অন্য-তিতুনি মাথা নাড়ল, স্বীকার করে নিল যে এটা হতে পারে না। টোটন তখন ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “তুই দেখেছিস এইবার কতগুলি এইরকম অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে?”
অন্য-তিতুনি মাথা নাড়ল, বলল, “দেখেছি।” তারপর টোটনের দিকে তাকিয়ে বলল, “এখান থেকে তুমি কী বলতে চাইছ ভাইয়া?”
“আমি বলতে চাইছি–”, টোটন মাথা চুলকে বলল, “আমি জানি কথাটা খুবই হাস্যকর শোনাবে, তবুও বলি। আমি বলতে চাইছি। আসল তিতুনিকে বাসায় রেখে এলিয়েন তিতুনি আমাদের সাথে ঢাকা গিয়েছিল।”
অন্য-তিতুনির মুখে একটু হাসি ফুটে ওঠে, “মানে—”
“মানে তুই হচ্ছিস এলিয়েন। আর ট্রেইলারের ভিতর আসল তিতুনি এখন ভুজুংভাজুং করে সবাইকে বোকা বানাচ্ছে।”
অন্য-তিতুনি কিছুক্ষণ টোটনের দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাইয়া, তুমি ঠিকই ধরেছ। আমি আসলে এলিয়েন।”
টোটন কেমন যেন শক খাওয়ার মতো চমকে উঠল, বলল, “আসলেই তুই-মানে তুমি-মানে আপনি–”
অন্য-তিতুনি হি হি করে হেসে বলল, “ভাইয়া, আমাকে তোমার আপনি করে বলতে হবে না। আমি আসলে একেবারে হান্ড্রেড পার্সেন্ট তিতুনির কপি, বলতে পারো আগে একটা তিতুনি ছিল এখন দুইটা।”
টোটন কেমন যেন বিস্ফারিত চোখে অন্য-তিতুনির দিকে তাকিয়ে রইল, বলল, “তার মানে আসলে আমি বিছানায় পিশাব করি নাই-তুমি মানে তুই আমাকে পিশাব করিয়েছিস?”
“হ্যাঁ। আমি করিয়েছি।”
টোটন চোখ দুটো বড় বড় করে বলল, “তার মানে অন্য একটা গ্যালাক্সি থেকে আসা একটা এলিয়েনের বড় কোনো কাজ নাই? তার কাজ হচ্ছে।”
অন্য-তিতুনি হি হি করে হেসে বলল, “ভাইয়া, তুমি একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছ। এখানে আসার পর এলিয়েনটা আর এলিয়েন নাই, সে তিতুনি হয়ে গেছে। তিতুনির মতো দেখতে একটা প্রাণী না, পুরোপুরি তিতুনি। এখানে তিতুনির যে কাজ সেটা হয়ে গেছে এলিয়েনের কাজ। আসল তিতুনি অনেক কিছু পারে না, আমি পারি। এই হচ্ছে পার্থক্য।” কথা বলতে বলতে হঠাৎ এলিয়েন তিতুনি থেমে গেল। হাত তুলে বলল, “এক সেকেন্ড।”
“কী হয়েছে?”
“ট্রেইলারের ভেতরে ঐ ফাজিল মানুষগুলো তিতুনিকে একটা বাজে ইনজেকশান দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি ইনজেকশানটাকে নিউট্রালাইজ করে দিই।”
টোটন ভয়ে ভয়ে বলল, “কী ইনজেকশন?”
“ওরা বলছে টুথ সিরাম। এটা দিলে মনের জোর ভেঙে যাবে, যেইটাই বলবে তিতুনিকে সেটাই করতে হবে। ফাজলেমি পেয়েছে?”
এক সেকেন্ড পরে এলিয়েন তিতুনি টোটনের দিকে তাকাল তারপর বলল, “হ্যাঁ, নিউট্রাল করে দিয়েছি। এখন বরং উল্টা কাজ হবে, তিতুনির ভেতরে কোনো ভয়-ডর থাকবে না।”
টোটন কেমন যেন হাঁ করে এলিয়েন তিতুনির দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, “কী আশ্চর্য। আমি একটা এলিয়েনের পাশে বসে আছি! এলিয়েন! সত্যিকারের এলিয়েন!”
এলিয়েন তিতুনি বলল, “এখন তুমি কী করবে? আমাকে ধরিয়ে দেবে?”
