ক্ৰানা একটা জটিল কোড উচ্চারণ করে অস্ত্রধারী একজন মানুষ ক্রিস্টাল রিডারে সেটা তুলে নিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে পাঠানোর জন্যে চলে যায়।
ক্রিভন বলল, আমরা কী আমাদের অস্ত্রেও কোডটা ঢোকাব?
ক্ৰানা বলল, ঢোকাতে পার। তোমাদেরও একটা নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে।
অস্ত্রের ভেতর কোডটা ঢুকিয়ে ক্রিভন আবার তার ক্ষেপণাস্ত্রের কাছে ফিরে এলো, ক্ষেপণাস্ত্রের সুইচ স্পর্শ করার ঠিক আগের মুহূর্তে ক্ৰানা বলল, দাঁড়াও।
কী হলো।
বাতাসের দিক পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। বিষাক্ত গ্যাস এদিকে আসতে পারে, তোমাদের একটু নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার।
সেটি কীভাবে করব?
সবাই একটা প্রতিষেধক ক্যাপসুল তোমাদের জিভের নিচে রেখে দাও।
প্ৰতিষেধক ক্যাপসুল কোনটি?
তোমাদের চিকিৎসক নিশ্চয়ই জানে। তাকে জিজ্ঞেস কর।
ক্ৰিভন একটু অধৈর্য হয়ে বলল, আমরা সাথে কোনো চিকিৎসক আনি নি। তুমি কী জান না?
জানি। অবশ্যই জানি। কিন্তু আমি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ নই। আমি যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ। ক্ৰানা শান্ত গলায় বলল, আমি চিকিৎসা সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাই না। কারণ তুমি আমাকে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কিনে আননি। যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কিনেছ।
ক্রিভন অধৈর্য হয়ে হাত ছুড়ে বলল, তুমি সময় নষ্ট করো না। বলে দাও কোনটি প্রতিষেধক ক্যাপসুল।
ক্ৰানা প্রতিষেধক ক্যাপসুলের নামটি বলে দিতেই একজন সেগুলো আনতে ছুটে চলে গেল। ক্রানা বলল, যতক্ষণ সেগুলো আনা না হচ্ছে তোমরা ততক্ষণ অন্য একটা কাজ করতে পার।
কী কাজ?
বাতাসের দিক পরিবর্তন করছে, আমি বুঝতে পারছি, উত্তর দিক থেকে শুষ্ক বাতাস আসছে। শুকনো বাতাস ক্রাটুশকা অক্সিডাইজড হতে দেরি হয়।
তার মানে কী?
তার মানে কাটুশকা বোমার কার্যকারিতা শতকরা ত্রিশ ভাগ পর্যন্ত কম হয়ে যেত পারে।
কিভন একটু বিরক্ত হয়ে বলল, শেষ মুহূর্তে এটা বলছ কেন?
ক্ৰানা শান্ত গলায় বলল, আমি এটা শেষ মুহূর্তে বলছি কারণ আমি এটা শেষ মুহূর্তে জানতে পেরেছি। কিন্তু সেটি নিয়ে তোমার ব্যস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
ক্ৰিভন, আমি শতকরা ত্রিশ ভাগ অকার্যকর একটি বোমা কেন পাঠাব?
ক্রানা বলল, এগুলো রাসায়নিক বোমা। কেউ শতকরা একশ ভাগ কার্যকারিতা গ্যারান্টি দেয় না। তবে যেহেতু সমস্যাটি সহজ এর সমাধানটিও সহজ।
সমাধানটি কী?
ক্ৰানা বলল, যেহেতু বাতাস শুষ্ক, জলীয় বাষ্প নেই, কাটুশকা বোমার উপাদানে একটু পানি দাও। এগুলো রাসায়নিক বোমা, শেষ মুহূর্তে এখানে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ দেয়া যায়।
ক্ৰিভন বলল, তুমি সেটা আগে বলছ না কেন?
