টুকি এবারে ঝায়ের দিকে তাকিয়ে একটা বাজখাই ধমক দিয়ে বলল, চুপ কর তুমি।
বুড়ো মানুষদের একজন বলল, কিন্তু–
টুকির ধমক খেয়ে ঝায়ের মেজাজটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল এবারে সে মনের ঝাল মেটালো মানুষগুলোর উপরে, চিৎকার করে বলল, কোন কথা নয়। এক দাবড়া দিয়ে মাথা ভেঙ্গে দেব।
মানুষটা তখনো কিছু একটা বলার চেষ্টা করল। বলল, কিন্তু—
ঝা তখন অঙ্গভঙ্গী করে মাথা ভেঙ্গে ফেলে দেবার ভাণ করে দাঁত কিড়মিড় করে এগিয়ে যায় এবং সেটা দেখে টুকি পর্যন্ত একটু ঘাবড়ে গিয়ে কী করবে বুঝতে না পেরে গুলি করে বসল। ট্রাংকুয়ালাইজার গানের গুলি খেয়ে মানুষ দুজন ফোঁস জাতীয় একটা শব্দ করে সাথে সাথে গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল। ঘুম যে গাঢ় সেটি প্রমাণ করার জন্যেই সম্ভবত সাথে সাথে তাদের নাক ডাকতে শুরু করে।
ঝা তার মুখে ভয়ংকর অঙ্গভঙ্গীটি ধরে রেখে বলল, কী হল, মরে গেল নাকী?
মরবে কেন? টুকি বিরক্ত হয়ে বলল, ট্রাঙ্কুলাইজার গানের গুলি খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। দেখছ না নাক ডাকছে।
ঝা ঠিক বুঝতে পারল না মুখে ভয়ংকর ভঙ্গীটি ধরে রাখবে কী না, দ্বিধান্বিত হয়ে খানিকটা প্রশ্নের ভঙ্গীতে টুকির দিকে তাকাল। টুকি তার অস্ত্রটি ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে বলল, যাও, এদের বাইরে রেখে এস।
ঝা অবাক হয়ে বলল, কেন?
শুনতে পাচ্ছ না জেট ইঞ্জিনের মত নাক ডাকছে? কেউ কানের কাছে এভাবে নাক ডাকলে বিশ্রাম নেওয়া যায়?।
ঝা ইতস্তত করে বলল, কিন্তু আমার একটু বাথরুমে যাওয়ার দরকার ছিল। সিনথেটিক গলদা চিংড়িগুলো পেটের মাঝে–
যেতে তোমাকে না করছে কে? মানুষগুলোকে বাইরে রেখে বাথরুমে কেন। ইচ্ছে হলে নরকে চলে যাও।
ঝা খুব বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে থাকা বুড়ো মানুষ দুটির সার্টের কলার ধরে টেনে টেনে ঘরের বাইরে নিয়ে গেল। টুকি নরম চেয়ারে গা ড়ুবিয়ে বসে সামনে রাখা বিশাল ভিডিও স্ক্রীনের টেলিভিষণটি চালু করার চেষ্টা করতে থাকে। এরকম সময়ে পাবলিক চ্যানেলগুলোতে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হয়। বড় ধরনের কিছু একটা চুরি করে এসে সে সব সময় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শুনে তার স্নায়ুকে শীতল করে। থাকে। এখন সে চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত দূরে থাকুক কোন ধরনের। অনুষ্ঠানই শুনতে পেল না, সব চ্যানেলেই নানা ধরনের দুর্বোধ্য যান্ত্রিক ছবি। টুকি বিরক্ত হয়ে টেলিভিষণ বন্ধ করে দেয়।
মানুষ দুটিকে বাইরে রেখে ফিরে আসতে ঝায়ের খুব বেশি সময় লাগার। কথা নয় কিন্তু দেখা গেল তার কোন দেখা নেই। অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে কী করবে বুঝতে না পেরে টুকি তার নরম চেয়ার থেকে উঠে ঘরটাতে পায়চারী শুরু করে এবং ঠিক তখন সে আবিষ্কার করল ঘরের এক কোনায় একটি রবোট চুপ করে দাঁড়িয়ে তার দিকে সবুজ ফটোসেলের চোখে তাকিয়ে আছে। টুকি প্রথমে চমকে উঠল তারপর সাহসে ভর করে কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, এই রবোট–
রবোটটি কোন কথা না বলে কয়েকবার চোখ পিট পিট করল। টুকি আবার বলল, এই রবোট—কথা বলছ না কেন?
