“কী কাজ? “আমার সাথে সিট বদল করবি?” “সিট বদল?”
“হ্যাঁ। আমি ঐ জানালার কাছে বসেছি। তুই ওখানে বোস। আর আমি তোর সীটে বসব।”
গৌরী একটু অবাক হয়ে বলল, “কেন?”
“তোকে পরে বলব। আর তুই আরো একটা কাজ করবি।”
“কী কাজ?”
“জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই তুই দেখবি রাস্তায় একটা ঘিয়ে রংয়ের মাইক্রোবাস। খুবই হাইফাই মাইক্রোবাস।”
“হুঁ। কী হয়েছে সেই মাইক্রোবাসের?”
“মাইক্রোবাসটা যদি চলে যায় তুই আমাকে সিগনাল দিবি।”
“কি রকম সিগনাল?”
“ডান হাতটা এভাবে নাড়াবি।” সেরিনা হাত দিয়ে কিছু একটা সরে যাওয়া দেখাল।
গৌরী জিজ্ঞেস করল, “আর যদি না যায়?”
“তাহলে তোর কিছু করতে হবে না। যা তুই আমার সিটে যা–তাড়াতাড়ি। আর একটা কথা–”
“কী কথা?”
সেরিনা বলল, “মাইক্রোবাসের প্যাসেঞ্জাররা যেন বুঝতে না পারে তুই তাদের লক্ষ্য করছিস। সোজাসুজি তাকাবি না।”
গৌরী অবাক হয়ে বলল, “আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“তোর এখন কিছুই বুঝতে হবে না। তাড়াতাড়ি যা–এক্ষুনি রওশান ম্যাডাম চলে আসবে।
গৌরী তার বই খাতা নিয়ে জানালার কাছে সেরিনার সিটে বসে চোখের কোণা দিয়ে রাস্তায় তাকাল। সত্যিই রাস্তায় একটা ঘিয়ে রংয়ের মাইক্রোবাস। সে সরাসরি না তাকিয়ে চোখের কোণা দিয়ে মাইক্রোবাসটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
রওশান ম্যাডাম আসার পাঁচ মিনিট পর গৌরী সেরিনাকে সিগন্যাল দিয়ে জানালো মাইক্রোবাসটা চলে গেছে।
.
স্কুল ছুটির পর গৌরী সেরিনার কাছে এসে বলল, “সেরিনা, তুই বলবি কি হচ্ছে?”
“আমি ঠিক জানি না কীভাবে বলব।” আমার সাথে আয় হাঁটতে হাঁটতে বলি।
গৌরী আর সেরিনার বাসা একদিকে না, কিন্তু একটু ঘোরাপথে গেলে দুজন এক সাথে প্রথমে বেশ খানিকটা পথ যেতে পারে। মাঝে মাঝেই তারা এক সাথে হেঁটে হেঁটে এই পথে যায়। সাঁতার প্রতিযোগিতায় এক সাথে অংশ নেয়ার পর থেকে সেরিনার গৌরী, ললিতা আর বিলকিসের মাঝে অন্য এক ধরণের বন্ধুত্ব হয়েছে। প্রায় সময়েই তারা এক সাথে থাকে। বিলকিসের বাসা সম্পূর্ণ অন্যদিকে হওয়ার পরও মাঝে মাঝে সেরিনা গৌরী আর ললিতার সাথে হেঁটে হেঁটে যায়। আজকেও চারজন একদিকে রওনা দিল।
স্কুলের গেট থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে সেরিনার মনে হলো মোড়ের চায়ের দোকনে বসে থাকা দুইজন মানুষ উঠে দাঁড়িয়েছে। আসলেই মানুষ দুইজন তার জন্যে উঠেছে নাকী এমনিতেই উঠেছে সেটা পরিষ্কার বোঝা গেল না। সেরিনা সেটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাল না।
গৌরী বলল, “এখন বল, কী হয়েছে?”
বিলকিস জিজ্ঞেস করল, “কিসের কী হয়েছে?”
