নার্গিস বলল, “চল নিচে গিয়ে খেয়ে আসি।”
সেরিনা বলল, “আগে হাত মুখে ধুয়ে আসি।”
গৌরী বলল, “এই এত বড় ঘরে খালি আমরা থাকব? আর কেউ থাকবে না?
“মনে হয় থাকবে। অন্যেরা এখনো আসে নাই।”
নার্গিস তার ব্যাগ থেকে একটা তোয়ালে বের করে বলল, “আমি হাত মুখ ধুয়ে আসি।” ও
নার্গিসের সাথে সাথে অন্যেরাও গেল। হাত মুখ ধুয়ে তারা নিচে খেতে গেল। খাওয়া শেষ করে যখন তারা ওপরে নিজেদের রুমে ফিরে এসেছে তখন তাদের রুমের ভিতরে অনেক মেয়ে, মনে হল রীতিমত বাজার বসে গেছে। ওরা দেখল ফর্সা করে লম্বা মতন একজন মেয়ে গলা উঁচু করে বলছে, “থাকব না। আমি এখানে থাকব না। আই উইল নট স্টে হেয়ার।”
সেরিনা একটু অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল সমস্যাটা কী। মেয়েটা মেঝেতে পা ঠুকে বলল, “এ রকম নোংরা জায়গায় মানুষ থাকতে পারে? আমি নিজের চোখে একটা তেলাপোকা দেখেছি। এ ফ্যাট আগলি ককরো।”
নাদুস নুদুস একটা মেয়ে বলল, “এই দেশের সব জায়গায় তেলাপোকা থাকে। প্রেসিডেন্টের বাড়ীতেও আছে।”
ফর্সা মেয়েটা চোখ পাকিয়ে বলল, “তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করছ? তুমি আমাকে চিনো?”
নাদুস নুদুস মেয়েটা থতমত খেয়ে বলল, “সরি। আমি আসলে ঠাট্টা করছিলাম না। আমি বুঝতে পারি নাই।”
ফর্সা মেয়েটার সাথে আরো কয়েকজন আছে তাদেরও মেজাজ খুব গরম দেখা গেল। চেহারা দেখে বোঝা যায় তারা এরকম হোস্টেলের মতো জায়গায় থেকে অভ্যস্ত না। এতোজন মানুষের সাথে একটা ঘরে থাকতে হবে চিন্তা করেই তারা খুব বিরক্ত হয়ে উঠছিল। তাদের দলের আরেকটা মেয়ে বলল, “আমরা এখানে কেমন করে ঘুমাব? প্রাইভেসি কোথায়?”
ফর্সা মেয়েটা বলল, “আমি আগে জানলে আসতেই রাজী হতাম না। মনে আছে যখন আমরা নেপাল গিয়েছিলাম আমাদের ফাইভ স্টার হোটেলে রেখেছিল?”
তার দলের মেয়েরা মাথা নাড়ল। একজন বলল, “এখন চিৎকার করে লাভ নাই, কাল সকালে দেখা যাবে
ফর্সা মেয়েটা বলল, “আমি ডেফিনিটলি এখান থেকে বের হয়ে যাব। আই এম নট স্লিপিং উইথ ককরোচস।”
বিছানা ভাগাভাগি করতে গিয়ে হঠাৎ করে তারা আবিষ্কার করল, যে তাদের একটা বিছানা কম। তখন তারা এমন চিৎকার করতে শুরু করল, যে নিচ থেকে একজন মানুষ উপরে উঠে এল। ফর্সা মেয়েটি পা দাপিয়ে বলল, “আমরা চারজন মানুষ, তিনটা বিছানা। কীভাবে ঘুমাব?”
নিচ থেকে উঠে আসা মানুষটা মাথা চুলকে বলল, “আজকে রাতটা ম্যানেজ করে ফেল, কাল একটা ব্যবস্থা করে দেব।”
“কীভাবে ম্যানেজ করব? একজন জেগে বসে থাকব? কালকে আমাদের কম্পিটিশান, রাত্রে না ঘুমিয়ে কম্পিটিউশনে যাব?”
“ভাগাভাগি করে ঘুমিয়ে যাও!”
মেয়েটা চিৎকার করে বলল, “হোয়াট? এক বিছানায় দুইজন? আর ইউ ক্রেজী?”