রবোটটি এবারেও প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চোখ দুটি আরও কয়েকবার পিট পিট করল। টুকি যখন তৃতীয়বার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে কী না চিন্তা করছে ঠিক তখন ঝা ঘরে এসে ঢুকল। সে ভিজে জবজবে হয়ে আছে। টুকি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, সে কী! তুমি ভিজলে কেমন করে?
বাইরে যা বৃষ্টি! ভিজব না?
টুকি চোখ কপালে তুলে বলল, এই বৃষ্টিতে তুমি বাইরে গেলে কেন?
তুমি না বললে মানুষগুলিকে বাইরে রেখে আসতে!
আরে রবোটের বাচ্চা—আমি বলেছিলাম ঘরের বাইরে!
ঝা খানিকক্ষণ হা করে থেকে অপ্রস্তুতের মত বলল, আমি ভেবেছি তুমি বলেছ বিল্ডিংয়ের বাইরে—
ঠিক এই সময়ে সমস্ত বিল্ডিংটা মৃদু মৃদু কাঁপতে শুরু করে এবং কোথায়। জানি একটা মৃদু গুঞ্জন শোনা যায়। সামনের বড় ভিডিও স্ক্রিনগুলোতে বিচিত্র সব নকশা খেলা করতে থাকে। ঝা মাথা নেড়ে বলল, এই বিল্ডিংয়ের সবকিছু। আজব। কেমন শব্দ করছে দেখছ?
টুকি মাথা নাড়ল। ঝা বলল, সারা বিল্ডিংয়ে কোন বাথরুম নেই। বাথরুম নেই?
না! একটা আছে সেটা উল্টো।
টুকি অবাক হয়ে বলল, উল্টো?
হ্যাঁ! ছাদ থেকে ঝুলছে। এটা কী ধরনের ফাজলেমো? আমরা কী উড়ে উড়ে গিয়ে বাথরুম করব?
টুকি খানিকক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঝায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ভয়ানক চমকে উঠে বলল, সর্বনাশ!
ঝা ভয় পেয়ে বলল, কী হয়েছে?
পালাও! এখান থেকে পালাও।
কেন? কী হয়েছে?
বুঝতে পারছ না? এইটা একটা মহাকাশযান।
মহাকাশযান?
হ্যাঁ! মহাকাশযান। মহাকাশযানে কোন সোজা উল্টো নেই। সেখানে মহাকর্ষ নেই বলে সবকিছু ভাসতে থাকে। এটাও নিশ্চয়ই মহাকাশে যাবে। শুনতে পাচ্ছ না ইঞ্জিন চালু হয়েছে?
ঝা কান পেতে শুনল সত্যি সত্যি গুম গুম করে ইঞ্জিন শব্দ করছে। সে ফ্যাকাশে মুখে বলল, যে দুজনকে বাইরে রেখে এসেছি তারা মহাকাশচারী?
হ্যাঁ!
সর্বনাশ।
নিচে চল, বের হতে হবে এখান থেকে।
টুকি বিদ্যুবেগে নিচে ছুটতে থাকে, পিছনে পিছনে ঝ। ছুটতে ছুটতে তারা শুনতে পায় ইঞ্জিনের শব্দটা বাড়ছে, দেয়াল মেঝে ছাদ সবকিছু কাঁপতে শুরু করেছে। কোন রকমে নিচে এসে দরজা খোলার জন্যে হ্যান্ডেলে হাত রাখতেই হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ শোনা গেল এবং হঠাৎ করে তারা বুঝতে পারল মহাকাশযানটি উপরে উঠতে শুরু করেছে। টুকি এবং ঝা হুঁমড়ি খেয়ে পড়ল এবং তাদের মনে হতে লাগল অদৃশ্য একটা শক্তি তাদেরকে মেঝের সাথে চেপে ধরে রেখেছে। ঝা কোনমতে বলল, নড়তে পারছি না।