কেমন করে স্টিমুলেশন দেয়?
মাথার পিছনে ইলেকট্রড লাগানো আছে সেখানে হাই ফ্ৰিকয়েন্সী পালস পাঠাতে হয়।
রুহানের শরীর কেমন যেন গুলিয়ে আসে, সে এক ধরনের অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে থাকে, তার বিশ্বাস হতে চায় না একজন মানুষকে অন্য একজন মানুষ এভাবে ব্যবহার করতে পারে।
মহিলাটি রুহানের বিস্ময়টি ধরতে পারল না, বেশ সহজ গলায় বলল, তুমি দেখতে চাও আমরা কেমন করে সিস্টেম লোড করি?
রুহানের একবার মনে হলো বলে না, সে দেখতে চায় না। কিন্তু কী হলো কে জানে, সে বলল, হ্যাঁ দেখতে চাই।
তাহলে এসো আমাদের সাথে।
পাহাড়ের মতো দুজন মানুষ ক্রানা নামের মেয়েটাকে প্রায় টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, তার পিছু পিছু অন্যেরা হাঁটতে থাকে। রুহান সবার পিছনে পিছনে হেঁটে আসে। সে নিজের ভেতরে কেমন জানি গভীর এক ধরনের বিষণ্ণতা অনুভব করে।
মাঝারি আকারের একটা ঘরের ঠিক মাঝখানে উঁচু একটা শক্ত টেবিলে ক্রানাকে শক্ত করে বেঁধে ফেলা হলো। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কিছু মনিটর লাগানো হয়েছে। ঘরের এক কোনায় বড় একটা যন্ত্রপাতির প্যানেল সেখানে ছোট করে চুল ছাটা মহিলাটি যন্ত্রপাতিগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে মধ্যবয়স্ক মানুষটি। বিশালদেহী মানুষ দুজন দরজার কাছে দুটি টুলে চুপচাপ বসে আছে, তাদের মুখ ভাবলেশহীন, দেখে মনে হয় তাদের চারপাশে কী ঘটছে সেটা তারা জানে না।
কিহি ক্রানার হাত ধরে রেখে ফিসফিস করে তার সাথে কথা বলছে, তাকে শান্তনা দিচ্ছে সাহস দিচ্ছে। ক্রানার চোখের দৃষ্টি অপ্রকৃতস্থ, এক ধরনের শূন্য দৃষ্টিতে সে উপরের দিকে তাকিয় আছে।
রুহান কিছুক্ষণ ক্ৰানার দিকে তাকিয়ে রইল, দৃশ্যটি তার কাছে অত্যন্ত নিষ্ঠুর বলে মনে হলো, সে হেঁটে ঘরের এক কোনায় বসানো যন্ত্রপাতিগুলোর কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ছোট করে চুল ছাটা মহিলাটি দক্ষ হাতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতিগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বলল, বিজ্ঞান অনেকদূর এগিয়েছিল। আমাদের কপাল খারাপ–পৃথিবীতে এরকম দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে গেল তা না হলে বিজ্ঞান নিশ্চয়ই আরো এগোত।
মধ্যবয়স্ক মানুষটি বলল, উঁহু। প্রকৃতি বাড়াবাড়ি সহ্য করো না। মানুষ বিজ্ঞান নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছিল তাই প্রকৃতি এটা বন্ধ করে দিয়েছে।
রুহান একটু অবাক হয়ে মধ্যবয়স্ক মানুষটির মুখের দিকে তাকাল, সে কী সত্যিই এটা বিশ্বাস করে?
মহিলাটি কয়েকটা সুইচ অন করে বলল, আমাদের এই যন্ত্রটা আছে বলে সক্রেটিসদের মাথায় সিস্টেম লোড করতে পারছি। ওদের বিক্রি করে কিছু ইউনিট কামাই করছি। যাদের নেই তারা কী করবে?
