টিশটাশ ডক্টর নাহারকে এখন খুব টিশটাশ দেখাচ্ছে না, সে একটু ভয়ে ভয়ে বলল, “রিক গার্নার আর বব ক্লাইড তোমাকে অচেতন করার জন্য তোমার শরীরে রিটাটিল পুশ করার কথা চিন্তা করছেন।”
তিতুনি বলল, “তুমি এই বুড়া আর টাক্কুকে বলো কাজটা ভালো হবে না।”
“কেন? কেন ভালো হবে না?”
“আমি তাহলে তোমাদের সব যন্ত্রপাতি ভেঙে গুঁড়া করে দেব।” তিতুনির কথা শেষ হবার আগেই ঠাস ঠাস শব্দ করে কয়েকটা মনিটর ফেটে গেল। দেওয়ালে লাগানো কয়েকটা যন্ত্র রীতিমতো বিস্ফোরণ করে সত্যি সত্যি খুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল। ট্রেইলারের ভেতরে কালো ধোঁয়া আর পোড়া গন্ধে ভরে যায়।
ড. নাহার বুকে হাত দিয়ে বলল, “হায় খোদা!”
বিদেশি দুইজন একজন আরেকজনের হাত ধরে বলল, “ও মাই গড!”
মানুষগুলোকে দেখে তিতুনির হাসি পেয়ে যায়, কিন্তু সে হাসল না। মুখ শক্ত করে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। এলিয়েন তিতুনি তাকে ছেড়ে যায়নি-ট্রেইলারের বাইরের থেকেও ভেতরে কী হচ্ছে। সেটা লক্ষ করছে। সে যেটাই বলছে সেটাই করে ফেলছে। বুঝিয়ে দিচ্ছে তাকে নিয়ে কোনো দুই নম্বরী কাজ করা চলবে না।
সবাই যখন ভয়ে ভয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে তখন ট্রেইলারের এক কোনা থেকে একজন ইংরেজিতে বলল, “খুব আজব একটা জিনিস হচ্ছে।”
ন্যাড়া মাথা রিক গার্নার শুকনো গলায় জানতে চাইল, “কী হচ্ছে?”
“যন্ত্রপাতিগুলো উল্টাপাল্টা কাজ করছে।”
“কী রকম উল্টাপাল্টা?”
“মনে হচ্ছে কমিউনিকেশান্স মডিউলে কোনো কন্ট্রোল নাই। পুরো ট্রেইলারের সব যন্ত্রপাতি থেকে পাওয়ার নিয়ে যাচ্ছে।”
“পাওয়ার নিয়ে কী করছে?”
“এন্টেনা দিয়ে একটা সিগন্যাল পাঠাচ্ছে।”
“কী রকম সিগন্যাল?”
“মনে হচ্ছে কোনো একধরনের সংখ্যার সিকোয়েন্স।”
ট্রেইলারের সব যন্ত্রপাতি থেকে পাওয়ার নিয়ে নেবার কারণে যন্ত্রপাতিগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। ট্রেইলারের আলোও আস্তে আস্তে কমে কেমন জানি নিবু নিবু হয়ে আসে।
কে যেন জিজ্ঞেস করল, “ক হচ্ছে এখানে?”
মাথা ন্যাড়া বিদেশিটা বলল, “মনে হয় এলিয়েনটা আমাদের এন্টেনা দিয়ে তার মাদারশিপের সাথে যোগাযোগ করছে।”
যদিও বিদেশিদের উচ্চারণ আর কথা বুঝতে তিতুনির সমস্যা হচ্ছিল কিন্তু এই কথাটা সে বুঝতে পারল এবং বুঝে সে চমকে উঠল। এলিয়েন তিতুনি তার মাদারশিপের সাথে যোগাযোগ করছে, তাহলে কি সে এখন চলে যাবে? আগেই বলেছিল পৃথিবীতে সে যে এসেছে সেটা সে জানাজানি করতে চায় না। এখন সেটা জানাজানি হয়ে গেছে, এখন নিশ্চয়ই আর থাকবে না। নিশ্চয়ই চলে যাবে। কখন চলে যাবে? কীভাবে চলে যাবে? সে চলে যাবার পর তার কী হবে?
