“কীভাবে শেষ চেষ্টা করবে?”
“এটমিক ব্লাস্টার।”
নাহার আর শামীম একসাথে ভয় পাওয়া গলায় চিৎকার করে উঠল, “এটমিক ব্লাস্টার?”
“হ্যাঁ। এখন আর মেপে মেপে স্যাম্পল নেয়ার সময় নেই। এটমিক ব্লাস্টার দিকে এলিয়েনটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিব, তখন তার ছিন্নভিন্ন অংশটা হবে আমাদের স্যাম্পল।”
শামীম আর নাহার এমনভাবে ন্যাড়া মাথা বিদেশিটার দিকে তাকিয়ে রইল যে দেখে মনে হলো তারা তার কথা বুঝতে পারছে না। শামীম খানিকক্ষণ ইতস্তত করে বলল, “কিন্তু এলিয়েনটা শক্তিবলয়ের ভেতর ঢুকে গেছে, সেখানে যে পরিমাণ এনার্জি তোমার এটমিক ব্লাস্টারের প্লিন্টার তো ভেতরে ঢুকবে না।”
বিদেশিটা হিংস্র মুখে বলল, “তাকে শক্তিবলয়ের বাইরে আনতে হবে।”
“কীভাবে বাইরে আনবে?”
বিদেশিটা তিতুনিকে দেখিয়ে বলল, “এই নির্বোধ মেয়েটাকে দিয়ে।”
নাহার ইতস্তত করে বলল, “কীভাবে?”
ন্যাড়া মাথা রিক গার্নার বলল, “সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও।” তারপর অন্যদের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল, “এটমিক রাস্টার বের করে পজিশান নাও। এলিয়েনটাকে লেজার লক করো। আর এই নির্বোধ মেয়েটাকে খুলে দাও।” কথা শেষ করে সে তার জ্যাকেটের ভেতর হাত ঢুকিয়ে একটা ছোট কালো রিভলবার বের করে আনল। সেটা তিতুনির মাথার দিকে তাক করে বলল, “নির্বোধ মেয়ে, আমি আজকে তোমাকে জন্মের মতো শিক্ষা দিব। তোমার চৌদ্দ গুষ্টি সেটা মনে রাখবে।”
.
তিতুনিদের বাসার সামনে খোলা জায়গাটাতে এলিয়েন তিতুনি দাঁড়িয়ে আছে, তাকে ঘিরে একটা নীল আলো। সেই আলোটা মাটি থেকে শুরু করে একেবারে আকাশের দিকে উঠে গেছে। নীল আলো থেকে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ ঝলক বের হয়ে আসছে, একটা ভোঁতা শব্দ মাঝে মাঝে বাড়ছে মাঝে মাঝে কমছে। আলোটা যেখানে মাটিতে এসে নেমেছে সেই জায়গাটি আগুনের মতো গনগনে গরম, একধরনের পোড়া গন্ধে বাতাসটা ভারী হয়ে আছে। নীল আলোটি তীব্র নয়, কেউ বলে দেয়নি কিন্তু সবাই বুঝতে পারছে এই নীল আলোর মাঝে অচিন্তনীয় একধরনের শক্তি আটকা পড়ে আছে, সেই শক্তিটুকু এই এলিয়েন মেয়েটিকে রক্ষা করছে, পৃথিবীর কারো সাধ্যি নেই এখন তাকে স্পর্শ করে।
আবু আর আম্মু হতচকিতের মতো এলিয়েন তিতুনির দিকে তাকিয়ে ছিলেন, টোটন বুঝিয়ে দেবার পরও বুঝতে পারছিলেন না। কেমন করে তাদের মেয়ে হঠাৎ এলিয়েন হয়ে গেল। তাহলে তাদের আসল মেয়ে এখন কোথায়? কেন সে ট্রেইলারের ভেতর থেকে বের হয়ে আসছে না? আম্মু একবার ট্রেইলারের দরজা দিয়ে ভেতরে দেখার চেষ্টা করলেন, তারপর এলিয়েন তিতুনির দিকে তাকিয়ে বললেন, “তিতুনি মা, তুই চলে যাচ্ছিস কেন? থেকে যা।”
টোটনও চিৎকার করে বলল, “হ্যাঁ। তিতুনি তুই থেকে যা। এই জীবনে তোকে আর কোনোদিন জ্বালাব না। খোদার কসম।”
আম্মু বললেন, “তুই তো পুরোপুরি তিতুনি। আমার যদি একটা তিতুনি থাকতে পারে তাহলে দুটি তিতুনি কেন থাকতে পারবে না?”