মধ্যবয়স্ক মানুষটা বলল, তারা আঙুল চুষবে। তারপর হা হা করে হাসতে লাগল যেন খুব বড় একটা রসিকতা করে ফেলেছে।
মহিলাটি মাথা তুলে চারদিকে তাকিয়ে বলল, সবাই রেডি? আমি তাহলে কাজ শুরু করি?
রুহান জিজ্ঞেস করল, এখন কী করবে?
মহিলাটি প্যানেলের একটা স্বচ্ছ খুপরিতে উজ্জ্বল একটা ক্রিস্টাল দেখিয়ে বলল, এই যে এই ক্রিস্টালটাতে পুরো সিস্টেম আছে। আমি ক্রানার ইলেকট্রডের ভিতর দিয়ে এটা মাথার ভেতরে পাঠাব।
তখন কী হবে?
মাথায় নতুন সিনান্স কানেকশন হবে-দরকার হলে তার পুরানো কানেকশন খুলে নেবে।
তাহলে কী হয়?
বলতে পার এই মেয়েটা একটা নতুন মানুষ হয়ে যাবে–আসলে ঠিক মানুষ না। একটা নতুন যন্ত্র।
রুহান বুকের ভেতর নিঃশ্বাস আটকে রেখে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে রইল। কী অবলীলায় কী ভয়ঙ্কর একটা কথা বলে দিল।
মহিলাটি একটা সুইচ টিপে দিতেই ঘরের মাঝখানে টেবিলে বেঁধে রাখা ক্ৰানার দেহটা ধনুকের মতো বেঁকে যায়, সে রক্ত শীতল করা কণ্ঠস্বরে আর্তনাদ করে ওঠে।
রুহান ক্রানার কাছে ছুটে গিয়ে বিস্ফারিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় তার শরীর দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে, চোখ দুটো মনে হচ্ছে কোঠর থেকে ঠেলে বের হয়ে আসবে।
রুহান আর্তস্বরে চিৎকার করে বলল, বন্ধ করো। বন্ধ করো এক্ষুনি!
ছোট করে ছাটা চুলের মেয়েটি অবাক হয়ে বলল, বন্ধ করব? কী বন্ধ করব?
যেটা করছ সেটা। দেখছ না মেয়েটা যন্ত্রণায় কী করছে?
মহিলাটি মধ্যবয়স্ক মানুষটির দিকে একবার তাকাল তারপর খানিকটা হতাশার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল, যন্ত্রণা ছাড়া মানুষ সিস্টেম লোড করবে কেমন করে? তোমাকে বলেছি না সিনান্স কানেকশান উপড়ে ফেলা হচ্ছে
কতক্ষণ থাকবে এরকম?
এই তো কিছুক্ষণ। ধৈর্য ধরো দেখবে ঠিক হয়ে যাবে।
রুহান আবার ক্রানার কাছে ফিরে গেল, কিহি তার দুই হাত শক্ত করে ধরে তার সাথে নিচু গলায় কথা বলছে, ক্রানা, সোনামণি আমার। একটু ধৈর্য ধরো, একটুখানি সহ্য করো, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। এই যে দেখ আমি তোমার পাশে আছি, তোমার দিকে তাকিয়ে আছি, তোমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছি। এই দেখ আমি ঈশ্বরের কাছে তোমার জন্যে প্রার্থনা করছি–যেন তোমার সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। ক্রানা সোনামণি আমার
রুহান নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইল এবং দেখতে পেল খুব ধীরে ধীরে ক্রানার শরীর দুমড়ে মুচড়ে উঠতে উঠতে এক সময় শান্ত হয়ে আসে। তার সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। সে মুখ হা করে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে নিতে চোখ খুলে তাকাল। কিহি ক্ৰানার মুখের কাছাকাছি নিজের মুখটি নিয়ে নরম গলায় জিজ্ঞেস করল, এখন তোমার কেমন লাগছে ক্ৰানা।