সেরিনা বলল, “আমারও।”
.
এরকম সময়ে নাজমা ম্যাডাম এসে বললেন, “সেরিনা তুমি প্রথম শুরু কর যদি ভালো একটা শুরু হয় অন্যেরা উৎসাহ পাবে।”
সেরিনা বলল, “না ম্যাডাম আমি সবার শেষে।”
“সবার শেষে?”
“হ্যাঁ ম্যাডাম।”
“তাহলে প্রথম কে?”
“নার্গিস থাকুক।”
নার্গিস একটু ইতস্তত করে রাজী হল। নাজমা ম্যাডাম ঠিক করে দিলেন নার্গিসের পর গৌরী। গৌরীর পর ললিতা, ললিতার পর সেরিনা। নাজমা ম্যাডাম যে সাঁতারের কায়দা কানুন খুব ভালো জানেন তা নয়, তারপরেও কিছু গাধা উপদেশ দিলেন। তখন সবাই সাঁতারের রিলের জন্যে রেডী হল। সুইমিং পুলের এক পাশে নার্গিস আর ললিতা অন্যপাশে গৌরি আর সেরিনা। নার্গিস ব্যাটন নিয়ে সুইমিং পুলের উপরে রেডি হল, ললিতা এক পাশে সরে নার্গিসের জন্যে জায়গা করে দিল।
সবাইকে প্রস্তুত করানোর জন্যে হুইসেলের একটা লম্বা শব্দ হল। সবাই মাথা নিচু করে রেডি হল। এইবারে একটা তীব্র শব্দ হতেই সবাই নিজের ট্র্যাকে লাফিয়ে পড়ল। পানি ছিটিয়ে সবাই সাঁতরাতে থাকে। গৌরী উত্তেজনায় ছটফট করতে থাকে। সেরিনা গৌরীকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে–“ঘাবড়াবি না গৌরী, একটুও ঘাবড়াবি না। তোকে শুধু ব্যাটনটা ঠিক করে নিতে হবে–ব্যাটনটা ফেলিস না তাহলেই হবে।”
গৌরী আশে পাশের ট্র্যাকের দিকে তাকাল, তাদের পাশের ফর্সা মেয়ের দলের মেয়েটা এর মাঝে পৌঁছে গেছে সাত নম্বর ট্র্যাকও চলে এসেছে। গৌরীর মনে হতে থাকে নার্গিস বুঝি পৌঁছাবেই না। শেষ পর্যন্ত পানি ঝাঁপটে নার্গিস পৌঁছালো, গৌরী ব্যাটনটা প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে উল্টো দিকে যেতে থাকে। ট্র্যাকের দড়ি ধরে ফর্সা মেয়েটা জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে আড় চোখে সেরিনার দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসে। সেরিনাও মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হাসল–যেন খুব মজার একটা ব্যাপার। হয়েছে।
গৌরী সুইমিং পুলের আধাআধি হতেই ফর্সা মেয়ের দলের মেয়েটি গন্তব্যে পৌঁছে পরের জনকে ব্যাটল দিয়ে দিয়েছে। গৌরী পৌঁছে ললিতাকে ব্যাটন দিতে গিয়েও একটু সমস্যা করে ফেলল, হাত থেকে ছুটে যেতে যেতে শেষ পর্যন্ত ব্যাটনটা ললিতা ধরতে পারল। তখন ললিতা সাঁতরে আসতে থাকে।
ফর্সা মেয়েটা সেরিনাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমরা কতো পজিশন পাবে বলে মনে কর?”
সেরিনা জিজ্ঞেস করল, “তোমরা কতো পজিশন পাবে?”
“চ্যাম্পিওন, আবার কী? দেখছ না তাকিয়ে!”
সেরিনা বলল, “তাই নাকি?”
“হ্যাঁ। ফর্সা মেয়েটা বলল, তোমাদের পজিশন কী হবে আমি বলব?”