এলিয়েন তিতুনি নীল আলোর শক্তিবলয়ের ভেতর থেকে বলল, “আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানে আমার ফিরে যেতে হবে, সেখানে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তাছাড়া
এলিয়েন তিতুনি একটু থামল, তারপর বলল, “তাছাড়া পৃথিবীর মানুষ ভালো যন্ত্র খুব বেশি তৈরি করতে পারেনি কিন্তু অনেকগুলি খুব খারাপ খারাপ যন্ত্র তৈরি করেছে। ঐ দেখো একটা খারাপ যন্ত্র বের করে আনছে আমাকে গুলি করার জন্য।”
সবাই মাথা ঘুরিয়ে তাকাল, অবাক হয়ে দেখল, মেশিনগানের মতো একটা যন্ত্র টেনে নামিয়ে আনছে ট্রেইলারের ভেতর থেকে।
আম্মু-আবু চিৎকার করে উঠলেন, বললেন, “সর্বনাশ।”
এলিয়েন তিতুনি বলল, “না, আম্মু-আব্বু কোনো ভয় নেই। এই শক্তিবলয়ের ভেতরে আমাকে কিছু করতে পারবে না।” কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে সে দেখল ট্রেইলারের দরজা দিয়ে মাথা ন্যাড়া রিক গার্নার তিতুনির চুলের মুঠি ধরে তাকে টেনে বের করে আনছে, তার অন্য হাতে কুচকুচে কালো ছোট একটা রিভলবার। রিভলবারটি সে তিতুনির মাথায় ধরে রেখেছে। ট্রেইলারের দরজায় দাঁড়িয়ে সে হিংস্র গলায় চিৎকার করে ইংরেজিতে বলল, “সরে যাও সবাই, খবরদার। খুন করে ফেলব।”
আম্মু একটা আর্তচিৎকার করে ছুটে যেতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু কোথা থেকে সামরিক পোশাক পরা একজন মানুষ এসে প্রথমে আম্মুকে তারপর আব্বকে ধরে ফেলল।
পাকা চুলর মানুষটা এটমিক ব্লাস্টারটা তার তিনটা পায়ের উপর দাঁড় করিয়ে সেটা চালু করে দিয়েছে। ভেতর থেকে একটা চাপা গুঞ্জনের সাথে সাথে লাল রঙের লেজারের আলো এলিয়েন তিতুনিকে আলোকিত করে ফেলে। পাকা চুলের বব ক্লাইড চিৎকার করে বলল, “লক ইন কমপ্লিট। গেট রেডি।”
ন্যাড়া মাথার মানুষটা তিতুনির চুলের মুঠি ধরে ট্রেইলারের সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নিচে নেমে আসে। তিতুনির চোখে-মুখে একটা অবর্ণনীয় আতঙ্ক। চুলের মুঠি ধরে একটা ঝাঁকুনি দিতেই তার মুখে একটা যন্ত্রণার ছাপ পড়ল। ন্যাড়া মাথা রিক গার্নার হুংকার দিয়ে বলল, “ইউ ব্লাডি এলিয়েন। দ্যাখ তোর মানুষ বন্ধুর কী অবস্থা। তোর সাথে দেখা হয়েছিল বলে সে এখন তোর সামনে খুন হয়ে যাবে।”
আম্মু চিলের মতো একটা চিৎকার করলেন, তাকে ধরে রাখা মানুষটা সাথে সাথে খপ করে আম্মুর মুখ চেপে ধরল।