এখন আমাদের সাথে প্রায় তিনশ সশস্ত্র মানুষ। তারা যে শুধু সশস্ত্র তাই না, আমার ধারণা তাদের সবাই বেশ ভালো সৈনিক। আমি নিশ্চিত, যতই দিন যাবে এরকম মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে। দেখতে দেখতে আমাদের সাথে হাজার হাজার মানুষ চলে আসবে। আমরা তখন বিশাল একটা শক্তি হয়ে যাব। বুঝতে পারছ?
রুহান বলল, হ্যাঁ, বুঝতে পারছি।
রিদি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, না, তুমি বুঝতে পার নি।
আমি কী বুঝতে পারি নি!
আমরা যেটা অনুমান করছি সেটা কী ক্ৰিভন অনুমান করছে না?
রুহান মাথা নেড়ে বলল, মনে হয় করছে।
তা হলে?
তুমি বলছ, ক্রিভন সেটা কোনোদিনই করতে দেবে না?
রিদি মাথা নাড়ল, আমার তাই ধারণা। আমরা এখন পর্যন্ত যে সব কাজ করেছি তার প্রত্যেকটা ক্ৰিভনের মান-সম্মান, ব্যাবসা, বাণিজ্য, ক্ষমতার রাজত্ব সবকিছুর উপর একটা করে বিশাল আঘাত। ক্ৰিভনের এখন তার লোকজনের সামনে মুখ দেখানোর কোনো উপায় নেই। ক্ৰিভনকে যেভাবে হোক তার সম্মানকে উদ্ধার করতে হবে। সেটা কীভাবে করা সম্ভব, বলো দেখি?।
রুহান কোনো কথা না বলে চুপ করে রইল।
রিদি বলল, বলো।
রুহান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমাদের দুইজনকে ধরে নিয়ে।
হ্যাঁ। শুধু ধরে নিয়ে নয়, দুইজনকে খুব কঠিন একটা শাস্তি দিয়ে–এমন কঠিন একটা শাস্তি যে পৃথিবীর যে কোনো মানুষ যখন সেটা শুনবে তখন আতঙ্কে শিউরে উঠবে। রিদি এক মুহূর্ত থেমে বলল, সেটা কী হতে পা তুমি জান?
রুহান কিছুক্ষণ পর বলল, জানি।
সেটা কী?
আমি সেটা নিয়ে কথা বলতে চাই না।
ঠিক আছে। আমিও চাই না। শুধু আমি নিশ্চিত করতে চাই যে তুমিও বর্তমান পরিস্থিতিটা ঠিকভাবে বুঝতে পারছ।
আমি বুঝতে পারছি রিদি। জেনে হোক না জেনে হোক আমরা অসম্ভব বিপদের একটা কাজে হাত দিয়েছি। অনেকটা সিংহের লেজ ধরে ফেলার মতো, এখন সেটা ধরে রাখতেই হবে, ছেড়ে দিলে সিংহটা আমাদের খেয়ে ফেলবে।
রিদি শব্দ করে হেসে বলল, মাঝে মাঝে তুমি খুব বিচিত্র কথা বল রুহান। খুব বিচিত্র এবং মজার। যাই হোক, চল শুয়ে পড়া যাক।
তুমি যাও, আমার একটা কাজ করতে হবে।
কী কাজ?
সেটাও খুব বিচিত্র, তুমি জানতে চেয়ো না।
রিদি বলল, সেই কাজটা কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে না?
