শওকত আবার বলল, ‘রুখ। অ্যাই, রুখ।
রুখসানা চোখ মেলে তাকাল। আস্তে করে বলল, ‘কী হয়েছে?’
‘ভয় করছে, রুখ। সেই স্বপ্নটা আবার দেখেছি। শরীর খারাপ লাগছে।’
‘কী যে পাগলের মত ভয় পাও। স্বপ্ন তো স্বপ্নই,’ সান্ত্বনার ভঙ্গিতে বলল সে।
‘আনিস, আনিস আবার এসেছিল।’
‘পানি খাবে?’
‘হ্যাঁ, পানি খাব। পানি।
রুখসানা পানির গ্লাস এগিয়ে দিল।
শওকত এক চুমুক পানি খেয়ে মুখ বিকৃত করল। কাঁপা গলায় বলল, ‘পানি তিতা লাগছে। বমি আসছে।’
রুখসানা কিছুটা বিরক্ত হলো। বেশ কিছুদিন ধরে শওকত এরকম ঝামেলা করছে। লাইট জ্বালল রুখসানা। আলোতেও শরীরের স্বল্প কাপড় নিয়ে বিব্রত হলো না সে।
‘তোমাকে নিয়ে কী যে করি!’ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল রুখসানা। ‘এত কীসের ভয় তোমার?’
‘স্বপ্নে আমি অনেক সাহসী একজন মানুষ। কিন্তু স্বপ্ন ভাঙতেই সব এলোমেলো হয়ে যায়। আজ ঘুমের মাঝে আমি আবার তোমাকে এবং আনিসকে মেরে ফেলেছি।’
‘ওহ। ভাল করেছ। কে জানে হয়তো তোমার হাতেই আমাদের মৃত্যু আছে। হা-হা,’ খিলখিল করে হেসে উঠল রুখসানা।
‘আনিস ভাল আছে তো?’
‘গতকালই না আমাদের বাসায় এল আনিস ভাই।’
‘তবু চিন্তা হচ্ছে। ওর খারাপ কিছু হয়নি তো? স্বপ্নে যা-ই দেখি না কেন, আমি আমার বন্ধুকে অনেক ভালবাসি।’
‘আনিস ভাই মরে গেছে।’ মুখটা বিকৃত করে রুখসানার জবাব।
‘রুখ, দেখো, আমার বুড়ো আঙুলটা কাঁপছে…’
‘শান্ত হও তো।’
‘বিছানার নীচে কেউ আছে কি না একটু দেখবে?’
‘দেখো তুমি বড্ড বাড়াবাড়ি করছ!’
‘স্বপ্নে আনিস খাটের নীচে শুয়ে ছিল। আর একটু পরপর শিস বাজানোর চেষ্টা করছিল। আর একটু পর গাওয়ার চেষ্টা করছিল: Where have all the flowers gone. এরপর…’
‘ওহ, বাদ দাও তো এসব। অসহ্য লাগছে,’ বিরক্তিটা পুরোপুরি প্রকাশ করে বলল রুখসানা। ‘তুমি কি আমাকে আর আনিস ভাইকে সন্দেহ করো?’
‘না, না। কখনওই না। আমি জানি তুমি আমাকে কখনওই কষ্ট দিতে পারো না। তবু কেন যে এসব স্বপ্ন দেখি!’
‘তুমি মানসিকভাবে অসুস্থ একজন মানুষ। তোমার চিকিৎসা প্রয়োজন।’
‘তুমি, প্লিজ খাটের নীচটা একটু দেখবে?’
‘ওহ। প্রতিদিন এক ঝামেলা আর ভাল লাগে না। আচ্ছা দেখছি।’
উবু হয়ে খাটের নীচে উঁকি দিল রুখসানা। এরপর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। একটা আনন্দের ভাব যেন এক নিমিষে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ল। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী যেন স্থির হয়ে গেছে। সত্যিই আনিস খাটের নীচে বসে আছে। চেহারায় জবুথুবু ভাবটা নেই। বরং বড্ড প্রফুল্ল মনে হচ্ছে তাকে। আনিস রুখসানার দিকে না তাকিয়ে গাইতে শুরু করল, ‘How many roads must a man walk down?’
