পুলিশ অফিসার মাথা তুলে বলল, “আমি সেরিনার সামনে বলতে চাচ্ছিলাম না–কিন্তু সত্যিটা তারও জানা থাকা ভালো। সত্যিটা খুবই কঠিন। যদি তার শরীর থেকে ট্র্যাকিওশনটা বের করা না যায়–আমি মোটামুটি নিশ্চিত এটা বের করা যাবে না–তাহলে সেরিনাকে সিকিউরিটি দেবার মতো শক্তি পৃথিবীতে কারো নেই। সিক্রেট এজেন্সির লোকগুলো আবার আসবে। এবারে আরো সতর্কভাবে আসবে আরো শক্তি নিয়ে আসবে।” পুলিশ অফিসার কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “আমি খুবই দুঃখিত শামীম সাহেব। খুবই দুঃখিত।”
শামীম উঠে দাঁড়াল। বলল, “থ্যাংক ইউ। খোলাখুলি সবকিছু। জানানোর জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
শামীমের সাথে সাথে সেরিনাও তার চাঁদর জড়িয়ে উঠে দাঁড়াল। পুলিশ অফিসার তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “আমি দোয়া করি তুমি যেন। নিরাপদে থাকো।”
সেরিনা পুলিশ অফিসারের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“কী কথা?”
“ঐ বিদেশী লোকটা এখন কোথায় আছে? জেলে?”
“না সেরিনা। সে জেলে নেই। আসলে তাকে এরেস্টও করা হয় নি। এই মুহূর্তে সে নিশ্চয়ই প্লেনে করে তার দেশে ফিরে যাচ্ছে।”
সেরিনা বলল, “ও।”
» ১১-১২. নাকের হাড় ভেঙ্গেছে
১১.
“এজেন্ট।”
“ইয়েস স্যার।”
“তোমার নাকের হাড় কেমন করে ভেঙ্গেছে? সাথে সামনের একটা দাঁত। আমাদের এজেন্সির একজন এজেন্টের এরকম ইনজুরী হবার কথা নয়।”
“স্যার। এটা খুবই দুঃখজনক একটা ঘটনা। আমি লোকাল রিসোর্সের ওপর নির্ভর করেছিলাম তারা ঠিকমত ম্যানেজ করতে পারে নি। একেবারে শেষ মুহূর্তে একটা বিপর্যয় হয়ে গিয়েছিল।”
“কী বিপর্যয়?”
“আমি আমার রিপোর্টে সেটা ডিটেল্স লিখেছি।”
“আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।”
এজেন্ট অস্বস্তির সাথে বলল, “স্কুলের মেয়েরা ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়েছিল।”
“তারা কেমন করে জড়িয়ে পড়ল এজেন্ট?”
“সেটা একটা রহস্যময় ব্যাপার। আমি সেটা এখনো ভালো করে জানি না।”
“তুমি জানো এই গুবলেট প্রজেক্টে তুমি এজেন্সির কতো টাকা নষ্ট করেছ?”
“আই এম সরি স্যার। কিন্তু এটা ছিল একটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি পরের বার এটা হবে না।”
“পরের বার? এই প্রজেক্টের পরের বার আছে?”
“থাকা উচিৎ স্যার। আমি মেয়েটার শরীরে একটা ট্র্যাকিওশান ঢুকিয়ে এসেছি স্যার। সেটা নিয়মিত সিগন্যাল দিচ্ছে, আমরা মেয়েটাকে স্যাটালাইট দিয়ে ট্রাক করছি। আমরা জানি স্যার মেয়েটার শরীর থেকে ট্র্যাকিওশানটা বের করার চেষ্টা করেছে। পারে নাই। আমরা মেয়েটাকে চব্বিশ ঘন্টা ট্র্যাক করছি। স্যার।”
“তুমি এখন কী করতে চাও এজেন্ট?”