না।
আমি জানি, আমাদের খুব বিপদের ঝুঁকি আছে কিন্তু সেটা আজ রাতেই ঘটে যাবে বলে আমি মনে করি না। আমাদের এখানে এখন তিনশত সশস্ত্র মানুষ, তারা ছোট গ্রামটার চারপাশে পালা করে পাহারা দিচ্ছে। নাইট গগলস চোখে দিয়ে লোকজন দেখছে, গোপনে কেউ আক্রমণ করতে পারবে না।
সেটা নিয়েই ভাবছি রিদি। মনে হচ্ছে সেটাই দুশ্চিন্তার কথা।
রিদি শক্ত বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে বিড়বিড় করে বলল, যেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কথা তুমি সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। কিন্তু যেটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই সেটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে তুমি চুল পাকিয়ে ফেল। আমার ধারণা তোমার। এখন সময় হয়েছে- কথাটা শেষ করার আগেই রিদি গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল।
রুহান শুতে গেল একটু পরেই। শোবার আগে সে কয়েকটা কাঠি পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে সেই কয়লা দিয়ে দেয়ালে একটা নির্দেশ লিখে গেল। ছোট একটা নির্দেশ, এটা লিখতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়, কিন্তু রুহান তার জীবনে বর্ণমালা ব্যবহার করে কিছু লেখেনি তাই তার বেশ খানিকটা সময় লেগে গেল! রুহান খুব ভালো করে জানে বর্ণমালা ব্যবহার করে এই লেখা খুব বেশি মানুষ পড়তে পারবে না, তবুও তার মনে হলো এটা লিখে রাখা দরকার। খুব দরকার।
সে যে কত ক্লান্ত হয়েছিল সেটা সে নিজেই জানত না। রিদির মতোই বিছানায় শোয়া মাত্রই রুহান গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল।
গভীর রাতে রিদি আর রুহান তাদের দরজায় শব্দ শুনে চমকে জেগে উঠে। ভয়। পাওয়া গলায় রুহান জিজ্ঞেস করল, কে?
আমি গার্ড।
কী হয়েছে গার্ড?
একটা মেয়ে তোমাদের সাথে দেখা করতে এসেছে।
মেয়ে? রিদি আর রুহান অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকাল। এতো রাতে কোন মেয়ে তার সাথে দেখা করতে আসবে?
দরজা খুলতেই হুঁড়মুড় করে একটা মেয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকল। একটা চাদর দিয়ে তার পুরো শরীর ঢাকা, শীতে একটু একটু কাঁপছে। মেয়েটি অপ্রকৃতস্থের মতো তাদের দুজনের দিকে তাকায়। বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে যন্ত্রের মতো বলতে থাকে, রিদি? রুহান? রিদি? রুহান? রিদি? রুহান?
রুহান নিঃশ্বাস বন্ধ করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে। এই মেয়েটিকে সে চেনে। একজন সক্রেটিস। মেয়েটির নাম ক্ৰানা। এই মেয়েটির মাথায়। ইলেট্রড দিয়ে যখন সিস্টেম লোড করা হয়েছিল তখন সেখানে সে হাজির ছিল। রুহান মেয়েটিকে চিনতে পেরেছে কিন্তু মেয়েটি তাকে চিনতে পারে নি। চেনার কথা নয়–এরা সক্রেটিস, মাথায় স্টিমুলেশন দেবার আগে এরা কাউকে চেনে না।
রুহান তীক্ষ্ণ চোখে মেয়েটার হাতের দিকে তাকাল, একটা লাল লিভার শক্ত করে ধরে রেখেছে। লিভারটা সে চেনে, বিস্ফোরকে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্যে এই ধরনের লিভার ব্যবহার করা হয়।
ক্ৰানা একবার রিদি আর একবার রুহানের দিকে তাকিয়ে অনেকটা আপন মনে জিজ্ঞেস করে, রিদি? রুহান? রিদি?
রুহান বলল, হ্যাঁ। আমরা রিদি আর রুহান।
ক্রানা নামের মেয়েটা কিছুক্ষণ তাদের মুখের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে খুব ধীরে ধীরে তার শরীরের উপর থেকে চাদরটা সরাল, তারপর বলল, ক্রিভন আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছে। ক্ৰিভন? তোমরা চেনো ক্ৰিভনকে?