‘এই অধ্যাপকের নাম সিরাস ইসকারিয়াত। কম্পারেটিভ রিলিজিয়ান ডিসিপ্লিনের ফ্যাকাল্টি। ভদ্রলোকের ভক্ত হয়ে গেলাম। তাঁরই পরামর্শে বদলালাম ডিসিপ্লিন। তিন বছর পড়ার পর শুরু হলো গবেষণা। বিষয়: ক্লাসিক্যাল যুগের ধর্ম। ল্যাটিন এবং পুরনো গ্রীক ভাষা আগেই শিখতে হয়েছে। অধ্যাপক বললেন অ্যারামিক ভাষাটাও রপ্ত করতে। দু’হাজার বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এই ভাষা দারুণ কঠিন। এ হলো যিশু খ্রিস্ট যে ভাষায় কথা বলতেন, সেই ভাষা। অধ্যাপককে বললাম, অ্যারামিক শেখা আমাকে দিয়ে হবে না। ভদ্রলোক তখন আমাকে একটা শর্ত দিলেন। বললেন, ওই ভাষা না শিখেও গবেষণা যাতে চালাতে পারি সেইটে তিনি দেখবেন, তবে তার বিনিময়ে তাঁকে বিশেষ কাজে সহায়তা করতে হবে। ভদ্রলোক ব্ল্যাক আর্টের চর্চা করতেন। হাতে-কলমে কৃষ্ণ-জাদু চর্চার এই হলো শুরু। অসম্ভব জ্ঞানী সিরাস, সেই সঙ্গে ভীষণ ধূর্ত। আমার উদ্দেশ্য প্রথম থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। প্রয়োজন ছিল আমাকে শুধু বাজিয়ে নেয়ার। তার জন্যে তিন বছর যথেষ্ট সময়। নিউ অর্লিন্সে ভুডুর চর্চা ব্যাপক। দু’ শ’ বছর আগে মেরি লেভো নামে এক আধা-ফরাসি আধা-আমেরিকান মহিলা ভুডুর কর্ণধার হয়ে দাঁড়ায়। এ এত বিখ্যাত ছিল যে, একে আজও ভুডু কুইন বলা হয়। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম প্রফেসর আমাকে এইসব কর্মকাণ্ডের ভেতর জড়াবেন। পরে বুঝতে পারি, ভুডু অনেক নিচু স্তরের আফ্রিকান ব্ল্যাক আর্ট। অশিক্ষিত, আধা-শিক্ষিত লোকজন ভুডু নিয়ে মাতামাতি করে। বাণ মারা এবং পছন্দের রমণী হাসিল করাতেই ভুডু সীমাবদ্ধ। এর থেকে বেশি কিছু ভুডু থেকে পাওয়া সম্ভব না।
‘সিরাস যেটা করতেন সেটা হলো হাজার বছর আগে হারিয়ে যাওয়া আসল ব্ল্যাক আর্টের অনুশীলন। তিনি নৈবেদ্য দিতেন দেবী হেকাটি এবং পিশাচ লিওনার্দ-কে। বহুকাল আগে তুরস্কের দক্ষিণে লিজিয়া নামে এক জায়গা ছিল। হাজারে হাজারে খোজা বা নপুংসক ক্রীতদাস বাস করত ওখানে। নানান জায়গা থেকে সক্ষম যুবকদের ধরে লিজিয়ায় এনে তাদেরকে নৃশংসভাবে খোজা করে দেয়া হত। বাধ্য করা হত চিরকালের জন্যে নপুংসকের জীবন বেছে নিতে। এইসব যুবকের কান্না আর অভিশাপে ভারী হয়ে থাকত লিজিয়ার আকাশ। এই খোজারাই প্রথম দেবী হেকাটির মন্দির তৈরি করে। হেকাটি জাদুমন্ত্র আর ডাকিনী বিদ্যার একচ্ছত্র মালকিন। এর জন্মই হয়েছে কৃষ্ণ-জাদুর চর্চা যারা করে, তাদের সাহায্য করার জন্যে। লিজিয়ার খোজারা বিশ্বাস করত, হেকাটিকে তুষ্ট করতে পারলে যৌন ক্ষমতা ফিরে পাওয়া যাবে। না-পাওয়া গেলেও দেবী অন্যভাবে যৌন-সম্ভোগের আনন্দ পাইয়ে দেবে। এর