আমার এত বড় বড় জিনিস জানার কোনো সখ নেই রুহান। আমি শুধু জানি যদি এক্ষুনি এই লরিতে সবাই না ওঠো তাহলে কিন্তু কেউ পৌঁছাতে পারবে না।
রুহান এজেন্ট দ্রুচানের কথাটা না শোনার ভান করে বলল, এই পৃথিবীট। টিকে যাবে কারণ মানুষের ভেতরে এখনো মনুষ্যত্বটুকু বেঁচে আছে।
এজেন্ট দ্রুচান বিরক্ত হয়ে বলল, তুমি যে কী বাজে বকতে পারো রুহা। সেটা অবিশ্বাস্য।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায় পাহাড়ী পথ দিয়ে লরিটি ছুটে যাচ্ছে। সামনের ড্রাইভিং সিটে এজেন্ট দ্রুচানের পাশে বসেছে রিদি। পিছনে অন্য সবার সাথে বসেছে রুহান। রুহান পিছনের খোলা অংশ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। লরির ভেতরে চুপচাপ বসে আছে অন্য সবাই।
বসে থাকতে থাকতে রুহানের চোখে হঠাৎ একটু ঘুমের মতো এসেছিল। হঠাৎ করে তার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল, তার কোলের উপর রাখা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা কেউ একজন হ্যাচকা টান দিয়ে সরিয়ে নিয়েছে। রুহান মাথা ঘুরিয়ে দেখে মানুষটি ক্রিটিনা। সে অস্ত্রটা তার দিকে তাক করে ধরে রেখেছে, আবছা অন্ধকারেও বোঝা যায় তার চোখ ধকধক করে জ্বলছে। রুহান কোনো কথা না বলে স্থির চোখে ক্রিটিনার দিকে তাকিয়ে রইল।
ক্রিটিনা হিংস্র গলায় বলল, লরি থামাও।
কেন?
আমরা নেমে যাব।
কোথায় নেমে যাবে?
সেটা তোমার জানার প্রয়োজন নেই।
রুহান বলল, ক্রিটিনা, আমরা তোমাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি।
তোমাদের সাহায্যের কথা আমি খুব ভালো করে জানি! তোমরা হচ্ছ খুনে ৬াকাত ঠগ আর প্রতারক–
আমার কথা শোনো—
ক্রিটিনা চিৎকার করে বলল, আমি কোনো কথা শুনব না। লরি থামাও।
যদি না থামাই? তোমাকে আমি খুন করে ফেলব।
রুহান হাসার চেষ্টা করল, যদিও আবছা অন্ধকারে সেটা কেউ দেখতে পেল না। সে নরম গলায় বলল, খুন করে ফেলবে?
হ্যাঁ।
ঠিক আছে। করো খুন।
ক্রিটিনা হিংস্র গলায় বলল, আমাকে রাগানোর চেষ্টা কর না–
রুহান বলল, আমি তোমাকে মোটেও রাগানোর চেষ্টা করছি না, ক্রিটিনা আমি তোমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। তুমি বুঝতে চাইছ না। আমি তোমাকে বলেছি, তোমাদের আমরা তোমাদের গ্রামে নিয়ে যেতে যাচ্ছি–
মিথ্যে কথা বলবে না। ক্রিটিনা চিৎকার করে বলল, আমার সাথে মিথ্যে কথা বলবে না।
ঠিক আছে, আমি আর কথাই বলব না।
খুন করে ফেলব তোমাদের সবাইকে।
কীভাবে খুন করবে?
গুলি করে খুন করব।
তুমি কী আগে কখনো এরকম অস্ত্র ব্যবহার করেছ? তুমি কী জান কেমন করে গুলি করতে হয়?
