আব্বু বললেন, “আমার সেটা জানার প্রয়োজন নাই। আমার বাসাকে সিল করে দেয়ার আগে আমার অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন আছে। যখন আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।”
নাহার মুখ সুচালো করে বলল, “ড, গার্নার আর ড. ক্লাইডের ডিসিশান।”
এলিয়েন তিতুনি বলল, “ড. গার্নার আর ড. ক্লাইডের খেতা পুড়ি। তাই না আব্বু?”
আব্বু এলিয়েন তিতুনিকে ধমক দিয়ে বললেন, “তুই কেন বড়দের ব্যাপারে নাক গলাচ্ছিস?”
আম্মু আব্বুকে বললেন, “এরা যখন চাইছে না আমরা এখানে থাকি তাই চলো আমরা বাইরে যাই।”
আব্বু বললেন, “বাইরে কোথায় যাব? জার্নি করে এসেছি, হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হওয়ার ব্যাপার আছে। বাচ্চারা কিছু খায়নি।”
নাহার বলল, “পাশে আরেকটা ট্রেইলার আছে, সেখানে বাথরুম আছে, স্ন্যাকস আছে, চা-কফি আছে, রেস্ট নেয়ার ব্যবস্থা আছে, দরকার হলে শুতেও পারবেন। আপনাদের সেখানে রেস্ট নেয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”
জটিল যন্ত্রপাতি বোঝাই একটা চেয়ারে তিতুনিকে রীতিমতো বেঁধে আটকে রাখা হয়েছে, সেখান থেকে তিতুনি করুণ চোখে আব্বু আম্মু আর টোটনের দিকে তাকাল। এলিয়েন তিতুনি তার দিকে তাকিয়ে ছিল, তার মুখে একটা ফিচলে হাসি। তিতুনির মনে হলো এই হইচইয়ের মাঝেই সে সূক্ষ্মভাবে একবার চোখ টিপে দিয়েছে সেটাই ভরসা। দরকার হলে এই ধুরন্ধর মেয়েটা নিশ্চয়ই তাকে উদ্ধার করবে।
ট্রেইলার থেকে বের হয়ে যখন আব্ব, আম্মু, টোটন আর এলিয়েন তিতুনি পাশের ট্রেইলারের দিকে যাচ্ছে তখন টোটন গলা নামিয়ে
এলিয়েন তিতুনিকে বলল, “তিতুনি–”
“বলো ভাইয়া।“
“আমি কি তোর সাথে একটু নিরিবিলি কথা বলতে পারি?”
“আমার সাথে?” এলিয়ে তিতুনি একটু অবাক হয়ে টোটনের দিকে তাকাল।
“হ্যাঁ। আয় আমাদের বাসার সিঁড়িতে গিয়ে বসি।”
“চলো।” তখন দুইজন হেঁটে হেঁটে গিয়ে তাদের সিঁড়িতে গিয়ে বসল। টোটন কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল, তার আঙুলগুলো পরীক্ষা করে বলল, “এই যে পৃথিবীতে একটা এলিয়েন চলে এসেছে এইটা অনেক বড় একটা ঘটনা, চিন্তার বাইরের ঘটনা। তুই ছাড়া দুনিয়ার আর কেউ সেটা জানত না। তুই নিশ্চয়ই খুব ভালো করে সবকিছু করেছিস, সে জন্যে এলিয়েনের সাথে তোর এত খাতির হয়েছে। এত বন্ধুত্ব হয়েছে।”
টোটন কয়েক সেকেন্ড থেমে আবার শুরু করল, “তুই একটা জিনিস লক্ষ করেছিস, গতকাল আমরা ঢাকা গিয়েছি, এই ট্রিপে অনেক কিছু ঘটেছে কোনোটাই ঠিক স্বাভাবিক না? পাগল ড্রাইভারের কারণে আমরা আরেকটু হলে মরেই যেতাম, মাইক্রোবাসটা রেললাইনে আটকে গিয়েছিল, একেবারে শেষ মুহূর্তে কী রকম হঠাৎ করে যেন ছুটে এলো। মনে আছে?”