“আমি আবার চেষ্টা করতে চাই। লোকালদের ওপর নির্ভর না করে। এই মেয়েটা আমাদের ন্যাশনাল সিকিউরিটির জন্যে কতো গুরুত্বপূর্ণ আমি জানি স্যার। আমি মেয়েটাকে নিয়ে আসব স্যার।”
“তুমি পারবে?”
“অবশ্যই পারব স্যার। এই প্রজেক্টটা আপনি পাস করে দিলেই পারব স্যার।”
“ঠিক আছে আমি দেখি।”
“আমি যাব স্যার?”
“দাঁড়াও। যাবার আগে বলে যাও–”
“কী বলব স্যার।”
“তোমার নাকের হাড় কেমন করে ভাঙল সেটা এখানো বল নাই।”
“একটা মেয়ে ঢিল ছুঁড়ে আমার নাকের হাড়টা ভেঙে দিয়েছে।”
কমান্ডার শুকনো স্বরে হা হা করে হেসে উঠল। বলল, “পৃথিবীর সেরা এজেন্সির কমান্ডোর নাকের হাড় ভেঙে দিয়েছে থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রির ছোট একটা মেয়ে?”
“আমাকে সুযোগ দিন স্যার। এবারে মিশন হান্ড্রেড পার্সেন্ট সফল হবে স্যার।”
“যাও এজেন্ট। আমি ভেবে দেখি।”
.
১২.
রেস্টুরেন্টটা খুব সাদামাটা কিন্তু তারপরেও খুব সুন্দর। মনে হয় এখান থেকে পুরো সমুদ্রটা দেখা যায় তাই সাদামাটা হলেও এটাকে এতো সুন্দর দেখায়।
সেরিনা আর শামীম সামনা-সামনি বসে আছে। রাতের খাবার খেয়ে যখন তারা উঠে যাবে তখন সেরিনা শামীমের হাত ধরে বলেছে, “আব্বু, আরো একটু বস।”
শামীম বলল, “আরো একটু বসবি? ঠিক আছে।”
শামীম চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল “চা খাবি?”
সেরিনা মাথা নাড়ল বলল, “না, আব্বু চা খাব না।”
“আর কিছু খাবি?”
“না আলু আর কিছু খাব না। তুমি আমার সামনে বসে থাকো, আমি তোমাকে কাছে থেকে একটু ভালো করে দেখি।”
সেরিনার গলায় স্বরে কিছু একটা ছিল–হঠাৎ করে শামীম ভয়ানক চমকে উঠল, মুহূর্তে তার মুখ রক্তহীন হয়ে যায়। কাঁপা গলায় বলে, “তুই কি বলছিস সেরিনা?”
“হ্যাঁ আব্বু। ওরা এসে গেছে। তুমি পিছন দিকে তাকিও না। তাহলে সন্দেহ করবে। তোমার দুই টেবিল পিছনে একজন লোক বসেছে, বসে টেলিফোনে কথা বলছে। এই মানুষটাকে আজকে অনেকবার দেখেছি। আমাদের সাথে সাথে থাকছে।”
শামীম দুই হাতের উপর তার মাথা রাখল, মনে হল হঠাৎ করে তার শরীরের ভেতর থেকে পুরো জীবনীশক্তি বাতাসের মতো উবে গেছে।
সেরিনা হাত দিয়ে শামীমকে স্পর্শ করল। নিচু গলায় বলল, “আব্বু তুমি এতো মন খারাপ করো না। তুমিও জান আমিও জানি একদিন এই দিনটা আসবে। অনেকদিন থেকে জানি। আজকে এই দিনটা এসেছে।”
শামীম শূন্য দৃষ্টিতে সেরিনার দিকে তাকিয়ে রইল। দেখে মনে হলো সেরিনা কী বলছে বুঝতে পারছে না। সেরিনা নরম গলায় বলল, “আব্বু, তুমি আর আমি কতোদিন থেকে এই দিনটার জন্যে রেডি হয়েছি, মনে আছে?”
শামীম মাথা তুলে সেরিনার দিকে তাকাল, বলল, “এই দিনটার জন্যে কখনো রেডি হওয়া যায়?”