ঠিক তখন মনে হলো ট্রেইলারের বাইরে একটা বাজ পড়ল। প্রচণ্ড শব্দে চারিদিক কেঁপে উঠল, বিজলির নীল আলোতে চারপাশ ঝলসে ওঠে। কোনো মেঘ নেই বৃষ্টি নেই কিন্তু তার মাঝে পরিষ্কার বজ্রপাত। বজ্রপাত হলে নীলাভ আলো একবার ঝলসে ওঠার পর শেষ হয়ে যায়, কিন্তু এবারে শেষ হলো না। নীল আলো ঝলসাতে লাগল আর বিচিত্র একধরনের শব্দ শোনা যেতে লাগল। ট্রেইলারের জানালা দিয়ে ভেতরে সেই আলো খেলা করতে থাকে।
ট্রেইলারের দরজা খুলে সবাই বাইরে তাকায় এবং তিতুনি শুনতে পেল, পাকা চুলের বিদেশিটা চিৎকার করে বলল, “ও মাই গুডনেস!”
কী দেখে বিদেশিটা চিৎকার করেছে তিতুনি দেখতে পাচ্ছিল না, তাকে যন্ত্রপাতি বোঝাই চেয়ারটাতে বেঁধে রেখেছে বলে সে নড়তেও পারছিল না। ট্রেইলারের দরজা দিয়ে বাইরের দৃশ্যটি দেখে সবাই আবার ভেতরে এসে তিতুনিকে ঘিরে দাঁড়াল। শামীম হিসহিস করে বলল, “তুমি এলিয়েন না। তুমি মানুষ। তুমি আমাদের ধোকা দিয়েছ।”
ওরা হঠাৎ করে সেটা কেমন করে বুঝতে পারল তিতুনি এখনো জানে না। কিন্তু বিষয়টা যখন জেনেই গিয়েছে তখন সেটা আর গোপন রাখার কোনো অর্থ হয় না। তিতুনি মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ। আমি মানুষ। অন্যজন এলিয়েন।”
“তুমি আমাদের সে কথাটা আগে কেন বলো নাই?”
“কেন বলব? তোমরা এত বড় বড় বৈজ্ঞানিক, তোমরা কেন নিজেরা সেটা বের করতে পারো না?”
নাহার প্রায় হিংস্র গলায় বলল, “তুমি মানুষ হয়ে মানুষের পক্ষে থাকলে না? তুমি মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এলিয়েনের পক্ষে গেলে?”
তিতুনি রেগে গিয়ে বলল, “হ্যাঁ গিয়েছি, আরো একশ’বার যাব।”
“কেন?”
“কারণ সে তোমার কাছে এলিয়েন। আমার কাছে মানুষ। খালি মানুষ না, সে পুরোপুরি আমি। আমি আমার পক্ষে থাকব না কি তোমার পক্ষে থাকব?”
নাহার কী বলবে বুঝতে পারছিল না, তিতুনি বলল, “এখন তো জেনে গেছ কে মানুষ কে এলিয়েন। সমস্যাটা কী?”
“দেরি হয়ে গেছে।”
তিতুনি চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল, “সে কি চলে গেছে?”
“না, এখনো যায়নি। কিন্তু সে একটা শক্তিবলয়ের মাঝে ঢুকে গেছে, তাকে আর আমরা ছুঁতে পারব না।”
তিতুনি তার মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “আমাকে ছেড়ে দাও। আমি ওকে দেখব-কথা বলব।”
নাহার বিদেশি দুটোর দিকে তাকিয়ে বলল, “এখন এই মেয়েটাকে শুধু শুধু আটকে রেখে কী হবে? একে ছেড়ে দিই?”
ন্যাড়া মাথা বিদেশিটার মুখটা দেখতে দেখতে কেমন জানি নিষ্ঠুর হয়ে যায়। সে মাথা নাড়ল, বলল, “না। এখন এই মেয়েটা হচ্ছে আমাদের শেষ অস্ত্র। এই মেয়েটাকে ব্যবহার করে আমাদের শেষ চেষ্টা করতে হবে।”