তিতুনি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই এলিয়েন তিতুনি হাসি হাসি মুখে বলল, “দেখেছ, তোমাকে দেখার জন্যে সবাই কীভাবে অপেক্ষা করছে?”
“আমাকে দেখার জন্যে?”
“হ্যাঁ।” এলিয়েন তিতুনি হাত দিয়ে দেখাল, “কত যন্ত্রপাতি তোমার দিকে তাক করে রেখেছে দেখেছ?”
তিতুনি মাথা নাড়ল, এই মেয়েটা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে সে যেন কোনো বেস কথা বলে না ফেলে, এই যন্ত্রপাতি দিয়ে শুনে ফেলবে। তিতুনি তাই কোনো কথা বলল না। মুখ শক্ত করে এলিয়েন তিতুনির দিকে তাকিয়ে রইল। এলিয়েন তিতুনি বলল, “চলো যাই।”
“চলো।”
তারা হেঁটে হেঁটে ট্রেইলারের দিকে যেতে থাকে। ট্রেইলারের দরজার কাছে আম্মু প্রায় ছুটে এসে তিতুনিকে ধরলেন, চোখ বড় বড় করে বললেন, “মা, তুই কোন দূর গ্রহ থেকে এসেছিস এখানে আমার বাসায়, একবার আমাকে সেই কথাটা বলবি না? তিতুনির বুদ্ধি শুনে শুনে তুই সারাক্ষণ ঘরের ভেতর লুকিয়ে থাকলি? কী খেয়েছিস, কোথায় ঘুমিয়েছিস কিছু জানি না মা–”
তিতুনির ইচ্ছে হলো বলে, “আম্মু, আমি মোটেও দূর গ্রহ থেকে আসিনি, আমি তোমার সত্যিকারের মেয়ে তিতুনি। যে ফাজিল মেয়েটাকে তুমি তোমার নিজের মেয়ে ভাবছ সে হচ্ছে ধুরন্ধর এলিয়েন, সবাইকে ঘোল খাওয়াচ্ছে”-কিন্তু সত্যি সত্যি তো আর এই কথাগুলো বলা সম্ভব না, তাই মুখের মাঝে একটা এলিয়েন এলিয়েন ভাব ধরে রেখে দাঁড়িয়ে রইল।
আবু গলা পরিষ্কার করে বললেন, “মা, তোমার কোনো কষ্ট হয়নি তো?” আবু সারা জীবন তিতুনিকে তুই করে বলে এসেছেন, এখন তুমি করে বলছেন। কপাল আর কাকে বলে। টোটন কোনো কথা না বলে চোখ বড় বড় করে তিতুনির দিকে তাকিয়ে রইল।
নাহার তখন তাদের তাড়া দিল, বলল, “সবাই ট্রেইলাইরের ভিতর চলে আসেন।”
আম্মু তিতুনির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কথা বলতে থাকলেন, বললেন, “কী আশ্চর্য মা, তুই কেমন করে হুবহু আমার মেয়ের মতো হয়ে গেলি? এক বিন্দু পার্থক্য নাই, ঘাড়ে তিলটা পর্যন্ত আছে।”
তিতুনি মনে মনে একটা নিঃশ্বাস ফেলল, সারা জীবন এই তিলটা ছিল, সেটি এখন কোথায় যাবে? আম্মুকে এই মুহূর্তে সেটা বোঝাবে কেমন করে?
