পারবে না! দশ জি এক্সেলেরেশান।
ঝা টুকির দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার বয়স বেড়ে যাচ্ছে! সর্বনাশ মুখের চামড়া নিচে ঝুলে যাচ্ছে।
টুকি রেগে বলল, বয়স নয় রবোটের বাচ্চা কোথাকার–এক্সেলেরেশানে চামড়া ঝুলে যাচ্ছে।
কী অদ্ভুত লাগছে তোমাকে!
তোমাকেও খুব সুন্দর দেখাচ্ছে না। টুকি চেষ্টা করে একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, সব দোষ তোমার। তুমি যদি একশ বিরাশি তালার বাথরুমে না যেতে–
দোষ আমার? তুমি যদি এই বিল্ডিংয়ে না আসতে–
ঝায়ের কথা তার মুখে আটকে গেল। মহাকাশযানটি এখন প্রচণ্ড বেগে উপরে উঠছে তার ভয়ংকর ভূরণে দুজনের চোখের সামনে একটা লাল পর্দা ঝুলতে থাকে। সেই লাল পর্দা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে একসময় অন্ধকার হয়ে আসে। জ্ঞান হারানোর আগের মুহূর্তে শুনল রিনরিনে গলায় কে যেন বলল, এম, সেভেন্টি ওয়ানে মানুষের তৃতীয় কলোনীতে আপনাদের ভ্রমণ আনন্দময় হোক।
টুকি অনেক কষ্টে চোখ খুলে তাকাল। উপরে নিশ্চল হয়ে দাঁড়ানো রবোটটি কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে বলল, আপনারা আপনাদের জন্যে নির্দিষ্ট চেয়ারে না বসে মেঝেতে চ্যাপটা হয়ে কেন শুয়ে আছেন আমি জানি না।
টুকি চাপা গলায় বলল, চুপ কর হতভাগা।
আপনারা যদি আপনাদের জন্যে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে থাকতেন তাহলে আপনাদের বর্তমান শারীরিক যন্ত্রণা উপশম করার জন্যে মস্তিষ্কে বিশেষ তরঙ্গ পাঠানো যেত। কিন্তু এখন কিছু করার নেই। আপনাদের উপরে তুলে নেওয়া প্রায় অসম্ভব।
ঝা চিঁ চিঁ করে বলল, কেন?
আপনার স্বাভাবিক ওজনই একশ পঞ্চাশ কেজির কাছাকাছি। এখন আপনার ওজন দাঁড়িয়েছে দেড় হাজার কে জ্বি।
কতক্ষণ এরকম থাকবে?
বেশ অনেক্ষণ।
কষ্ট কী আরো বাড়বে।
কষ্ট এখনো শুরু হয়নি। কিছুক্ষণের মাঝে শুরু হবে।
ঝা কাতর গলায় বলল, কিছু কী করা যায় না?
একটা উপায় আছে। আপনাদের মাথায় আঘাত দিয়ে অচেতন করে দেওয়া। তাহলে কিছু টের পাবেন না।
টুকি এবং ঝা প্রবল বেগে মাথা নেড়ে নিষেধ করার চেষ্টা করল কিন্তু অদৃশ্য কোন একটা শক্তি এত জোরে তাদেরকে মেঝের সাথে চেপে ধরে রেখেছে যে শরীরের একটা মাংসপেশীও এতটুকু নাড়াতে পারল না। টুকি এবং ঝা অনেক কষ্টে চোখ খুলে আতংকে নীল হয়ে দেখল রবোর্টটি বড় সাইজের একটা গদা নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
ভয়ে, গদার আঘাতে নাকী মহাকাশযানের প্রচণ্ড গতিবেগের ত্বরণের কারণে তারা জ্ঞান হারিয়েছে সেটা টুকি কিংবা ঝা কারো মনে নেই।
০২. জ্ঞান ফিরে ঝা আবিষ্কার করল
