এখানে রাত এবং ভোর বলে কিছু নেই ম্যাঙ্গেল ক্বাস। কারো জন্যে পুরোটাই রাত, কারো জন্যে পুরোটাই সকাল।
তুমি কী বললে?
বিশেষ কিছু বলি নি আর আত্মবিশ্বাসের কথাটা সত্যি। আমি ঠিক করেছি জীবনটা খুব সহজভাবে নেব। সিদ্ধান্তটা নেবার পর হঠাৎ করে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে।
সহজভাবে?
হ্যাঁ। যার অর্থ বেঁচে থাকতেই হবে এরকম কোনো গো আমার মাঝে নেই। তার অর্থ বুঝতে পারছ?
ম্যাঙ্গেল ক্বাস কঠিন মুখে বলল, তুমি কোনটা বুঝাতে চাইছ সেটা হয়ত বুঝতে পারি নি।
আমারও তাই ধারণা। আমি বোঝাতে চাইছি যে আমার থেকে সাবধান। যে মারা যেতে প্রস্তুত তার থেকে ভয়ংকর আর কিছু নেই। আমি সুর পাল্টে বললাম, যা-ই হোক ওসব ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কাজ নেই, তার থেকে চলো দিনটি শুরু করার আগে ভালো কিছু খাওয়া যাক। আমার কাছে চমৎকার কিছু পানীয় আছে।
ম্যঙ্গেল ক্বাস সর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ কী একটা ভাবল তারপর বলল, চল।
তুমি যেরকম আমার অতিথি, মিত্তিকাও আমার অতিথি। তাকে ডেকে আনলে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?
না নেই।
চমৎকার।
মহাকাশযানের অধিনায়কের বিশেষ খাবার এবং বিশেষ পানীয় থাকা সত্ত্বেও আমাদের খাবারের অনুষ্ঠানটি মোটেও আনন্দদায়ক হলো না। মিত্তিকা চমৎকার একটি পোশাক পরে এলেও ম্যাঙ্গেল ক্বাসের সামনে বসে সে প্রায় কিছুই খেতে পারল না। ভরশূন্য পরিবেশে খাবার বিশেষ পদ্ধতির সাথেও সে পরিচিত নয়— ব্যাপারটি তার জন্যে বেশ কঠিন।
আমরা নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করলাম, ম্যঙ্গেল ক্বাস হাইব্রিড মানুষ হলেও তাকে খেতে হয়, তাকে নিঃশ্বাস নিতে হয়। আমি এই ব্যপারটি নিশ্চিত হতে চাইছিলাম। খাওয়ার পর আমি এবং ম্যাঙ্গেল ক্বাস নিয়ন্ত্রণ প্যানেলের উপর। ঝুঁকে পড়লাম— সে ঠিক কোথায় যেতে চাইছে সেটি আমার জানা প্রযোজন। হোয়াইট ডোয়ার্ফ২৬ জাতীয় একটা নক্ষত্রের কাছাকাছি কিছু বড় গ্রহ রয়েছে তার একটি উপগ্রহের সাথে সে যোগাযোগ করছে বলে দাবি করল। আমি অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললাম, অসম্ভব। যে-কোনো মানুষ ঐ গ্রহ উপগ্রহ থেকে দূরে থাকবে। ঐগুলো হচ্ছে অনাবিষ্কৃত অঞ্চল। গ্যালাক্টিক তথ্যকেন্দ্রে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে যে এই অঞ্চলে বুদ্ধিমান প্রাণের বিকাশ হয়েছে।
ম্যাঙ্গেল ক্বাস তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলল, আমার কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর প্রয়োজন নেই, আমার প্রয়োজন আমার দলের সকল মানুষকে। তারা যথেষ্ট বুদ্ধিমান।
