ক্ৰিভন নিঃশব্দে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বলল, তোমাদের শুধু শারীরিক যন্ত্রণার একটা শাস্তি দেব না, তোমাদের মানসিক একটা যন্ত্রণারও ব্যবস্থা করা দরকার। সে জন্যে তোমাদের এখানে এনেছি, চেয়ারে বসতে দিয়েছি, বেঁধে রেখেছি। বেঁধে না রাখলেও হতো–পালিয়ে তোমরা কোথায় যাবে? কেন এত যত্ন করে তোমাদের এখানে বসিয়েছি জান? তোমরা যেন পুরো ব্যাপারটা দেখতে পার! আমরা এক্ষুনি যে হত্যাকাণ্ড শুরু করব সেটা তোমরা নিজের চোখে দেখবে! তোমাদের নির্বুদ্ধিতার জন্যে এই মানুষগুলো একজন একজন করে মারা যাবে! তোমরা সেটা দেখবে। শরীরে আগুন নিয়ে ছোট ছোট শিশুরা চিৎকার করে ছোটাছুটি করবে তোমরা সেটা দেখবে! দেখে ভাববে এর জন্যে আমরা দায়ী! আমাদের নির্বুদ্ধিতা দায়ী। ক্ৰিভন ঘুরে তাকিয়ে বলল, বুঝেছ?
রিদি কিংবা রুহান কোনো কথা বলল না। তারা পুরো ব্যাপারটা ঠিক করে চিন্তাও করতে পারছিল না, মনে হচ্ছিল পুরো বিষয়টা বুঝি একটা দুঃস্বপ্ন, ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন।
ক্ৰিভন এসে তার নরম চেয়ারটিতে বসে পিছনে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো একজন মানুষকে বলল, স্টিমুলেশন দেবার কাজ শুরু করো।
কয়েকজন ছোটাছুটি করে একটা ছোট যন্ত্র নিয়ে আসে। ক্রানার চেয়ারের পিছনে যন্ত্রটা রেখে তারা ক্রানাকে চেপে ধরল। ক্ৰানা চিৎকার করে প্রতিবাদ করে, ভয়ে আতঙ্কে থরথর করে কাঁপতে থাকে। তার মাঝে একজন একটা ক্যাবল টেনে এনে একটা ধাতব কানেক্টর তার মাথার মাঝে ঢুকিয়ে দেয়। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে ক্ৰানা অচেতন হয়ে যায়। ক্রিভন সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মাথা নেড়ে বলল, সক্রেটিস খুব কাজের জিনিস, তবে ব্যবহার করা এত সোজা নয়!
কাউকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয় নি তাই কেউ এই প্রশ্নের উত্তর দিল। ক্রিভন কিছুক্ষণ ক্ৰানার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, জ্ঞান ফিরিয়ে আন তাড়াতাড়ি, আমাদের হাতে বেশি সময় নেই।
কয়েকজন ক্রানাকে ঘিরে দাঁড়ায়, তার মুখে পানির ঝাঁপটা দেয়, শরীরে ধাক্কা দিয়ে জাগানোর চেষ্টা করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে ক্রানা চোখ খুলে তাকায়। ফিসফিস করে বলে, আমি কোথায়?
ক্রিভন এগিয়ে গিয়ে বলল, তুমি ঠিক জায়গাতেই আছ। এখন সুস্থ বোধ করছ তো?
ক্ৰানা একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, সত্যি কথা বলতে কী আমার কোনো বোধ নেই। আমাকে কী জন্যে ডেকেছ বল।
একটু আগেই জানা কথা বলছিল পুরোপুরি অপ্রকৃতস্থ একজন মানুষের মতো মস্তিষ্কে স্টিমুলেশন দেবার সাথে সাথে সে কথা বলছে পুরোপুরি স্বাভাবিক মানুষের মতো!