ট্রেইলারের ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে অনেক ধরনের যন্ত্রপাতি চালু হয়ে গেল। বিচিত্র শব্দ করতে শুরু করল। শামীম তিতুনিকে ট্রেইলারের এক কোনায় যন্ত্রপাতি দিয়ে বোঝাই একটা চেয়ার দেখিয়ে সেখানে বসতে বলল। তিতুনি মাথা ঘুরিয়ে এলিয়েন তিতুনির দিকে তাকাল, এলিয়েন তিতুনি সাথে সাথে বলল, “যাও। বসো চেয়ারটাতে। আমি সবার সাথে কথা বলে রেখেছি, কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করবে না।”
তিতুনি চেয়ারটাতে বসল, দেখে বোঝা যায় না কিন্তু চেয়ারটাতে বসতে খুব আরাম। আশেপাশে চারিদিকে নানা রকম যন্ত্রপাতি। শামীম উপর থেকে টেনে একটা হেলমেট নিচে নামিয়ে এনে তার মাথার মাঝে পরিয়ে দিল, সাথে বাইরের নানা ধরনের শব্দ কমে গিয়ে শুধু শোঁ শোঁ একটা শব্দ শুনতে পায়। চেয়ারের হাতলে তিতুনির দুটো হাত রাখা ছিল, দুটো যন্ত্র এসে হাত দুটোকে হাতলের সাথে আটকে ফেলল। তিতুনি টের পেল তার পা দুটোকেও একই কায়দায় আটকে দেয়া হয়েছে। বুকের উপর দুই পাশ থেকে দুটো চতুষ্কোণ যন্ত্র এসে আড়াআড়িভাবে তাকে আটকে ফেলেছে। তিতুনির বুকটা ধুকপুক করতে থাকে, এখান থেকে সে ছুটে বের হতে পারবে তো? সে নিজে বের হতে না পারলে এলিয়েন মেয়েটা নিশ্চয়ই তাকে বের করে নিবে।
তিতুনি টের পেল তার শরীরের সবকিছু পরীক্ষা করতে শুরু করেছে, হেডফোনে নানা ধরনের শব্দ শোনা যাচ্ছে, চোখের সামনে নানা রঙের আলো খেলা করছে, শরীরের নানা জায়গায় আলাদা আলাদাভাবে কম্পন টের পাচ্ছে। মানুষগুলো নিশ্চয়ই কিছুক্ষণের মাঝে বুঝে যাবে সে মোটেই এলিয়েন নয়, একজন খুবই ফালতু মানুষ, তখন তারা কী করবে?
তিতুনি দেখল বিদেশি মানুষ দুইজন অন্যদের সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে, তখন তারা আব্বু-আম্মু আর অন্যদের কাছে এসে দাঁড়াল। নাহার বলল, “আমরা এখন এই এলিয়েন মেয়েটির উপর কিছু টেস্ট করব, এই সময়টাতে আপনাদের এই ট্রেইলারে থাকা ঠিক হবে না।”
আব্বু জিজ্ঞেস করলেন, “কেন?”
এলিয়েন তিতুনি জিজ্ঞেস করল, “টর্চার করবেন নাকি?”
নাহার জোরে জোরে মাথা নাড়ল, “না, না। টর্চার করব কেন? টেস্টগুলো করার সময় এলিয়েনের মনোযোগ এক জায়গায় থাকতে হবে। ট্রেইলারে পরিবারের সবাই থাকলে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।”
আম্মু জানতে চাইলেন, “কতক্ষণ টেস্ট করবেন?”
“আমরা তো চাইব ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু সেটা ঠিক হবে না। শুরুতে আধা ঘণ্টার একটা সেশান নেব।”
“আমরা বাসায় অপেক্ষা করি?”
শামীম বলল, “না। আপনারা বাসায় যেতে পারবেন না। আপনাদের বাসা কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে।”
টোটন ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “কী করে রাখা হয়েছে?”
“কোয়ারেন্টাইন। কেউ যেতে-আসতে পারবে না। বাসা সিল করে দেয়া হয়েছে।”
আব্বু বিরক্ত হয়ে বললেন, “আমার সাথে কথা না বলে আমার বাসা সিল করে দেয়া হয়েছে মানে?”
শামীম মুখ শক্ত করে বলল, “এখানে যে টিম এসেছে তারা কত পাওয়ারফুল আপনারা বুঝতে পারছেন না। ড. গার্নার আর ড. ক্লাইডকে প্রোটেকশান দেওয়ার জন্য ইউএস মেরিনকে এয়ারলিফট করা হচ্ছে।”