অন্য-তিতুনি মাথা নাড়ল। টোটন বলল, “আমার স্পষ্ট মনে হচ্ছিল কেউ যেন ধাক্কা দিয়ে মাইক্রোবাসটা সরিয়ে দিয়েছে। যাই হোক, তারপর ধর ড্রাইভারের ব্যাপারটা। হঠাৎ করে সে ড্রাইভিং ভুলে গেল। এটা কি কখনো সম্ভব যে একজন মানুষের অন্য সব কিছু মনে আছে কিন্তু শুধু ড্রাইভিংটা ভুলে গেছে? দেখে কি মনে হয় না
যে কেউ একজন তার মাথার ভেতরে ঢুকে শুধু ড্রাইভিংয়ের অংশটা মুছে দিয়েছে?”
অন্য-তিতুনি মাথা নেড়ে স্বীকার করে নিল।
টোটন বলতে থাকল, “তারপর ধর সি.এন.জি. স্টেশনে সেই মানুষটার কথা। ডিম বিক্রি করা মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার পর তাকে আচ্ছামতন একটা শাস্তি দিল কে? অনেকগুলো কাক। এটা কি সম্ভব? সম্ভব না। কিছুতেই সম্ভব না। কিন্তু আমি নিজের চোখে দেখেছি, আমাকে বিশ্বাস করতেই হবে। বুঝেছিস?”
অন্য-তিতুনি মাথা নাড়ল, বলল, “বুঝেছি।”
টোটন কয়েক সেকেন্ড অন্য-তিতুনির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “এরপর ধরা যাক বড় ফুপুর বাসার ঘটনা। পৃথিবীতে কেউ কখনো শুনেছে একটা কম্পিউটার গেম যখন খেলা হচ্ছে তখন খেলার মাঝখানে সেটা পাল্টে গিয়ে অন্য রকমভাবে খেলতে শুরু করেছে? সব গ্রাফিক্স পর্যন্ত বদলে গেছে? এটা কি কখনো সম্ভব? সম্ভব না, কিন্তু বড় ফুপুর বাসায় এটা ঘটেছে। আমাদের চোখের সামনে সেটা ঘটেছে। নিজের চোখে দেখলে বিশ্বাস না করে উপায় কী?
টোটন এক সেকেন্ড থামল, তারপর কেমন যেন অপরাধীর মতো ভান করে বলল, “এর পরের ব্যাপারটা আমাদের করা উচিত হয় নাই। তোকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যে আমরা প্ল্যান করে ডাইনিং টেবিলে তোর প্লেটে এক খাবলা লবণ দিয়ে দিলাম আর সেই লবণ সব হাজির হলো আমার প্লেটে। শুধু যে হাজির হলো তাই না-একশ’ গুণ বেশি তিতা হয়ে হাজির হলো। কীভাবে হলো এটা?”
অন্য-তিতুনি কোনো কথা না বলে টোটনের দিকে তাকিয়ে রইল। টোটন চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আবার কথা শুরু করল, বলল, “এর পরের ঘটনাটা খুবই লজ্জার। চিন্তা করলেই লজ্জায় আমার শরীরের সব লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সেই কাজটা করার চেষ্টা করা আমাদের একেবারেই ঠিক হয় নাই। আমি, নাদু আর দিলু মিলে ঠিক করলাম রাত্রে তুই যখন ঘুমিয়ে থাকবি তখন আমরা তোর বিছানায় এক গ্লাস পানি ঢেলে দিব, যেন তুই বিছানা ভিজিয়ে দিয়েছিস। আসলে হলো কী? ঘুমানোর আগে আমাদের তিনজনের পানির তৃষ্ণা পেয়ে গেল। সে কী পানির তৃষ্ণা। এক গ্লাস না, দুই গ্লাস
-তিন তিন গ্লাস পানি খেয়ে তখন শান্তি। তারপর কী হলো? একজন না দুইজন না তিন তিনজন রীতিমতো বড় মানুষ একই সাথে বিছানায় পেশাব করে দিলাম। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা? এটা কি কখনো হতে পারে?”