সেরিনা বলল, “ঘুমাব?”
“কখন?”
“এই তো এখন।” ‘ঘুমের কাপড় পরবে না?”
ওরা একে অন্যের দিকে তাকাল। আলাদা করে যে ঘুমের কাপড় পরে ঘুমাতে হয় সেটাও তারা জানে না।
নার্গিস বলল, “এইটাই আমাদের ঘুমানোর কাপড়।”
মেয়েটা খুবই অবাক হল এবং সেটা গোপন রাখার চেষ্টা করল না। জিজ্ঞেস করল, “তোমরা কোন স্কুল থেকে এসেছ?”
সেরিনা তাদের স্কুলের নাম বলল। মেয়েটা তখন জানতে চাইল সেটা কোথায়? তারা সেটাও বলল কিন্তু মেয়েটা জায়গাটা চিনল বলে মনে হল না। সেটা নিয়ে সে অবশ্যি মাথা ঘামাল না জিজ্ঞেস করল, “তোমাদের স্কুলের সুইমিং পুলটা কী রকম?”
সেরিনা নার্গিস গৌরী আর ললিতা আবার একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাল। নার্গিস বলল, “আমাদের স্কুলে কোনো সুইমিং পুল নাই।”
মেয়েটা হকচকিয়ে বলল, “সুইমিং পুল নাই? তাহলে তোমরা কোথায় প্র্যাকটিস কর?”
“পুকুরে।
“পুকুরে?” মেয়েটা এতো জোরে চিৎকার করে উঠল যে শুনে মনে হল তারা পুকুরে’ বলে নি বলছে ‘আলকাতরায়।
সেরিনা গৌরী আর ললিতার দিকে দেখিয়ে বলল, “এরা দুইজন নদীর ধারে থাকে। এরা নদীতে সাঁতরায়”
মেয়েটা খানিকক্ষণ ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। মনে হল ব্যাপারটা সে বুঝতেই পারছে না। খানিকক্ষণ পর জিজ্ঞেস করল, “যদি তোমাদের সুইমিং পুল নাই তাহলে তোমরা কেমন করে প্র্যাকটিস করেছ? কীভাবে টাইমিং করেছ? কালকে কেমন করে কম্পিটিশনে পার্টিসিপেট করবে?”
সেরিনা হাত নেড়ে বলল, “করব কোনো রকম ভাবে।”
মেয়েটার কাছে পুরো ব্যাপারটাই মনে হল খুবই আজব লেগেছে তাই সে একটু পরে উঠে তার দলের অন্য যে মেয়েরা আছে তাদের কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে কথা বলতে লাগল, মাঝে মাঝে আঙ্গুল দিয়ে সেরিনাদের দেখাতে লাগল, তারপর হেসে কুটি কুটি হতে লাগল।
নারগিস বলল, “দেখ! আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করছে।”
সেরিনা বলল, “করুক।”
গৌরী বলল, “আমার বাড়ীর জন্যে মন খারাপ লাগছে।”
ললিতা বলল, “আমারও।”
.