আমি ঠিক সময়েই বলেছি, তুমি অধৈর্য হয়ে আছ বলে তোমার কাছে মনে। হচ্ছে আমি দেরি করে বলেছি। কাটুশকা বোমাটি বের করে আনো, ডানদিকৈর স্কুটা ঢিলে করে সেখানে পাঁচশ সিসি পানি ঢেলে দাও।
ক্ৰিভন অন্য কাউকে দায়িত্বটি না দিয়ে নিজেই কাটুশকা শেলটি বের করে আনে। ডানদিকের স্কুটা খুলে সেখানে একটু পানি ঢেলে দিয়ে আবার স্কুটা লাগিয়ে দেয়। শেলটা ক্ষেপণাস্ত্রে ঢুকিয়ে কানার দিকে তাকাল, আর কিছু?
না।
আমি সুইচ টিপতে পারি?
প্রতিষেধক ক্যাপসুলটা আসুক।
কাজেই ক্ৰিভনকে আরো কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হলো। সবাই প্রতিষেধক ক্যাপসুলটা জিভের নিচে দিয়ে ক্রিভন ক্ষেপণাস্ত্রটির কাছে এগিয়ে। যায়। ডানদিকে একটা লিভারকে টেনে ধরে সে সুইচটা চেপে ধরে। সাথে সাথে ভেতরে একটা যান্ত্রিক শব্দ হয়ে এলার্ম বেজে ওঠে। ক্রিভন পিছনে সরে আসে এবং হঠাৎ করে ঝাঁকুনি দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি কেঁপে ওঠে এবং একটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণের সাথে সাথে কাটুশকার শেলটি উড়ে গেল।
ক্ৰিভনের মুখে একটা বিচিত্র হাসি ফুটে ওঠে। সে রিদি আর রুহানের দিকে তাকিয়ে বলল, নির্বুদ্ধিতার পরিণাম কী হতে পারে, তুমি নিজের চোখে দেখ।
রুহান ফিসফিস করে বলল, পৃথিবীর ইতিহাসে এর আগেও অনেকবার অনেক নৃশংসতা হয়েছে। কিন্তু কোনো নৃশংস মানুষ কিন্তু কখনো বেঁচে থাকে নি। তুমিও বেঁচে থাকবে না ক্ৰিভন।
ক্রিভন শব্দ করে হেসে বলল, তুমি নিজের চোখে দেখ কে বেঁচে আছে, আর কে বেঁচে নেই!
দূর গ্রাম থেকে একটা কোলাহলের মত শব্দ ভেসে আসে, ক্রিভন সেদিকে উৎসুকভাবে তাকিয়ে ক্রানাকে জিজ্ঞেস করল, শেলটি কী ফেটেছে।
ক্রানা মাথা নেড়ে বলল, নিশ্চয়ই ফেটেছে।
বিষক্রিয়া শুরু হয়েছে?
ক্রানা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল, ক্ৰিভন, তুমি একটু আগে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, আলোর মশাল দিয়ে গ্রামে একটা ক্রস তৈরি করার অর্থ কী?
হ্যাঁ। সেটা কী তুমি বুঝতে পেরেছ?
পেরেছি।
ক্রিভন ভুরু কুঁচকে জানতে চাইল, সেটা কী?
মানুষ যখন কাউকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে, তখন হাত দুটো অনেক সময় একটার উপর আরেকটা চলে আসে, নিজের অজান্তে দুটি হাত দিয়ে তৈরি হয় একটা ক্রস।
ক্ৰিভন বলল, তুমি কি বলছ বুঝতে পারছি না।
আমি বলছি, এই ক্রসের অর্থ ভালোবাসা।
ভালোবাসা?
হ্যাঁ, ভালোবাসা।
ক্ৰিভন কুদ্ধ গলায় বলল, কার জন্যে ভালোবাসা? কীসের ভালোবাসা?
মানুষের জন্যে মানুষের ভালোবাসা।
কিন্তু সেটা বলার অর্থ কী?
তারা আমাকে মনে করিয়ে দিল, মানুষের জন্যে থাকতে হয়। ভালোবাসা।
ক্রিভন কাঠ কাঠ গলায় হেসে উঠে বলল, এটা চমৎকার একটা রসিকতা হলো, তারা বলছে ভালোবাসা আর তুমি ক্রাটুশকার শেল দিয়ে সেই ভালোবাসার জবাব দিলে! তোমার ভালোবাসায় সবার চামড়ায় ফোঁসকা পড়ে দগদগে ঘা হবে, ফুসফুস টুকরো টুকরো হয়ে বের হয়ে আসবে নিঃশ্বাসের সাথে!