রুকাসের খুব কাছাকাছি এসে ক্লডিয়ান স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। রুকাস বলল, তুমি ক্লডিয়ান?
হ্যাঁ।
কী আশ্চর্য ব্যাপার। আমি আর তুমি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি, আমাদের সময়ে নয়, দুই সহস্র বছর অতীতে।
আমি তোমাকে হত্যা করতে এসেছি রুকাস।
আমি জানি। রুকাস শান্ত গলায় বলল, আমাকে আগে কখনো কেউ হত্যা করতে পারে নি ক্লডিয়ান। প্রকৃতি নিজের হাতে আমাকে রক্ষা করেছিল। আমার মৃত্যু হলে সময় পরিভ্রমণের দ্বিতীয় সূত্রটি লঙ্ঘিত হত। এখন সেটি আর সত্যি নয়। আমার দায়িত্ব আমি শেষ করেছি ক্লডিয়ান। এখন সম্ভবত তুমি আমাকে হত্যা করতে পারবে। তবে তোমাকে দেখার জন্যে আমার একটু কৌতূহল হচ্ছে।
ক্লডিয়ান ধীরে ধীরে হাতের অস্ত্র উদ্যত করে। শান্ত গলায় বলে, রুকাস, তুমি অস্ত্র বের কর।
আমি ফিসফিস করে কিরীণাকে বললাম, কিরীণা, চোখ বন্ধ কর কিরীণা।
কিরীণা চোখ বন্ধ করল। আমি বললাম, মনে কর তুমি দাঁড়িয়ে আছ সমুদ্রতীরে, সমুদ্রের বাতাসে তোমার চুল উড়ছে। তোমার কাপড় উড়ছে। তোমার কাছে দাঁড়িয়ে আছে একটা শিশু, তার বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে ট্রন। শিশুটি সেটা জানে না, সে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে, অপেক্ষা করছে তার বাবার জন্যে। শিশুটির মা তুমি, তোমার বুক ভেঙে যাচ্ছে দুঃখে, তবু দুঃখ বুকে চেপে তুমি ডাক শিশুটিকে, করুণ সুরে, ভয়ঙ্কর করুণ সুরে। ডাক কিরীণা, ডাক। আমি তীব্র স্বরে বললাম, তোমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে ডাক সেই দুঃখী শিশুকে
কিরীণা তার বহু-পরিচিত গানটি গাইতে শু করল। সমুদ্রের বাতাসে ঝাউবনের যে করুণ সুর শোনা যায়, সেই সুরের সাথে মিলিয়ে, সুরেলা করে।
বড় দুঃখের গান, আমার চোখ ভিজে সে, আমি ঝাঁপসা চোখে দেখতে পাই পাথরের মূর্তির মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্লডিয়ান। নিশিরাতে সমুদ্রের বালুবেলায় মুগ্ধ হয়ে ক্লডিয়ান শুনছে এক নিষিদ্ধ সংগীত। আমি দেখলাম থরথর করে কাঁপছে কুড়িয়ান, কাঁপতে কাঁপতে সে কোনোভাবে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করছে, পারছে না। দুই হাতে সে নিজের কান চেপে ধরল, তারপর হঠাৎ হাঁটু ভেঙে পড়ে গেল নিচে।
রুকাস তার হাতের রিভারটি উদ্যত করে এগিয়ে যায় ক্লডিয়ানের দিকে, ফিসফিস করে বলে, আমি ইচ্ছে করলে তোমাকে হত্যা করতে পারি ক্লডিয়ান, ইচ্ছে করলেই পারি। কিন্তু আমি করব না। কেন করব না জান? কারণ তুমি দুর্বল। তুমি মহাশক্তিশালী বায়োবট অধিপতি নও ক্লডিয়ান, তুমি দুর্বল এক জন মানুষ। তুমি এক জন মানুষ, আমার মতো এক জন মানুষ। মানুষ হয়ে মানুষকে হত্যা করা যায় না।
রুকাস ক্লডিয়ানের হাত ধরে টেনে তুলে বলল, ওঠ ক্লডিয়ান।
ক্লডিয়ান খুব ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। নিশিরাতে বালুবেলায় অসংখ্য বায়োবট মূর্তির মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
শেষ কথা
সন্ধেবেলা সমুদ্রের তীর দিয়ে আমি আর কিরীণা হেঁটে যাচ্ছি। আমাদের সামনে দিয়ে ছুটে যাচ্ছে আমাদের প্রথম সন্তান, রুকাস। অসম্ভব দুরন্ত শিশু, যার নামে তার নাম রেখেছি, তার সাথে কোনো মিল নেই।
কিরীণার গর্ভে আমাদের দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে হলে তার নাম রাখব ইরিনা, ছেলে হলে ক্লডিয়ান।