পরদিন সকালে নাস্তা খাবার পর বড় একটা বাস এসে সবাইকে স্পোর্টস সেন্টারে নিয়ে গেল। সেখানে সেরিনাদের দলের সবাই জীবনের প্রথম একটা সুইমিং পুল দেখল। কী সুন্দর টলটলে নীল পানি, দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। সাঁতার দেয়ার জন্যে আলাদা আলাদা লেন, সেখানে একেকজন একেকটা লেনে সাঁতার কাটবে।
নাজমা ম্যাডাম তাদেরকে নিয়ে গেলেন রেজিস্ট্রেশন করানোর জন্যে, তাদেরকে একটা নম্বর দেয়া হল, সাতার কাটার সময় সেটা বুকে লাগিয়ে রাখতে হবে। একেকজন দুইটা ইভেন্টে অংশ নিতে পারবে। সেরিনারা ফ্রী স্টাইল আর রিলে সাতারে নাম দিয়েছে। সকালে ফ্রী স্টাইল বিকেলে রিলে সাঁতার।
সেরিনাদের দল দ্বিতীয় রাউন্ডে হেরে গেল। গৌরী প্রাণপণ চেষ্টা করল, আরেকটু হলে সে এর পরের রাউন্ডে উঠতে পারত কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারল না। ফর্সা মেয়েটা চাম্পিওন হল। তার দলের অন্যেরাও অন্যান্য ইভেন্টে খুব ভালো করল। তাদের স্কুলের টিচার মহা খুশী। নাজমা ম্যাডাম মুখ শুকনো করে ঘুরাঘুরি করতে লাগলেন। মাঝে মাঝে এসে তাদের বলে যেতে লাগলেন, “তোমরা মন খারাপ করো না। কম্পিটিশনে জেতা বড় কথা না, অংশ নেয়া হচ্ছে বড় কথা।”
সেরিনা কিছু বলল না, সে তো আর নাজমা ম্যাডামকে বলতে পারে যে আসলে তাকে খুব সাবধানে সারাতে হচ্ছে যেন কোনোভাবে কোনো পুরস্কার না পেয়ে যায়। কোনো ভাবে কেউ যেন সন্দেহ করতে না পারে যে পানির সাথে তার অন্য এক ধরণের সম্পর্ক! সেরিনা ইচ্ছে করলেই এখানে যারা আছে তাদের যে কাউকে যে কোনো সময়ে হারিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সেটা যেন না করে ফেলে সেটা নিয়েই সাবধান থাকতে হয়। চেষ্টা করে তাকে হেরে যেতে হয়!
দুপুরের পরে রিলে সাঁতার। সেরিনাদের জন্যে তিন নম্বর ট্র্যাক, চার নম্বর ট্র্যাকে সেই ফর্সা মেয়েটির দল। সেরিনাদের দেখে মেয়েটি খিল খিল করে হেসে ফেলল, বলল, “তোমাদের সুইমিং কস্টিউটম নেই?”
সেরিনা মাথা নাড়ল, বলল, “না নেই?”
“এই টি শার্ট পরে সাঁতরাবে।”
সেরিনা মাথা নাড়ল। মেয়েটা বলল, “সুইমিং কস্টিউম ছাড়া একজন কেমন করে সারায়? কিনে নাও না কেন?”
নার্গিস বলল, “আমাদের থাকলেও কেউ পরতে রাজী হবে না।”
“কেন?”
গৌরী বলল, “লজ্জা করবে।”
মেয়েটা আবার খিল খিল করে হাসল, তারপর বলল, “তোমাদের মাথাতে ক্যাপ নেই? চোখে গগলস নেই?”
সেরিনা আবার মাথা নাড়ল, বলল, “না, নেই।”
“চুল তোমাদের ডিস্টার্ব করে না।“
“করে না। আমাদের অভ্যাস আছে।”
ফর্সা মেয়েটা বলে, “তোমাদের আসলে পানিতে নামাই ঠিক হয় নাই।”
সেরিনা ভুরু কুঁচকে বলল, “কেন?”
“পানিতে মানুষ সাঁতার কাটে। সাঁতার কাটার নিয়ম আছে। স্টাইল আছে। তোমরা তো কিছু জান না।”
নার্গিস চোখ পাকিয়ে মেয়েটির দিকে তাকাল। মেয়েটা বলল, “সাতারের মাঝে হাইজিনেরও ব্যাপার আছে। ভাগ্যিস এই পানিতে ক্লোরিন দেওয়া থাকে। তা না হলে তোমরা কোথা থেকে কী ব্যাকটেরিয়া নিয়ে আসতে কে জানে!”
গৌরী ফিস ফিস করে সেরিনাকে জিজ্ঞেস করল, “মেয়েটা কী বলছে রে?”
“মেয়েটা বলছে, আমাদের শরীরে জীবানু থাকলেও সমস্যা নাই। সুইমিং পুলের পানিতে ক্লোরিন থাকে।”
গৌরী ফিস ফিস করে বলল “ইচ্ছে করছে মেয়েটার মুখে খামচি দিয়ে চোখ তুলে নেই।”