গৌরী ফিসফিস করে সেরিনাকে বলল, “সেরিনা।”
“কী হয়েছে?”
“আমি আর ললিতা এক বিছানায় ঘুমিয়ে যাব। তুই বলে দে আমাদের একটা বিছানায় ওদের একজন ঘুমাতে পারবে।”
সেরিনা ফিসফিস করে বলল, “তোদের অসুবিধে হবে না?”
গৌরী হেসে ফেলল, বলল, বাড়ীতে কি আমার আলাদা বিছানা আছে নাকী? আমরা একসাথে ঘুমাই না? তাই নারে ললিতা?”
ললিতা মাথা নাড়ল। সেরিনা তখন ফর্সা মেয়েটাকে বলল, “শোনো। আমরা চারজন তিনটা বিছানায় ঘুমাতে পারব। তোমরা আমাদের একটা বিছানা নিতে পার।”
মেয়েটা কেমন যেন থতমত খেয়ে গেল। বলল, “আর ইউ শিওর?”
সেরিনা মাথা নাড়ল, “শিওর।”
এরকম জটিল একটা সমস্যার হঠাৎ করে এত সহজ সমাধান হয়ে যাওয়ায় মনে হল মেয়েটার একটু আশা ভঙ্গ হল। সে আসলে আরো কিছুক্ষণ চিৎকার করতে চাচ্ছিল। নিচ থেকে যে মানুষটা এসেছিল সে এবার বেশ কঠিন স্বরে বলল, “এবারে তোমার সমস্যা মিটেছে?”
ফর্সা মেয়েটা গজগজ করতে থাকে। মানুষটা গলায় স্বর আরেকটু কঠিন করে বলল, “দেখো, সারা দেশ থেকে মেয়েরা আসছে। নানা ধরণের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে মেয়েরা আসছে। আগামী কয়েকদিন সবাই মিলে মিশে থাকবে এটা হচ্ছে আমাদের আসল উদ্দেশ্য। মনে করো না প্রতিযোগিতা করে পুরস্কার পাওয়াটা আসল উদ্দেশ্য। বুঝেছ?”
ফর্সা মেয়েটা আসলে সব সময়েই চিৎকার চেঁচামেচি করেছে এবং সবাই সবসময় তাকে সমীহ করে এসেছে। সে কোনো কিছু নিয়ে অভিযোগ করবে আর তাকে একজন উল্টো উপদেশ দেবে এরকম কিছু সে মোটেও অভ্যস্ত নয়। রাগে মেয়েটার মুখ থম থম করতে লাগল।
রাতে ঘুমানোর সময় গৌরী আর ললিতা এক সাথে শুয়ে ফিস ফিস করে কথা বলছিল। সেরিনা বলল, “তোরা কী নিয়ে কথা বলিস?”
গৌরী বলল, “কিছু না।”
ললিতা বলল, “গৌরী বলছিল তার বাড়ীর জন্যে মন খারাপ লাগছে।”
গৌরী লজ্জা পেয়ে বলল, “মোটেই বলি নাই।”
সেরিনা বলল, “আমি আগে কোনোদিন আমার আব্বুকে ছাড়া একা থাকি নাই। আমারও আব্বুর জন্যে একটু একটু মন খারাপ করছে।”
নার্গিস হি হি করে হেসে বলল, “ধূর গাধা। আমরা কালকে যদি হেরে যাই তাহলে পরশুদিন বাড়ী যাব। তোদের এতো মন খারাপ করার কী আছে?”
গৌরী বলল, “প-র-শু দি-ন? এতো দিন পরে?”
তার বলার ভঙ্গী শুনে অন্যেরাও হেসে উঠল। ঠিক এই সময় ফর্সা মেয়েটা খুবই কায়দার একটা ঘুমের কাপড় পরে তাদের পাশের বিছানায় ঘুমাতে এল। মেয়েটা তাদের বয়সী, খুব বেশী হলে হয়তো এক বছর বেশী বয়স হবে। কিন্তু মেয়েটার ভায় ভঙ্গি দেখে মনে হয় যে বুঝি তাদের থেকে অনেক বড়। ঠিক সেরকম ভাব করে তাদের দিকে তাকাল, বলল, “তোমরা ঘুমাবে না?”