বুদ্ধি ব্যাপারটি কী সেটা নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে, আমি সেই বিতর্কে যেতে চাচ্ছি না, আমি মেনে নিচ্ছি তোমার দলের মানুষেরা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। কিন্তু এই অঞ্চলের মহাজাগতিক প্রাণী তোমার দলের মানুষ থেকেও বেশি বুদ্ধিমান হতে পারে। সেখানে উপস্থিত হওয়া নিরাপদ না-ও হতে পারে।
ম্যাঙ্গেল ক্বাস আমার দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে বলল, নিরাপত্তার ব্যাপারটি আমি তোমার কাছ থেকে শিখতে চাইছি না ইবান।
আমি সাথে সাথে হাত তুলে বললাম, ঠিক আছে, আমি সে-ব্যাপারে কোনো কথা বলছি না।
চমৎকার। তুমি তাহলে মহাকাশযানের গতিপথ পরিবর্তন কর। আগামী আটচল্লিশ ঘণ্টার মাঝে আমরা ঐ এলাকায় পৌঁছে যেতে চাই।
ফোবিয়ানের জ্বালানি নিয়ে একটা সমস্যা হতে পারে—
সেটি আমার সমস্যা নয়।
বেশ।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে কাজ শুরু করে দিলাম। ফোবিয়ানের মূল তথ্যকেন্দ্রে কিছু গোপন সংখ্যা প্রবেশ করিয়ে তার গতিপথ পাল্টে দেয়ার জন্যে নির্দিষ্ট কোডে নির্দেশ দিতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণের মাঝেই ফোবিয়ানের শক্তিশালী ইঞ্জিন গর্জন করে উঠল।
৫. ম্যাঙ্গেল ক্বাস
ম্যাঙ্গেল ক্বাস তার দলবলকে সংগ্রহ করার জন্যে যে গ্রহটিকে ঘিরে ফোবিয়ানের কক্ষপথ নির্দিষ্ট করল, সেই গ্রহটিকে আমার খুব অপছন্দ হলো। এই কুৎসিত বিশাল গ্রহটির যে উপগ্রহ থেকে সে তার সঙ্গীসাথির সংকেত পেয়েছে বলে দাবি করল সেই উপগ্রহটিকে আমার অপছন্দ হলো আরো বেশি। একটি নির্দিষ্ট গ্রহ বা উপগ্রহ সম্পর্কে ব্যক্তিগত ভালো লাগা না-লাগার কোনো গুরত্ব নেই, কিন্তু শুরু থেকেই এই গ্রহ এবং উপগ্রহ সম্পর্কে আমার ভিতরে একধরনের অশুভ অনুভূতির জন্ম হয়ে গেল। আমি ব্যাপারটি গোপন করার কোনো চেষ্টা না করে ম্যাঙ্গেল ক্বাসকে বললাম, তুমি তোমার দলের লোকজনের অবস্থান ঠিক করে কো-অর্ডিনেট জানিয়ে দাও, আমি স্কাউটশিপ পাঠিয়ে তাদেরকে আনার ব্যবস্থা করে দিই।
ম্যাঙ্গেল ক্বাস সর চোখে আমার দিক তাকাল, বলল, তুমি নিশ্চয়ই আমাকে নির্বোধ বিবেচনা কর নি।
আমি মাথা নাড়লাম এবং বললাম, না করি না। কিন্তু এই উপগ্রহটিকে আমার খুব অপছন্দ হয়েছে, গ্যালাক্টিক তালিকায় এর কোনো নাম নেই, বিদঘুটে সংখ্যা দিয়ে পরিচয় দেয়া হয়েছে। এটি অস্থিতিশীল এবং বিস্ফোরণমুখ। আমি এখানে যেতে চাই না।
তুমি যেতে চাও কি না-চাও সেটি বিবেচনার মাঝে আনার প্রয়োজন নেই। আমি চাই কি না-চাই সেটাই গুর ত্বপূর্ণ।
তুমি কী চাও?
আমার নিরাপত্তার খাতিরে আমি কখনোই তোমাকে আলাদা হতে দেব না। কাজেই আমরা যে স্কাউটশিপ নিয়ে এই উপগ্রহে নামব সেখানে তুমি থাকবে। মিত্তিকা নামের সেই মেয়েটিও থাকবে।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেললাম, আমি যদি একজন দস্যু হতাম আমিও ঠিক এধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে কোথাও এক পা আগ্রসর হতাম না।