“বল।”
“লাস্ট।”
সেরিনা উত্তর না দিয়ে মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসল। এরকম সময়ে সেরিনা কেন মিষ্টি করে হাসছে ফর্সা মেয়েটা বুঝতে পারল না।
ফর্সা মেয়েটা যখন ব্যাট হাতে সুইমিং পুলের মাঝামাঝি পৌঁছে গেছে তখন ললিতা সেরিনার হাতে ব্যাটনটি দিল। সেরিনা ব্যাটনটি নিয়ে ললিতার পিঠে থাবা দিয়ে বলল, “সাবাস ললিতা?”
সেরিনা ললিতা ঠিক বুঝল না এতো দেরী করে পৌঁছানোর কোন জায়গাটা সাবাস।
সেরিনা পানিতে ডুব দিল, তারপর দুই পা দিয়ে পানিটা ধাক্কা দিয়ে হঠাৎ করে নাচের ভঙ্গীতে পা দুটো নাড়াতে থাকে, হাত দুটো সামনে ধরে রেখেছে সাতারের ভঙ্গীতে কিন্তু পানি কেটে আনার চেষ্টা করছে না। যারা সাঁতার কাটে তারা তাদের হাত আর পা ব্যবহার করে সেরিনা আপাত দৃষ্টিতে তার হাতগুলো ব্যবহার পর্যন্ত করল না, সারা শরীর একটা তরঙ্গের মতো ঝাঁকুনি দিয়ে নিয়ে গেল একটি বার মাথাটা পানির ওপরে না তুলে সে একটা তীরের মতো এগিয়ে গেল, ফর্সা মেয়েটি গন্তব্যে প্রায় পৌঁছে গিয়েছিল সেরিনা তাকে পিছনে ফেলে একটা বিদ্যুৎ ঝলকের মতো সামনে এগিয়ে গেল। গন্তব্য পৌঁছে সে একটা ডিগবাজী দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ফর্সা মেয়েটির জন্যে অপেক্ষা করতে থাকে।
ফর্সা মেয়েটি হঠাৎ করে সেরিনাকে দেখতে পায়, গন্তব্যে পৌঁছে শান্ত মুখে তার জন্যে অপেক্ষা করছে, সে তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না, বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে কোনো মতে বলল, “তুমি-তুমি-তুমি?”
সেরিনা কিছু বলল না, মেয়েটার দিকে মিষ্টি করে হাসল।
মেয়েটি আবার বলল, “তু-তু-তুমি কেমন করে?”
সেরিনা বলল “আমাদের শরীরের ব্যাকটেরিয়া!”
সেরিনার দল যখন মেডেল নিচ্ছে তখনও ফর্সা মেয়েটা সেরিনার দিকে তাকিলে রইল। বুঝতে পারছে না এটি কীভাবে সম্ভব।
.
দুই দিন পর খাবার টেবিলে শামীম সেরিনাকে বলল, “তোকে এতো করে করলাম কারো চোখে পড়বি না আর তুই এমন একটা নাটক করে ফেললি?
সেরিনা বলল, “আন্ধু তুমি হলে আরো বেশী করতে। তুমি জান ঐ পাজী মেয়েটা আমাদেরকে কীভাবে টিটকারী মারছিল? উচিৎ শিক্ষা হয়েছে। মুখটা এই রকম হা হয়ে গেছে!” কথা শেষ করে সেরিনা মুখটা হা করে দেখাল।
শামীম সেরিনার হা করা মুখটা দেখে হেসে ফেলল কিন্তু আবার হাসি বন্ধ করে গম্ভীর হয়ে বলল, “কিন্তু তুই যে আসলে সাঁতরাসনি তুই যে আসলে পানির টর্পেডো হয়েছিলি সেটা কেউ লক্ষ্য করে নি মনে করিস? কোথাও ভিডিও হয়ে গেছে হয়ত।”
“না আব্বু। এতোজন পানি ঝাঁপটে সাঁতার দিচ্ছে কেউ আমাকে লক্ষ্য করে নি।”
না করলে ভালো, কিন্তু এ-রকম একটা জিনিষ কী লক্ষ্য না করে থাকা সম্ভব?”
সেরিনা বলল, “লক্ষ্য করলেও ভেবেছে আমি খুব ভালো সাঁতার কাটি। তার বেশী কিছু না। কেউ বুঝে নি যে আমি ফুসফুস দিয়ে নিশ্বাস নিই নি।”