“কী রকম সাহায্য?”
এবারে শামীম বলল, “মনে করো এলিয়েনটাকে রাজি করিয়ে তুমি কি তাকে এই ট্রেইলারে নিয়ে আসতে পারবে?”
অন্য-তিতুনি একটু সন্দেহের চোখে দুইজনের দিকে তাকিয়ে বলল, “এলিয়েনকে আনার পর আপনারা কী করবেন? তাকে কি ধরে ফেলবেন? কাটাকুটি করবেন?”
দুইজন একসাথে চিৎকার করে বলল, “না না। মোটেও কাটাকুটি করব না। কাটাকুটি কেন করব? আমরা একটু কথা বলব। কয়েকটা টেস্ট করব। কিছু স্যাম্পল নেব, কিছু ছবি তুলব, স্ক্যানিং করব। এ রকম রুটিন কাজকর্ম।”
অন্য-তিতুনি পরিষ্কার শুনতে পেল মনে মনে তারা বলছে, কোনোমতে এই ট্রেইলারে আনতে পারলেই এলিয়েনটাকে আটকে ফেলা যাবে। একবার আটকে ফেললে তাকে কাটাকুটি করতে সমস্যা কী? মুখে বলছে অন্য কথা। কত বড় বদমাইস!
অন্য-তিতুনি আবার জিজ্ঞেস করল, “আপনারা কথা দিচ্ছেন তার কোনো ক্ষতি করবেন না?”
সবগুলো মিথ্যুক মানুষ জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, “অবশ্যই কথা দিচ্ছি।”
“দুইজন বিদেশি মানুষও কথা দিচ্ছেন? তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখেন।”
টিশটাশ ড. নাহার বলল, “জিজ্ঞেস করতে হবে না, আমি জানি তারাও কথা দিচ্ছেন।”
অন্য-তিতুনি সবার মনের কথা জানে তাই সে জোর করল, “না। আপনারা জিজ্ঞেস করে দেখেন। আমি তাদের নিজেদের মুখে শুনতে চাই। এই এলিয়েন বহু দূর গ্যালাক্সি থেকে এসেছে, আমি তাকে একটুও বিপদের মুখে ফেলব না।”
নাহার আর শামীম বিরক্ত মুখে তখন ন্যাড়া মাথা এবং পাকা চুলের দুই বিদেশির সাথে কথা বলল, তারা জোরে জোরে মাথা নেড়ে তাদের কথায় সায় দিল। নাহার বলল, “প্রফেসর রিক গার্নার আর প্রফেসর বব ক্লাইড কথা দিচ্ছেন।”
অন্য-তিতুনি তখন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ঠিক আছে আমি তাহলে এলিয়েনকে ডেকে আনি।”
নাহার বলল, “যাও।” আমরা তোমার জন্যে এই ট্রেইলারে অপেক্ষা করছি।”
অন্য-তিতুনি ট্রেইলার থেকে বের হয়ে চারিদিকে তাকিয়ে বলল, “আমাদের বাসার চারপাশে এত যন্ত্রপাতি লাগিয়েছে, এগুলো এলিয়েনের কোনো ক্ষতি করবে না তো?”
