আব্বু, আমি খুব সাবধানে সমুদ্রের ঢেউয়ের ভেতর দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেছি বালুবেলায় ছোট শিশুর মতো একজন গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। আমি জানি শিশুর মতো গুটিশুটি হয়ে শুয়ে থাকা মানুষটি তুমি। তুমি যখন ঘুমিয়ে পড়বে তখন আমি সমুদ্রের পানি থেকে উঠে আসব। সমুদ্রের পানিতে থেকে থেকে আমি এখন শুকনো মাটিতে ভালো করে হাঁটতে পারি না, তাল হারিয়ে ফেলি, তারপরও আমি উঠে আসব। আমি শুধু একবার জোছনার আলোতে তোমাকে দেখতে চাই। মাত্র একবার। আমি তোমাকে শুধু একবার তোমাকে স্পর্শ করতে পারলে সারা পৃথিবীটি দিয়ে দিতে পারতাম, কিন্তু আব্বু আমি তোমাকে স্পর্শ করব না। যদি তোমার ঘুম ভেঙ্গে যায়? যদি জেগে উঠে আমাকে দেখে তুমি ভয়ে আতংকে চিৎকার করে উঠ?
তাই আমি তোমাকে স্পর্শ করব না। আমি তোমাকে শুধু একবার দেখব। আমার পাল্টে যাওয়া লাল চোখে তোমাকে দেখব। আব্বু, তুমি আমাকে ক্ষমা করো আব্বু। এই পৃথিবীটাতে এখন আমার জায়গা নেই। আমার জায়গা বিশাল সমুদ্র। আমি তোমাকে কোনোদিন জানাতে পারব না যে বিশাল সমুদ্রে আমি একা নই আব্বু, সেখানে আমার বন্ধু আছে। ডলফিনরা আমার আপনজন, তিমি মাছেরা আমাকে দেখে রাখে। অক্টোপাসেরা আমাকে ভালোবাসে। আব্বু, আমি ছোট একটা মেয়ে, কিন্তু আমি মানুষ তাই আমার তাদের দেখে রাখতে হয়। আমি শত শত তিমি মাছকে বাঁচিয়ে রাখি আব্বু। যদি তোমাকে বলতে পারতাম তাহলে তুমি অবাক হয়ে যেতে, তোমার ছোট মেয়েটা সমুদ্রের নিচে কতো বড় একটা দায়িত্ব নিয়ে থাকে। আমার জন্য তুমি ভাবনা করো না আব্বু, আমি খুব ভালো আছি। শুধু তোমার কথা মনে পড়ে আব্বু। আমি শুধু তোমাকে এক নজর দেখতে চাই।
.
সুমদ্রের পানি থেকে খুব ধীরে ধীরে একটা ছায়ামূর্তি বের হয়ে আসে। খুব সাবধানে পা ফেলে সেটি শামীমের পাশে এসে বসে। মাথা ঘুরিয়ে সেই ছায়ামূর্তি শামীমের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার হাতটি দিয়ে সে শামীমের কপাল স্পর্শ করতে চায়, কিন্তু স্পর্শ করে না। নিঃশব্দে পাশে বসে থাকে।
একটু পরে ছায়ামূর্তিটি উঠে দাঁড়ায়, তারপর নিঃশব্দে পা ফেলে সমুদ্রের পানির দিকে এগিয়ে যায়। নরম বালুতে তার পায়ের ছাপগুলো সমুদ্রের পানি এসে মুছে দিতে থাকে।
সমুদ্রের লোনা পানি। পৃথিবীর সব দুঃখী মানুষের চোখের পানিতে তৈরী হওয়া লোনা পানি।।