“কী মনে করি মানে? মনে করার কী আছে?”
অন্য-তিতুনি বলল, “আসলে হয়েছে কী জানেনা, এই এলিয়েনটা বাসার পিছনে ল্যান্ড করেছে। মনে আছে সেদিন ভূমিকম্পের মতো হলো? আমি তখন এটাকে ল্যান্ড করতে দেখেছি। আমাদের বাসার পিছনের জঙ্গলে ল্যান্ড করেছে, আমি ভেবেছিলাম উল্কা। গিয়ে দেখি মাটিতে একটা গর্ত, আমি যখন গর্তটার দিকে তাকিয়েছিলাম তখন গর্তের ভেতর থেকে এলিয়েনটা বের হয়ে এলো।”
সবাই একটা আর্তচিৎকার করে উঠল। টোটন জিজ্ঞেস করল, “তুই ভয় পাসনি?”
অন্য-তিতুনি বলল, “নাহ্।”
“কেন ভয় পাসনি?”
“আমি ভয় পাই নাই, কারণ এলিয়েনটা দেখতে আমার মতো।”
সবাই একসাথে চিৎকার করে উঠল, “তোমার মতো?”
“হ্যাঁ। হুবহু আমার মতো। দেখতে আমার মতো, কথাবার্তা, ভাবভঙ্গি সব কিছু আমার মতো। প্রথমে আমি একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু আস্তে আস্তে তার সাথে একটু খাতির হলো, তখন তার জন্য একটু মায়া হলো, তখন আমি আমার ঘরে লুকিয়ে রেখেছি।”
টোটন তখন চিৎকার করে বলল, “মনে আছে আব্ব, আম্মু? আমি তিতুনির ঘরে আরেকটা তিতুনি দেখেছিলাম? মনে আছে? তার মানে আমি এলিয়েনটাকে দেখেছিলাম!”
অন্য-তিতুনি মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ। যখন তোমরা সবাই ভেতরে খুঁজতে গেছ তখন এলিয়েনটা সিলিং ফ্যানের পাখাটার উপর বসে ছিল, সে জন্যে কেউ খুঁজে পায় নাই।”
বিদেশি দুইজন যেহেতু অন্য-তিতুনির কথা বুঝতে পারছিল না তাই তাকে সব কথা অনুবাদ করে শোনানো হচ্ছিল। তারা টিশটাশ মেয়েটিকে দিয়ে অনেক রকম প্রশ্ন করে যাচ্ছিল কিন্তু অন্য-তিতুনি কথাবার্তা বলছিল আম্মু, আব্বু আর টোটনের সাথে।
আম্মু বললেন, “তার মানে মাঝরাতে যে ফ্রিজ খুলে খাচ্ছিল সেটি এলিয়েন?”
অন্য-তিতুনি মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ আম্মু। ঠিক আমার মতো হয়েছে বলে তার মানুষের মতো খিদে পায়।”
আম্মু বললেন, “ওমা! সে তো একেবারে তোর মতো। আসলে তোর মতো না, আসলে তুই।”
“হ্যাঁ মা! আরেকজন আমি।”
“তুই আমাকে একবার বললি না? বেচারি কোথা থেকে এসে একা একা এই পৃথিবীতে কত না জানি মন খারাপ করেছে। পৃথিবীর মানুষ নিয়ে একটা ভুল ধারণা নিয়ে যাবে না? ভাববে যে এখানে কারো ভেতরে কোনো মায়া নেই?”
বিদেশি দুইজন এবং তার সাথে সাথে তাদের টিমের সবাই এতক্ষণে একেবারে অধৈর্য হয়ে উঠেছিল, এবারে রীতিমতো জোর করে তারা অন্য-তিতুনির সাথে কথা বলার চেষ্টা করল। জিন্স, টি-শার্ট পরা শামীম বেশ গলা উঁচিয়ে বলল, “তিতুনি, তুমি আগে আমাদের কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দাও।”
অন্য-তিতুনি ঘুরে এবারে তার দিকে তাকাল, বলল, “কী প্রশ্ন?”
শামীম কঠিন মুখে জিজ্ঞেস করল, “তুমি ঠিক ঠিক বলছ যে এলিয়েনটা দেখতে একেবারে হুবহু তোমার মতো?”