জ্ঞান ফিরে ঝা আবিষ্কার করল মাধ্যাকর্ষণহীন একটা ঘরে সে ভেসে বেড়াচ্ছে। পরে সুমসাম নীরবতা। মাথা ঘুরিয়ে দেখল টুকিও ভাসতে ভাসতে কুলী পাকিয়ে ঘুমাচ্ছে, কপালের কাছে খানিকটা জায়গা আলুর মত ফুলে আছে নিশ্চয়ই সেখানে রবোটের বাচ্চা রবোট গদা দিয়ে মেরেছিল। ঝা টুকিকে জাগিয়ে তোলার জন্যে তার কাছে যেতে চাইল কিন্তু ব্যাপারটা সোজা নয়। ঝা এক জায়গায় হাড় পাচড় করতে থাকে কিন্তু এক সেন্টিমিটার সামনেও এগুতে পারে না।
আপনি কি ব্যায়াম করছেন? আমি কখনো কাউকে ব্যায়াম করতে দেখিনি।
গলার স্বর শুনে ঝা নিচে তাকাল, সেখানে সোজা হয়ে রবোটটি দাঁড়িয়ে আছে। রাগ চেপে বলল, না আমি ব্যায়াম করছি না। আমি সামনে যাবার চেষ্টা করছি।
সামনে যেতে হলে আপনাকে পিছনে ধাক্কা দিতে হবে। প্রাচীন বিজ্ঞানী নিউটন ভরবেগের সাম্যতার এই সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। পিছনে ধাক্কা দিলে প্রতিক্রিয়া হিসেবে সামনে একটি ক্রিয়া হয়। সেই ক্রিয়াতে–
ঝা ঠাণ্ডা মেজাজের মানুষ, সাধারণত রাগ করে না, এবারে রেগে উঠে বলল, চুপ কর হতভাগা, না হয় এক রদ্দা দিয়ে ঘিলু বের করে দেব।
রবোটটি তার গলার স্বরে এক ধরনের উৎফুল্ল ভাব ফুটিয়ে বলল, আপনি কী রাগ করছেন? আমি কখনো কাউকে রাগ করতে দেখিনি। রবোট ফার্মে আমার বন্ধুরা বলেছে মানুষ যখন রাগ হয় তখন নাকী তারা বিচিত্র সব কাজকর্ম করে। সেটা দেখা নাকী অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। আপনি আরও একটু রাগ করবেন? আমি আবার দেখি।
ঝা চোখ পাকিয়ে রবোটটার দিকে তাকিয়ে পা দিয়ে কাছাকাছি একটা দেওয়ালে ধাক্কা দিয়ে টুকির দিকে এগিয়ে গেল। কাছে এসে তাকে বার কতক ঝাকুনি দিতেই সে চোখ খুলে চিৎকার করে বলল, ধরা পরে গেছি? পুলিশ এসে গেছে?
না, ঝা মাথা নেড়ে বলল, ধরা পড়ি নি। কিন্তু ধরা পরলেই অনেক ভাল ছিল। আমরা এখন মহাকাশে।
টুকির সব কথা মনে পড়ে গেল এবং সে সাথে সাথে ধড়মড় করে উঠে বসার চেষ্টা করতে থাকে। শূন্যে ভাসমান অবস্থায় ধড়মড় করে উঠে বসা যায় না। কাজেই টুকি ওলট পালট খেয়ে এক জায়গায় ঘুরতে শুরু করল, তাকে থামাতে গিয়ে ঝাও একই জায়গায় ওলট পালট খেতে লাগল। রবোটটি নিচে দাঁড়িয়ে বলল, মানুষ প্রজাতির নির্বোধ কাজ দেখা বড় আনন্দের।
টুকি কোন মতে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল, ব্যাটা রবোটের বাচ্চা তুই ভাসছিস না কেন? সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেমন করে?
আমার পায়ে রয়েছে বিশেষ সাকশান জুতো।
তাহলে আমাদের সেই জুতো দিচ্ছিস না কেন?
আপনারা চাইছেন না তাই দিচ্ছি না।
ঠিক আছে এখন চাইলাম।
এক্ষুণি এনে দিচ্ছি। আপনাদের পায়ের সাইজ যেন কত?
কিছুক্ষণের মাঝেই টুকি এবং ঝা তাদের পায়ে সাকশান জুতো পরে মেঝেতে স্থির হল। প্রথমেই তারা জানার চেষ্টা করল এই মুহূর্তে মহাকাশযানটা কোথায় আছে এবং কোনদিকে যাচ্ছে। রবোটটিকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, আমি জানি কিন্তু বলব না।