গৌরী বলল, “আমি জানি না।“
চারজনের মাঝে ললিতা কম কথা বলে তাই সে কিছু বলল না, অন্যেরা কী বলে শোনার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল। সেরিনা বলল, “আমি ঠিক কীভাবে বলব বুঝতে পারছি না।”
বিলকিস বলল, “ধানাই পানাই না করে কী বলবি বলে ফেল।”
সেরিনা হাঁটতে হাঁটতে বলল, “হয়েছে কী, আমার মনে হচ্ছে আমাকে ধরে নেবার জন্যে একটা দল এসেছে।”
গৌরী, বিলকিস আর ললিতা একসাথে প্রায় চিৎকার করে বলল, “কী বললি? তোকে ধরে নিতে একটা দল এসেছে?”
“আমার মনে হয়।”
“কেন? তুই কী করেছিস?”
সেরিনা বলল, “মনে আছে আমরা সাঁতারে চাম্পিওন হয়েছিলাম!”
“হ্যাঁ। মনে আছে।”
“মনে আছে শেষ অংশটাতে আমি সাঁতার দিয়েছিলাম?”
তিনজন এবারে এক সাথে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল, বলল, “হ্যাঁ! তুই যে গুলির মতো ছুটে গেলি! একবার পানি থেকে মাথা পর্যন্ত বের করলি না!”
সেরিনা বলল, “কাজটা ঠিক হয় নাই।” “কোন কাজটা ঠিক হয় নাই?”
“এই যে আমি এতো ভালো করে সাঁতার দিলাম এখন আমার ওপরে অনেকের নজর পড়ে গেছে!”
বিলকিস বলল, “সেটা তো ভালো। তুই সাঁতারের টিমে থাকবি দেশ বিদেশ থেকে মেডেল আনবি।”
সেরিনা মাথা নাড়ল, “উঁহু। জিনিষটা এতো সোজা না। আমি তোদেরকে সব কিছু বলতে পারব না। শুধু জেনে রাখ আমি যে এরকম সাঁতার কাটতে পারি এটা জানাজানি হওয়া আমার জন্যে ভালো না। মনে হয় সেইজন্যে আমাকে ধরে নিতে এসেছে।“
গৌরী জিজ্ঞেস করল, “তুই কেমন করে জানিস?”
সেরিনা বলল, “মনে আছে তোকে আজকে জানালার কাছে বসিয়েছিলাম?
“হ্যাঁ মনে আছে।”
“একটা মাইক্রোবাস দেখিয়েছিলাম, তোকে?”
“হ্যাঁ।” গৌরী মাথা নাড়ল।
“ঐ মাইক্রোবাসে একটা বিদেশী লোক থাকে–আমি যেখানেই যাই লোকটা আমার পিছু পিছু যায়। দূর থেকে বাইনোকুলার দিয়ে দেখে।” সেরিনা হাঁটতে হাঁটতে বলল, “এই যে আমি হাঁটছি, আমার মনে হচ্ছে দুইজন মানুষ আমার পিছনে পিছনে আসছে।”
তিনজন আঁতকে উঠে বলল, “সত্যি?”
“তোরা কেউ এখন পিছনে তাকাবি না, যদি আসলেই থাকে তাহলে সন্দেহ করবে।”
ললিতা ভয়ে ভয়ে বলল, “এখন তাহলে কী করব?”
সেরিনা বলল, “আয় হেঁটে হেঁটে ঐ দোকানটা পর্যন্ত যাই। সেইখানে আমি ভান করব আমার কিছু একটা মনে পড়েছে, তখন তোদের ছেড়ে আমি আবার এই রাস্তা দিয়ে ফিরে যাব। তোরা দোকান থেকে লক্ষ্য করবি পিছনের দুইটা মানুষও আবার আমার পিছু নেয় কী না। ঠিক আছে?”
“ঠিক আছে। তারপর কী করব?”
“তারপর তোরা তোদের বাসায় যাবি, আমি আমার বাসায় যাব।”
“না।” বিলকিস হুংকার দিল, “আমরা তোকে বাসায় পৌঁছে দিব। কার ঘাড়ে দুইটা মাথা আছে তোকে কিডন্যাপ করবে? আমরা দেখে নিব।”
শান্তশিষ্ট ললিতা পর্যন্ত সেই হুংকারে সামিল হল। গৌরী বলল, “তুই সামনে গিয়ে ডানদিকে ঘুরে যা–আমরাও এদিক দিয়ে গিয়ে বাম দিকে ঘুরে তোর সাথে একত্র হব। তারপর সবাই মিলে তোকে বাসায় পৌঁছে দেব।”