ক্রিটিনাকে এক মুহূর্ত একটু ইতস্তত করতে দেখা যায়। ইতস্তত করে বলে, সব অস্ত্রই এক। আমি জানি ট্রিগার টানলেই গুলি হয়।
না। রুহান মাথা নাড়ল, নিরাপত্তার কিছু ব্যাপার থাকে। ট্রি। টানলেই গুলি হয় না। আমার কথা বিশ্বাস না করলে তুমি ট্রিগার টেনে দেখতে পার।
ক্রিটিনা ইতস্তত করে অস্ত্রটা বাইরে তাক করে ট্রিগার টানল, ঘট করে একটা শব্দ হলো কিন্তু কোনো গুলি হলো না। রুহান বলল, এখন আমার বা বিশ্বাস হলো? তুমি অস্ত্রটা আমার কাছে নিয়ে এসো, আমি তোমাকে দেখি দেই কেমন করে সেফটি লিভারটা টানতে হয়।
আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না।
ঠিক আছে, তাহলে অস্ত্রটা আমাকে দিতে হবে না। তুমি নিজেই কর। ডানপাশে উপরের লিভারটা টেনে নিজের দিকে আন।
ক্রিটিনা অনিশ্চিতের মতোন লিভারটি নিজের দিকে টেনে আনে। রুহান পরিতৃপ্তির মতো শব্দ করে বলল, চমৎকার! এখন তুমি ইচ্ছে করলে আমাকে গুলি করে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারবে। বিশ্বাস না করলে পরীক্ষা করে দেখ!
ক্রিটিনা অস্ত্রটা বাইরে তাক করে ট্রিগার টানতেই ভয়ঙ্কর শব্দ করে অস্ত্রটি গর্জন করে ওঠে। লরির ভেতরে বসে থাকা ছেলেমেয়েগুলো ভয় পেয়ে চিৎকার করে পিছনে সরে যায়। সামনে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা রিদি এবং দ্রুচান গুলির শব্দ শুনে কারণটা বোঝার জন্যে রাস্তার পাশে লরি থামিয়ে নেমে আসে। রিদি চাপা গলায় বলে, কী হয়েছে রুহান?
বিশেষ কিছু না। রুহান হালকা গলায় বলল, কেমন করে অস্ত্র চালান হয় তার একটা ছোট ট্রেনিং হচ্ছে।
রিদি অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল, তোমার মাথা খারাপ রুহাব। এটা কী ট্রেনিং দেবার সময়?
রুহান শব্দ করে হেসে বলল, ট্রেনিংয়ের সময় অসময় বলে কিছু নেই রিদি। তোমরা সেটা নিয়ে চিন্তা কর না। যাও লরি চালাতে থাক।
কিছুক্ষণের মধ্যে আবার লরি চলতে শুরু করে। লরির পেছনে বসে থেকে কিছুই হয়নি এরকম একটা ভঙ্গি করে রুহান শিস দিয়ে একটা সুর তোলার চেষ্টা করতে থাকে। ক্রিটিনা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমি কী লিভার আবার সামনে ঠেলে দেব?
তুমি যদি অস্ত্রটা এই মুহূর্তে ব্যবহার করতে না চাও তাহলে সেটাই নিরাপদ।
ক্রিটিনা লিভারটি ঠেলে দিয়ে অস্ত্রটা রুহানের দিকে এগিয়ে দেয়। বলে, নাও।
কী নেব?
এই অস্ত্রটা।
রুহান বলল, তোমার কাছে রাখ।
আমার কাছে রাখব?
হ্যাঁ।
কেন?
দুটি কারণে। এক, আমি চাই তুমি আমার কথা বিশ্বাস কর, যে সত্যিই আমরা তোমাদেরকে তোমাদের এলাকায় ফিরিয়ে দিতে চাই। দুই, আমার কাছে আরো একাধিক অস্ত্র আছে, তুমি যেহেতু অস্ত্র চালাতে শিখেই গেছ, এটা তোমার কাছে থাকলে আমাদের নিরাপত্তা বেশি হয়। যদি দরকার হয় তাহলে তুমিও এটা ব্যবহার করতে পারবে।
ক্রিটিনা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমি দুঃখিত, রুহান আমি যে তোমার কোনো কথা বিশ্বাস করি নি।