিবাদীও। এই বইটিতে হাজির করেছি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বেশ কিছু ভৌতিক, অতিপ্রাকৃত ঘটনা এগুলোর কোনো কোনোটা রীতিমত শরীরের রোম খাড়া করে দেবে, কোনোটা আবার করবে বিস্মিত। এসব ঘটনার অনেকগুলোই এমন মানুষদের মুখ থেকে এসেছে যারা বানিয়ে গালগপ্পো করার লোক না।
আমাদের দেশে ভূত, হরর বা অতিপ্রাকৃত কাহিনি নিয়ে এখন প্রচুর বই লেখা হচ্ছে। বেশিরভাগই গল্প, উপন্যাস। অবশ্য দু’একজন নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়েও বই লিখেছেন। তবে আমার জানা মতে এক মলাটের মধ্যে এতগুলো সত্যি ঘটনা নিয়ে বই এই প্রথম। পাঠকদের সুবিধার জন্য বইটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছি। প্রচুর বিদেশি বই, ম্যাগাজিন ঘেঁটে তৈরি করা হয়েছে এই বই। সব কষ্ট সার্থক হবে যদি পাঠকদের এটা ভাল লাগে, আরও পরিষ্কারভাবে বললে তাঁদের শরীরে শিরশিরে একটা অনুভূতি এনে দিতে পারে। এ ধরনের প্রচুর সত্য কাহিনি আমাদের সংগ্রহে আছে। তবে সেগুলো আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নির্ভর করছে আপনারা কীভাবে বইটি নিচ্ছেন তার উপর। আর মোটামুটি যাচাই-বাছাই করে কাহিনিগুলো দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে এর অনেক কাহিনিই এক-দেড়শো বছর কিংবা তারও আগের। এত বছরে কিছুটা এদিক-সেদিক হতেই পারে। তা ছাড়া কোনও কোনও কাহিনিতে লোক-কাহিনির ছোঁয়া লাগা কিংবা একটু রং চড়াটা অস্বাভাবিক নয়।
শেষ করার আগে, নতুন ধরনের একটি বই লেখায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য শাহনূর ভাইকে ( কাজী শাহনূর হোসেন) ধন্যবাদ।
হানাবাড়ি
যত অপ্রাকৃত ঘটনার কথা শোনা যায় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভবত ভুতুড়ে বাড়ির কাহিনি। এমন অনেক বাড়ি থেকে শেষমেশ পাততাড়ি পর্যন্ত গুটাতে বাধ্য হয়েছে অনেক বাসিন্দা। ভুতুড়ে বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাম কামিয়েছে সম্ভবত অ্যামিটিভিলের বাড়ি। অ্যামিটিভিলের আতংক’ নামে সেবা প্রকাশনী থেকে একটি বইও বের হয়েছে। ‘হানাবাড়ি’ শিরোনামে রইল তেমন কিছু বাড়িরই অভিজ্ঞতা।
১. জর্জিয়ার আতংক
জর্জিয়ার আতংক
সাভানাহ নদীর ধারের ওকভিলের বাড়িটায় থাকতেন ওয়ালসিংহাম নামের এক কৃষক। ওটা পড়েছে আমেরিকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে। ওয়ালসিংহাম মোটেই কুসংস্কারে বিশ্বাস করতেন না। কাজেই শুরুতে বাড়িকে ঘিরে যেসব ছোটখাট ঘটনা ঘটতে লাগল, ওগুলোকে বদ প্রতিবেশিদের সাজানো নাটক বলে ধরে নিলেন। তবে যতই দিন গড়াতে লাগল অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন। পরিবারের লোকেরা রাতে বিছানায় যেতে না যেতেই অত্যাচার বাড়ে। ঘরের দরজায় করাঘাত হয়, বেল বাজে আর বিনা কারণে চেয়ার উল্টে পড়তে থাকে। বাড়িতে একটা কুকুর আছে। বুদ্ধিমান ম্যাস্টিফ কুকুরটাকে সবাই ডাকে ডন সিজার নামে। এক দিন দেখা গেল হল ঘরে ঢোকার মুখের করিডোরে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড চেঁচাচ্ছে সে, রাগে শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেছে, আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দেয়ালের দিকে। তারপরই লাফ দিয়ে সামনে এগুল। কিন্তু ভয়ঙ্কর একটা চিৎকার করে মাটিতে পড়ল ওটা। মনে হলো যেন নিষ্ঠুর এক জোড়া হাত তাকে ধরে আছাড় মেরেছে। পরীক্ষা করে দেখা গেল কুকুরটার ঘাড় ভেঙে গেছে।
এদিকে বাড়ির বিড়ালটার সঙ্গে যেন অশরীরীটার একটা চমৎকার বোঝাপড়া হয়ে গেছে। ঘর ঘর শব্দে আনন্দ প্রকাশ করে সদরদরজা দিয়ে ঢোকে সে, মনে হয় যেন কোনো আগন্তুককে অভ্যর্থনা জানিয়ে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে, যে তার পিঠে আদর করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তারপর দেখা যায় লাফিয়ে একটা চেয়ারে উঠে, আনন্দে তাতে শরীর ঘষছে।
যতই দিন গড়াতে লাগল রাতের বেলা ততই বেপরোয়া হয়ে উঠতে লাগল অশরীরীটা। ওটার যন্ত্রণায় ঘুমানো অসম্ভব হয়ে উঠল বাড়ির বাসিন্দাদের পক্ষে। চেঁচামেচি, গোঙানি, উৎকট হাসি, বীভৎস চিৎকার এমনই নানা শব্দে অস্থির হয়ে উঠলেন তারা। কখনো শব্দ আসে বাড়ির নীচ থেকে আবার কখনো শোনা যায় ছাদ থেকে। এক রাতে বাড়ির ছোট্ট মেয়ে এমেলিয়া টয়লেটে গিয়েছে। হঠাৎ মনে হলো আলতোভাবে একটা হাত রেখেছে কেউ তার কাঁধে। হাতটা মা কিংবা বড় বোনের মনে করে সামনে আয়নার দিকে তাকাল। কিন্তু সেখানে কারো প্রতিবিম্ব পড়ল না সে ছাড়া। কিন্তু চোখের কোন দিয়ে পরিষ্কার দেখতে পেল প্রশস্ত, পুরুষালি একটা হাত তার কাঁধের ওপর বিশ্রাম নিচ্ছে। মেয়েটির চিৎকারে বাড়ির বাকি সবাই ছুটে এল। কিন্তু তারা যখন এল হাতের কোনো চিহ্ন নেই।