টোটন গলা উঁচিয়ে বলল, “ধরিয়ে দেব? ধরিয়ে দেব কেন? এইটা সত্যি এত দিন আমি তিতুনিকে কোনো পাত্তা দেই নাই, উঠতে-বসতে জ্বালিয়েছি। আর আমার এই বোকাসোকা বোনটা একটা এলিয়েনের সাথে খাতির করে সারা পৃথিবীর সবাইকে বোকা বানাচ্ছে, আর আমি তাকে ধরিয়ে দেব? তুই আমাকে তাই ভাবলি?”
এলিয়েন তিতুনি তখন কোনো কথা না বলে তার ডান হাতটা উপরে তুলল, টোটন তখন সেখানে একটা হাই ফাইভ দিল। প্রথমবার ভাই-বোনে বন্ধুত্ব হয়ে গেল, যদিও অরিজিনাল না তবুও তো ভাই বোন।
টোটন কিছুক্ষণ একা একা বসে বসে হাসল, তারপর বলল, “তুই এখন কী করবি?”
এলিয়েন তিতুনি বলল, “চলে যাব।”
টোটন কেমন যেন চমকে উঠল, বলল, “চলে যাবি?”
“হ্যাঁ।”
“কেন? চলে যাবি কেন?”
“সব জানাজানি হয়ে গেছে, এখন আর থাকা যাবে না। এটা আমাদের নিয়ম, কোথাও গেলে সেখানে জানাজানি হতে পারবে না।”
“কিন্তু–”, টোটন প্রায় হাহাকার করে বলল, “কোন গ্যালাক্সি থেকে এসে পৃথিবীর কিছুই দেখলি না জানলি না, আমার সাথে ঝগড়াঝাটি করে সময় কাটিয়ে দিলি–”
এলিয়েন তিতুনি বলল, “কে বলেছে কিছু দেখি নাই; এই পৃথিবীর সবচেয়ে দরকারি জিনিসগুলি জেনে গেছি।”
“কী দরকারি জিনিস?”
“এই যে মানুষ কীভাবে চিন্তা করে। একজন আরেকজনের সাথে ঝগড়া করে, আসলে ভেতরে ভেতরে ভালোবাসে। কোনো কারণ ছাড়া হি হি করে হাসে। কী অদ্ভুত।”
“কিন্তু পৃথিবীর কত রকম যন্ত্রপাতি কত আবিষ্কার—”
এলিয়েন তিতুনি বলল, “ধুর! এইগুলা কোনো আবিষ্কার নাকি? সব খেলনা। সেই খেলনা নিয়ে কী অহঙ্কার! ট্রেইলারের ভেতরে ছাগলগুলো ভাবছে তিতুনিকে আটকে ফেলে তার কাছ থেকে সবকিছু বের করে ফেলবে। এই কাঁচকলা।” বলে তিতুনি তার হাত দিয়ে কাঁচকলা বানিয়ে দেখাল।
টোটন বলল, “তুই চলে যাবি?”
“হ্যাঁ।”
“কখন?”
“এই তো কয়েক মিনিটের ভেতরে।”
টোটন চিৎকার করে উঠল, “কয়েক মিনিটের ভেতর?”
“হ্যাঁ, আমি আমার স্পেসশিপে যোগাযোগ করেছি। তারা ব্যবস্থা করছে।”
টোটন কেমন যেন অবাক হয়ে এলিয়েন তিতুনির দিকে তাকিয়ে রইল, প্রায় কান্না কান্না গলায় ফিসফিস করে বলল, “তুই চলে যাবি?”
“হ্যাঁ ভাইয়া। তিতুনি থাকবে, শুধু আমি চলে যাব। আমি তো আরেকটা তিতুনি ছাড়া কিছু না, সেই তিতুনি তো আছেই।”
১৪-১৫. শামীম তিতুনিকে বলল
শামীম তিতুনিকে বলল, “আমরা তোমার লাইফ ফর্মে সব রকম টেস্ট করেছি। তুমি যদিও এলিয়েন কিন্তু স্বীকার করতেই হবে তুমি মানুষের নিখুঁত রেপ্লিকা। আমরা এখনো কোনো বিচ্যুতি পাইনি। কাজেই আমরা একজন মানুষের সাথে যেভাবে যোগাযোগ করার কথা তোমার সাথে সেভাবে যোগাযোগ করছি।”