“না কোনো ক্ষতি করবে না। এগুলো লাগিয়েছি শুধুমাত্র মনিটর করার জন্য।”
অন্য-তিতুনির সাথে সাথে আব্ব, আম্মু আর টোটনও ট্রেইলারের বাইরে এসে দাঁড়ালেন। আম্মু খুশি খুশি গলায় বললেন, “যা, মেয়েটাকে ডেকে আন, আমরা দেখি।”
অন্য-তিতুনি বলল, “আম্মু, তুমি অনেকবার দেখেছ, শুধু বুঝতে পারোনি।”
“এবারে আমি বুঝে-শুনে দেখতে চাই।”
অন্য-তিতুনি বলল, “ঠিক আছে।” তারপর আব্বুর দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “আব্বু বাসার চাবিটা দাও।” আব্বু পকেট থেকে বের করে চাবিটা এগিয়ে দিলেন। তিতুনি সেই চাবিটা নিয়ে বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করে।
১৩. তিতুনি ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে
তিতুনি ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। দুপুরবেলার দিকে তাদের বাসার সামনে একটা ট্রেইলার এনে রাখা হয়েছে, তিতুনি আগে কখনো ট্রেইলার দেখেনি, এটা আসলে চাকা লাগানো একটা বাসা। এই ট্রেইলারের উপরে-নিচে, ডানে-বামে সব দিক দিয়ে নানা রকম যন্ত্রপাতি বের হয়ে আছে। ট্রেইলারের দরজা দিয়ে লোক ভেতরে ঢুকছে এবং বের হচ্ছে। একসময় সে দেখল তার আব্ব, আম্মু, টোটন আর এলিয়েন তিতুনি সেখানে ঢুকল। সে খুবই উত্তেজিত হয়ে কী হয় দেখার জন্যে তাকিয়ে রইল। যে এলিয়েন তিতুনিকে ধরার জন্য এত আয়োজন সেই এলিয়েন তিতুনি নিজেই এই ট্রেইলারে ঢুকেছে। তিতুনি অনেকক্ষণ প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ করে জানালার পাশে ঘাপটি মেরে ট্রেইলারের দিকে তাকিয়ে রইল। অনেকক্ষণ পর তিতুনি দেখল এলিয়েন তিতুনি বেশ হেলতে-দুলতে ট্রেইলার থেকে বের হয়ে এলো। তার মানে এই মহা ধুরন্ধর এলিয়েন তিতুনি সবাইকে বোকা বানিয়ে রেখেছে। এত দুঃখের মাঝেও তিতুনির একটু হাসি পেয়ে গেল।
তিতুনি দেখল এলিয়েন তিতুনি বাসার চাবিটা আঙুলে ঘোরাতে ঘোরাতে বাসার দিকে আসছে, তার মতলবটা কী কে জানে? বাসার সিঁড়ি দিয়ে উঠে তালাটা খুলল, তারপর গলা উঁচু করে ডাকল, “তিতুনি।”
তিতুনি এক মুহূর্ত ইতস্তত করে উত্তর দিল, “কী হয়েছে?”
“তুমি বের হয়ে এসো।”
“কেন?”
“সবাই তোমার সাথে পরিচিত হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করছে।”
“কেন?”
“এরা আগে কখনো এলিয়েন দেখে নাই। এলিয়েন দেখতে চায়।”
তিতুনি প্রায় বলেই ফেলছিল, “এলিয়েন কী আমি না তুমি? কিন্তু শেষ পর্যন্ত বলল না, এই ধুরন্ধর মেয়েটার নিশ্চয়ই কোনো চালাকি আছে। বলল, “ঠিক আছে আসছি। জামাটা বদলে আসি।”
এলিয়েন তিতুনি বলল, “না না জামা বদলাতে হবে না। যেভাবে আছ সেভাবে বের হয়ে আসো। সবাই অপেক্ষা করছে। আব্ব, আম্মু আর টোটনও তোমাকে দেখতে চায়।”
মেয়েটার কথা শুনে তিতুনির পিত্তি জ্বলে যাওয়ার অবস্থা, তার নিজের আব্বু, আম্মু আর ভাই নাকি তাকে দেখতে চায়। একবার নিরিবিলি পেয়ে নিক তখন এই মেয়েটাকে সে বোঝাবে মজা।
যদিও এলিয়েন তিতুনি বলেছে যেভাবে আছে সেভাবেই যেন বের হয়ে আসে কিন্তু তিতুনি তারপরও চুলটা আঁচড়ে নিল, তার লাকি টি শার্টটা পরে নিল (এই টি-শার্ট পরে থাকলে সাধারণত তার বিপদ আপদ কম হয়)। বাসা থেকে বের হয়ে দেখল এলিয়েন তিতুনি সিঁড়ির উপর বসে তার জন্যে অপেক্ষা করছে। সে ইচ্ছে করলেই বাসার ভেতরে ঢুকতে পারত, কিন্তু ঢুকেনি। এর পিছনে কোনো কারণ আছে কি না কে জানে।