উপস্থিত মানুষগুলো উল্লাসের মতো এক ধরনের শব্দ করল। তারা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে সেরকম মনে হলো না, কোনো একটা বিষয় নিয়ে হৈ চৈ হচ্ছে সেটা নিয়েই আনন্দ!
কাছাকাছি ক্রিটিনা দাঁড়িয়ে ছিল, রুহান বলল, ক্রিটিনা তোমাকে কেউ বিক্রি করতে পারবে না। তোমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
ক্রিটিনা কোনো কথা না বলে স্থির চোখে রুহানের দিকে তাকিয়ে রইল। রুহান বলল, তুমি মুক্ত। তুমি যেখানে খুশি যেতে পার।
ক্রিটিনা ফিসফিস করে বলল, আমি তোমাকে ঘৃণা করি। অসম্ভব ঘৃণা করি।
রুহান চমকে ওঠে বলল, ঘৃণা করো? আমাকে?
হ্যাঁ। তুমি ভেবেছ আমি তোমাদের মতো মানুষদের চিনি না? খুব ভালো করে চিনি। গলায় একটা অস্ত্র ঝুলিয়ে তোমরা মনে করো সারা পৃথিবীটা তোমাদের। যা ইচ্ছা তাই করতে পার।
রুহান কয়েকবার চেষ্টা করে বলল, বিশ্বাস করো, আমি সেরকম কিছু ভাবছি না।
আমি জানি তুমি ঐ মানুষটার কাছ থেকে কেন আমাদের ছিনিয়ে নিয়েছ।
কেন?
তুমি এখন আমাদের অন্য কোথাও বিক্রি করবে।
না, ক্রিটিনা বিশ্বাস করো, তোমাদের আমি অন্য কোথাও বিক্রি করব না। তোমরা যেখানে খুশি যেতে পার। তোমরা স্বাধীন–
ক্রিটিনা হঠাৎ আনন্দহীন শুকনো হাসিতে ভেঙ্গে পড়ল। হাসতে হাসতে বলল, আমরা স্বাধীন?
হ্যাঁ।
আমরা স্বাধীন হয়ে এখন কোথায় যাব? বাইরে তোমার মতো হাজার হাজার মানুষ বসে আছে আমাদের ধরে নিতে! আমরা কোথায় যাব? কী করব?
তোমাদের গ্রামে যাবে!
আমাদের গ্রাম কত দূর তুমি জান? এরা সেই গ্রামে কী করেছে তুমি জান? কত বাড়ি পুড়িয়েছে, কত মানুষ মেরেছে তুমি জান?
আমি দুঃখিত ক্রিটিনা–
ক্রিটিনা হঠাৎ চিৎকার করে বলল, খবরদার, যেটা বিশ্বাস করো না সেটা মুখে উচ্চারণ করো না।
রুহান থতমত খেয়ে বলল, আমি কী বিশ্বাস করি না?
দুঃখিত হবার কথা বলো না। কারণ তোমরা দুঃখিত না। তোমরা আমাদের লুট করে নিয়ে এখন কোথাও বিক্রি করবে। আমি জানি–
বিশ্বাস করো ক্রিটিনা—
ক্রিটিনার চোখ দুটো আগুনের মতো জ্বলে উঠল। সে হিংস্র গলায় বলল, খবরদার, তুমি বিশ্বাস করার কথা মুখে আনবে না। আমি কাউকে বিশ্বাস করি না। কাউকে না।
১০. রিদি রুহানের দিকে এগিয়ে এসে
রিদি রুহানের দিকে এগিয়ে এসে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি খুব বিপদের মধ্যে পড়েছ।
রুহান একটু কষ্ট করে হেসে বলল, তোমার কী ধারণা?