শওকতের চোখ-মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল। সে কাঁপা গলায় বলল, ‘রু-রুখ… রুখসানা খেয়াল করল আবারও শওকতের বুড়ো আঙুলটা কাঁপতে শুরু করেছে। রুখসানা উঠে দাঁড়াল। ওয়ারড্রোব খুলল। শওকতের রিভলভারটা খুঁজছে সে। না, নেই। কোথাও নেই সেটা।
আনিস খাটের নীচ থেকে বলল, ‘রু-রুখ।‘
শওকত খাটের উপর থেকে বলল, ‘রু-রুখ।‘
প্রথমজনের কণ্ঠের মধ্যে সন্তুষ্টির ভাব থাকলেও দ্বিতীয়জনের কণ্ঠে ছিল ভয়। রুখসানা পাগলের মত রিভলভারটা খুঁজতে লাগল। হ্যাঁ, রিভলভারটা অবশেষে পাওয়া গেছে। ওটা হাতে নিয়ে পিছনের দিকে ফিরল সে। খাটের নীচ থেকে বেরিয়ে এল আনিস।
শওকত পাগলের মত কাঁপছে। সে বলল, ‘রুখ, আনিস আমাকে মেরে ফেলবে! আমাকে বাঁচাও!’
আনিস বলল, ‘ওহ, বন্ধু। শান্ত হও। এত অস্থির হলে চলে?’
রুখসানা প্রথমে আনিসের দিকে রিভলভারটা তাক করল। এরপর নাটকীয়ভাবে হাতের অবস্থান পরিবর্তন করল। ‘একদম নড়বে না, সোনা। যে স্বপ্নটা তুমি এতদিন দেখে এসেছ সেটা আজ আমরা সত্যি করব,’ শওকতের দিকে তাকিয়ে ঝনঝনে গলায় বলল রুখসানা।
আনিস রুখসানাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘সত্যি করব, তবে একটু অন্যভাবে। আজ তোমাকে মরতে হবে, বন্ধু।’
আনিস সর্বশক্তি দিয়ে শওকতের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। মুখের উপর বালিশ চেপে রাখল। রুখসানাও ওর সঙ্গে যোগ দিল।
আধ ঘণ্টা পরে বাসার বড় ডিপ ফ্রিজে জায়গা করে নিল শওকতের মৃতদেহ। সে রাতেই আনিসকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে রুখসানা। কাল দেশের বাইরে পালিয়ে যাবে তারা। শওকতের টাকা-পয়সা মোটামুটি সবই ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। নিজের গয়নাগুলোও বিক্রি করেছে রুখসানা। তাই এখন পালিয়ে যেতে পারলেই মুক্তি।
ভোরের দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল আনিসের। প্রচণ্ড ভয় করছে তার। ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন দেখেছে সে। আকুল গলায় সে বলল, ‘রুখ। অ্যাই, রুখ। রুখসানা চোখ মেলে তাকাল। আস্তে করে বলল, ‘কী হয়েছে?’
‘ভয় করছে, রুখ। সেই স্বপ্নটা আবার দেখেছি। শরীর খারাপ লাগছে। ‘কী যে পাগলের মত ভয় পাও। স্বপ্ন তো স্বপ্নই,’ সান্ত্বনার ভঙ্গিতে বলল সে।
ঠিক তখন ওরা টের পেল খাটের নীচে কিছু একটা খুটখুট আওয়াজ করছে। ফ্যাসফেঁসে গলায় কেউ যেন গান গাওয়ারও চেষ্টা করছে।
আঁধার জগতের খুনি
এক
এক শ’ বিশ বছর পর অন্ধকার জগৎ থেকে মুক্তি পেল ফ্যাফ্যাস নামে দুটি প্রাণী, এখন ঘুরে বেড়াবে তাদের একজন মর্ত্যে। অন্ধকার জগতের জীব ওরা। অসম্ভব বুদ্ধিমান, হিংস্র ও ক্ষমতাশালী। পৃথিবীর দিকে রওনা দেয়ার আগে সঙ্গম করেছে নারী এবং পুরুষ ফ্যাফ্যাস দুটি। এর পরেই মারা গেছে পুরুষটি। নারীটি তার পেটে ডিম নিয়ে চলে এসেছে পৃথিবীতে। বাঁচাতে চাইছে তার সন্তানদের। এখন দরকার পোষক দেহ। মানুষের চেয়ে ভাল পোষক দেহ আর একটিও নেই।