.
জ্ঞান ফিরে পেয়ে অমল দেখল সে বিছানায় শুয়ে আছে। পাশে চেয়ারে বসা স্যুট-কোট পরা মৃণাল বাবু। বাবু বলল, ‘অমল বাবু, আমি আর মন্দাকিনী আজই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছি। আর হয়তো কখনও দেখা হবে না। এই ছোট ব্যাগটা রাখেন। এর ভেতর নগদ আট লাখ টাকা আছে। সেই সঙ্গে একটা এনভেলপও পাবেন। আপনার জীবন বীমা পলিসির কাগজ আছে ওটাতে। সাবধানের মার নেই ভেবে আপনার মাথার তালুতে আমার শরীরের রক্ত দিয়ে স্বস্তিকা এঁকে দিয়েছি। এই রক্তের সঙ্গে মাখানো হয়েছে আসামের গোহাটির যে মন্দিরে ছিন্ন-মস্তার মূর্তি আছে, সেই প্রতিমার পায়ের তলার মাটি। যে তিথিতে পুজো দিয়েছি, তা আজ রাত বারোটায় শেষ হবে। দৈব-শক্তির প্রভাব থাকবে সেই সময় পর্যন্ত। এর ভেতর তালুর এই চিহ্নটা মোছা যাবে না। যদি মুছে ফেলেন, তা হলে পুরো আয়ুই হারিয়ে ফেলতে পারেন। সুতরাং খুব সাবধান। একটা বেস বল ক্যাপ দিচ্ছি। মাথায় পরেন। আশা করি কোনও সমস্যা হবে না। কাগজপত্র এবং লাগেজের ফর্মালিটি সারতে মন্দাকিনী আগেই এয়ারপোর্টে চলে গেছে। আমি আপনার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় রয়ে গেছি। গুড লাক অ্যাণ্ড থ্যাঙ্ক ইউ ফর এভরিথিং।’
.
মৃণাল বাবুর বাসা থেকে বেরিয়ে স্কুটার নিয়ে মেসে ফিরল অমল। রুমে ব্যাগ-ছ্যাগ রেখে শুয়ে থাকল কিছুক্ষণ। সময় কাটছে না কিছুতেই। ভাবল পীর ইয়ামেনী মাজারের কাছে পার্কটায় যাওয়া যায়। রেখার সঙ্গে দেখা হলে, ভাল সময় কাটবে। দশটার দিকে পার্কে এসে দেখল পার্ক একেবারে ফাঁকা। আগের মতই গুলিস্তান মোড়ে ছোটাছুটি করছে লোকেরা। প্রতিদিন একই দৃশ্য। অনন্তকাল ধরে চলছে। বেঞ্চের ওপর বসে এসব দেখতে দেখতে ঘুমে জড়িয়ে এল তার চোখ।
অমলের ঘুম ভাঙল খিকখিক হাসি আর চটর-পটর আওয়াজ শুনে। চোখ মেলে তাকাতেই আকাশের গায়ে কামালের দাঁত বের করা মুখ দেখতে পেল অমল। বেঞ্চের পেছনে দাঁড়িয়ে কামাল তার মাথা মালিশ করে দিচ্ছে। কামাল বলল, ‘স্যর, মাথা টাক করছেন ক্যান? আবার টুপিও পিনছেন! মাথার থন টুপি খুইল্যা পড়ছে মাটিত। আমি না আইলে চুরে নিতো গিয়া। মাথা ভর্তি ধুলা-বালি আর লাল রঙ। বিয়া- বাইত্যে গেছিলেন মনে লয়। ফাজিল পুলাপান আর মাইয়ালোকের কাণ্ড। সব সাফ কইরা দিছি। সহজে উঠবার চায় না। ‘নভরত্ন’ তেল মাখান লাগছে। মাথাও বানাইছি। আপনি দেহি জন্মের ঘুম ঘুমাইছেন। এত মালিশ দিতাছি, হের পরেও ঘুম ভাঙ্গে না!’
অমল দেখল কামালের মুখটা ঝাপসা হতে-হতে একেবারে সাদা হয়ে শূন্যে মিলিয়ে গেল। ঠিক তার পরেই ঘনিয়ে এল আঁধার, দপ্ করে নিভে গেল সব আলো!
মুহম্মদ আলমগীর তৈমূর
***