আমার ধারণা তুমি এবং আমি দুজনেই খুব বিপদের মধ্যে পড়েছি। একজন মানুষের পুরো ব্যবসা তুমি লুট করে নিয়েছ সে কী এটা সহজভা। মেনে নেবে? নেবে না!।
আমি কিছু লুট করি নি। আমি এই মানুষগুলোকে মুক্ত করে দেবার চেষ্টা। করছিলাম।
রিদি শব্দ করে হেসে বলল, তুমি যাদেরকে মুক্ত করেছ তারাও তোমাকে বিশ্বাস করে নি, আর তুমি আশা করছ অন্যেরা বিশ্বাস করবে?
রুহান মাথা চুলকে বলল, কী করা যায় বুঝতে পারছি না।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে সরে যেতে হবে। সবাইকে নিয়ে।
কিন্তু সেটা কীভাবে করব?
ঠিক এরকম সময় তারা দেখতে পেল একজন মানুষ ভিড় ঠেলে তাদের দিকে আসছে। কাছাকাছি এলে তারা মানুষটিকে চিনতে পারল, এজেন্ট দ্রুচেন।
এজেন্ট দ্রুচেন কাছে এসে দুজনের হাত ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলল, অভিনন্দন। তোমাদের অনেক অনেক অভিনন্দন।
রুহান ভুরু কুঁচকে বলল, কেন? কীসের অভিনন্দন?
তোমরা দুজন মিলে এত বড় একটা সাপ্লাই লুট করে নিলে এটা কী সোজা কথা? কার কাছে বিক্রি করবে ঠিক করেছ কিছু? আমার পরিচিত কিছু খরিদ্দার আছে, খুব ভালো ব্যবসা করে। এখান থেকে পঞ্চাশ-ষাট কিলোমিটার দূরে থাকে, আমি তোমাদের সেখানে নিয়ে যেতে পারি। শতকরা দশ ভাগ কমিশন আমার, আমি আগে থেকে বলে রাখছি।
রুহান কিছু না বলে নিঃশব্দে এজেন্ট দ্রুচানের দিকে তাকিয়ে রইল। দ্রুচান বলল, কী হলো তুমি কথা বলছ না কেন?
রুহান তবু কোনো কথা বলল না। এজেন্ট দ্রুচান বলল, এর থেকে কম কমিশনে আমি কাজ করতে পারব না। অসম্ভব!
রুহান এবারেও কোনো কথা বলল না। দ্রুচান বলল, তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা কথার উত্তর দিচ্ছ না কেন? কত কমিশন দিতে পারবে?
রুহান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমরা কোনো কমিশন দিতে পারব না এজেন্ট দ্রুচান। তার কারণ আমরা এই মানুষগুলোকে বিক্রি করার জন্যে লুট করি নি! তাদের যেখান থেকে ধরে আনা হয়েছে আমরা সেখানে গিয়ে তাদের রেখে আসব।
এজেন্ট দ্রুচান অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে রুহানের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কী পাগল?
আমি বলেছি এই মানুষগুলোকে যেখান থেকে ধরে আনা হয়েছে আমরা তাদের সেখানে রেখে আসব।
এজেন্ট দ্রুচান একবার রিদির মুখের দিকে তাকাল তারপর মাথা ঘুরিয়ে আবার রুহানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা আমার সাথে ঠাট্টা করছ?
না, আমরা ঠাট্টা করছি না। আমরা সত্যি কথা বলছি।
এজেন্ট দ্রুচান তখনো বিষয়টা বুঝতে পেরেছে বলে মনে হলো না, মাথা চুলকিয়ে বলল, কিন্তু কেন?
রুহান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তার কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে মানুষ কখনো পণ্য হতে পারে না, একজন মানুষকে কখনো পণ্য হিসেবে বেচাকেনা করা যায় না।
এজেন্ট দ্রুচান বাধা দিয়ে বলল, কে বলেছে করা যায় না। সবাই করছে।
তাতে কিছু আসে যায় না। আমরা মনে করি একজন মানুষ কখনো অন্য মানুষকে বেচা-কেনা করতে পারে না।
এজেন্ট দ্রুচান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আসলেই সেটা যদি তোমাদের পরিকল্পনা হয়ে থাকে তাহলে তোমরা খুব বিপদের মধ্যে আছ!