আরাধনার শুরুটা খোজারা করলেও পরে সক্ষম-অক্ষম, যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই পুজো দিতে শুরু করে। উদ্দেশ্য দীর্ঘ জীবন ও অঢেল সম্পদ লাভ। এর তিন শত বছর পরে হেকাটির মন্দির ছড়িয়ে পড়ে মেডিটেরিনিয়ানের দক্ষিণে সবগুলো দেশে, পুবে সিরিয়া থেকে পশ্চিমে কার্থেজ অর্থাৎ লিবিয়া পর্যন্ত। এবং এই কাজটার কৃতিত্ব দিতে হবে ব্যাকট্রিয়া বা সেন্ট্রাল এশিয়ার সম্রাট আগাথোক্লিসকে। আগা নামটা এর কাছ থেকেই এসেছে। সে আর এক কাহিনি। অন্যদিন বলব।
‘তবে সিরাস এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি লিওনার্দকেও খুশি করার চেষ্টা করতেন। লিওনার্দের পুজো বেশিরভাগই জার্মানিতে হয়। এ. পিশাচ ওখানকার ডাইনীদের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। যত উইচক্র্যাফ্ট-সব এ-ই শিক্ষা দেয়। এর আরাধনা হয় লোকালয় থেকে দূরে সিডার আর ওক বনের ভেতর ঘাসে ঢাকা বৃত্তাকার খালি জায়গা বা ক্লেয়ারিঙে মোষের শিঙের মত বাঁকা চাঁদের রাতে। লিওনার্দের দেহ মানুষের, মুখ-মাথা তিন শিংঅলা ছাগলের। লিওনার্দের পেছনদিকে গুহ্যদ্বারে মানুষের মুখের মত মুখ আছে। পূজারীদের ডাকে সাড়া দিয়ে বনের ভেতর আবির্ভূত হলে লিওনার্দ প্রথমে পেছন ফিরে দাঁড়ায়। ডাইনীদের তখন তার নিতম্বের ভেতর চুমু দিয়ে তাকে তুষ্ট করার কর্মকাণ্ড শুরু করতে হয়। ওয়ারউল্ফ কিংবা ভ্যাম্পায়ার হতে হলেও এর আশীর্বাদ দরকার। প্রিন্স ভ্লাদ বা ড্রাকুলাও এর পুজো করত। লিওনার্দের পুজোর একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে অবাধ যৌন মিলন। সব ডাইনীকেই এর ডাকে সাড়া দিতে হয়। লিওনার্দ ভোগ করার পরেই কেবল তার পুরুষ অনুসারীরা পুজোর জায়গায় ডাইনীদের সঙ্গে মিলিত হতে পারে। তবে নারী সম্ভোগের জন্যে লিওনার্দকে মানুষের দেহ ধারণ করতে হয়। এই দেহ হতে হয় এমন একজন যুবকের, যে আগে কখনও নারী সঙ্গম করেনি। লিওনার্দের অনুসারীরা এ ধরনের একজন যুবককে ধরে এনে প্রথমে তাকে ধুতুরার বিষ খাওয়ায়। তারপর লিওনার্দের মূর্তির সামনে ওই তরুণকে নী-ডাউনের ভঙ্গিতে তার হাঁটুর ওপর দাঁড় করায়। এরপর পেছন থেকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাস রোধ করে মেরে ফেলে। লিওনার্দ তখন এই মৃতের শরীরে ঢোকে। মৃত যুবকের দেহে বীর্যের শেষ বিন্দু নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত লিওনার্দ একের পর এক নারী সম্ভোগ করতেই থাকে। এই যৌন মিলনের ফলে কোনও কোনও নারী গর্ভধারণও করে। কিন্তু প্রসব করার পর দেখা যায় সন্তান মৃত। তবে ডাকিনী বিদ্যার চর্চা যারা করে, তাদের কাছে এই মৃত শিশুর লাশ এক অমূল্য জিনিস।