ক্রিভন ক্রানার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, প্রথমে তোমাকে একটা ধন্যবাদ দেয়া দরকার। রিদি আর রুহান নামের দুই নির্বোধকে ধরে আনার জন্যে যে পরিকল্পনাটা তুমি করে দিয়েছিলে, সেটা চমৎকারভাবে কাজ করেছে।
শুনে খুব সুখি হলাম।
বুকের মাঝে হাইব্রিড বিস্ফোরক বেঁধে কাকে পাঠিয়েছিলাম তুমি কী জান?
না, আমি জানি না। আমামর জানার কথা নয়।
আমরা তোমাকে পাঠিয়েছিলাম।
ক্ৰানা ফিসফিস করে বলল, আমি বলে কেউ নেই। আমি ক্ৰানা নামে এই মেয়েটির মস্তিষ্কের একটা অবস্থা। আমার নিজের কোনো অস্তিত্ব নেই। তোমরা ক্ৰানাকে পাঠিয়েছিলে, আমাকে নয়।
একই কথা।
ক্রানা জোর দিয়ে বলল, না এক কথা নয়।
যাই হোক আমি সেটা নিয়ে এখন তোমার সাথে তর্ক করতে চাই না। আমার এখন তোমার সাহায্যের প্রয়োজন।
ক্ৰানা বলল, বলো, আমাকে কী করতে হবে।
সামনের এই গ্রামটি দেখছ? হ্যাঁ, দেখছি।
আমি এই গ্রামের প্রত্যেকটা জীবিত প্রাণীকে হত্যা করতে চাই।
ক্রানার কণ্ঠস্বর এক মুহূর্তের জন্যে থমকে যায়, এক মুহূর্ত দ্বিধা করে বলল, কেন?
আমি এই গ্রামের মানুষকে একটা শাস্তি দিতে চাই। সেই শাস্তির খবরটি সব জায়গায় ছড়িয়ে দিয়ে আমার ক্ষমতাটি সম্পর্কে সবাইকে ধারণা দিতে চাই।
ক্রানা বলল, প্রাণী হত্যা করার জন্যে সবচেয়ে কার্যকরী বিষ নিশুনিয়া এখান থেকে দুটি নিশুনিয়া বোমা একটা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে গ্রামের মাঝামাঝি ছুড়ে দাও, ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে সবাই মারা যাবে। যন্ত্রণাহীন চমৎকার একটি মৃত্যু!
না, না, না— ক্ৰিভন মাথা নেড়ে বলল, আমি যন্ত্রণাহীন মৃত্যু চাই না। আমি ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করতে চাই। যন্ত্রণার প্রত্যেকটা মুহূর্ত ভিডিওতে ধরে রাখতে চাই। সেটা প্রচার করতে চাই।
তাহলে তোমার জন্যে সবচেয়ে উপযোগী বোমা হবে ক্রাটুশকা বোমা। প্রতি এক বর্গ কিলোমিটারের জন্যে এবটা বোমাই যথেষ্ঠ। এই বোমা থেকে যে গ্যাস বের হয় সেটা বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে প্রত্যেকটা প্রাণীর শরীরের প্রতি সেন্টিমিটার পুড়িয়ে দেবে। দেখতে দেখতে ফোঁসকা পড়ে দগদগে ঘা হয়ে যাবে। চোখের কর্ণিয়া পুড়ে অন্ধ হয়ে যাবে, প্রচণ্ড যন্ত্রণায়। চিৎকার করতে থাকবে। নিঃশ্বাসের সাথে ফুসফুসে এই গ্যাস যাবার পর ফুসফুস ঝাঝরা হয়ে যাবে, নিঃশ্বাসের সাথে সাথে ফুসফুসের টুকরোগুলো বের হয়ে আসবে। বলা যেতে পারে তিন থেকে চার ঘণ্টার ভেতরে প্রত্যেকটা প্রাণী নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাবে। কম সময়ের ভেতরে সবাইকে হত্যা করার জন্যে এটাই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। যদি আরও বেশি সময় নিয়ে কাজটা করতে চাও।
ক্রিভন বাধা দিয়ে বলল, না, আমার হাতে বেশি সময় নেই। আমি সময় নিয়ে করতে পারব না।