অন্য-তিতুনির একটু হাসি পেয়ে গেল, বলল, “আমি এই মাত্র আমার আম্মুকে সেটা বলেছি, আপনি শুনেননি?”
শামীম একটু থতমত খেয়ে বলল, “হ্যাঁ শুনেছি। কিন্তু বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই নিশ্চিত হতে চাচ্ছি।”
টিশটাশ মেয়েটা বলল, “আমি ডক্টর নাহার। আমি ইন্টেলিজেন্ট লাইফ ফর্মের বিহেভিয়ার নিয়ে কাজ করি। আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও।”
অন্য-তিতুনি বলল, “বলেন।”
“তুমি দাবি করছ এলিয়েন লাইফ ফর্মটা দেখতে হুবহু তোমার মতো। সেটার ব্যবহার, কথাবার্তা, অর্থাৎ বুদ্ধিমত্তাও কি তোমার মতো?”
“হ্যাঁ আমার মতো।“
শামীম বলল, “এটা খুবই ইম্পরট্যান্ট। এলিয়েন সায়েন্সের অনেক বড় একটা থিসিস হচ্ছে, যদি তারা পৃথিবীতে এসে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চায় তাহলে তারা মানুষের ফর্ম নিবে। তোমার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে সেটা কনফার্ম হবে।”
চাঁছাছোলা মাথার বিদেশিটা কী একটা বলল, টিশটাশ নাহার সেটা তিতুনিকে জিজ্ঞেস করল, বলল, “এলিয়েন এক্সপেডিশনের ডিরেক্টর প্রফেসর রিক গার্নার জানতে চাইছেন এই এলিয়েনের কি কোনো বাড়তি ক্ষমতা আছে?”
অন্য-তিতুনি বলল, “মনে হয় আছে।”
“কী রকম ক্ষমতা?”
“আমার সাথে যখন থাকে তখন তো আর ক্ষমতা দেখাতে হয় না। কিন্তু মনে করেন হঠাৎ করে আম্মু ঘরে ঢুকে গেলে সে এত তাড়াতাড়ি সরে যায় যে আম্মু দেখতে পান না। কিংবা মনে করেন, রাত্রে যখন বাসায় আসে তখন দোতলার জানালা দিয়ে শিক বাঁকা করে ঢুকে যায়।”
ন্যাড়া মাথা গার্নার আবার কিছু একটা বলল, ড. নাহার আবার অন্য-তিতুনিকে বলল, “এটা তো শারীরিক ক্ষমতা। মানসিক ক্ষমতা কী আছে?”
অন্য-তিতুনি বলল, “নিশ্চয়ই আছে। সে আমার মতো কথা বলে, চিন্তা করে, মানসিক ক্ষমতা না থাকলে কেমন করে সেটা সম্ভব?”
ন্যাড়া মাথা বিদেশি তখন পাকা চুল বিদেশির সাথে বেশ কিছুক্ষণ গুজগুজ-ফুসফুস করে কথা বলল। তারপর নাহার আর শামীমের সাথে কথা বলল। নাহার আর শামীম তখন অন্য-তিতুনির সাথে কথা বলতে এলো, অন্য-তিতুনি তখন হাত-পা নেড়ে আবু-আম্মু আর টোটনের সাথে এলিয়েনের কাজকর্মের একটা বর্ণনা দিচ্ছিল। শামীম আর নাহার গল্পটা শেষ করার সময় দিল, তারপর বলল, “তিতুনি, আমরা কি তোমার সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারি?”
অন্য-তিতুনি বলল, “জি বলেন।”
নাহার বলল, “আমরা পৃথিবীর মানুষেরা এখন একটা যুগান্তকারী মুহূর্তের সামনে আছি। এই প্রথমবার পৃথিবীর মানুষ একটা এলিয়েনের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ পেয়েছে। একটা এলিয়েনের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করা উচিত সেগুলো নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, অনেক আলোচনা হয়েছে কিন্তু কেউ সেটা সঠিকভাবে জানে না। কিন্তু আমরা অসম্ভব সৌভাগ্যবান যে তোমার সাথে একজন এলিয়েনের যোগাযোগ হয়েছে এবং তুমি যদি আমাদের সাহায্য করো তাহলে পৃথিবীর মানুষেরা প্রথমবার একটা এলিয়েনের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। এখন তিতুনি, তুমি কি আমাদের সাহায্যটুকু করবে?”