টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, নাক মুখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে নিচে। টুকি চোখ খুলে তাকাল, লম্বা ঘাসের মাঝে উপুর হয়ে পড়ে আছে সে, পাশে ঝা লম্বা হয়ে শুয়ে আছে দেখে মনে হয় বুঝি প্রাণহীন। টুকি বুকের উপর ঝুকে পড়ে দেখল বুক ধুকপুক করছে, মরে যায়নি তাহলে। টুকি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঝাকে ধাক্কা দিল, সাথে সাথে ঝা চোখ খুলে তাকিয়ে বলল, আমরা কোথায়?
পৃথিবীতে। বেঁচে গেছি মনে হয়।
ঝা উঠে বসে চারিদিকে তাকাল, বহুদূরে কোথায় আগুন জ্বলছে, কালো ধোঁয়া উড়ছে সেখান থেকে। অন্ধকার হয়ে আসেছ, কী চমৎকার লাগছে এই পৃথিবীটা। চারিদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমরা কেমন করে বেঁচে গেলাম? কী হয়েছিল মহাকাশযানটিতে? রোবি কোথায়?
জানি না। টুকি মাথা নেড়ে বলল, কিছুই জানি না।
দুজনে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে নিজেদের টেনে-ছেচড়ে সামনে নিতে থাকে, ঝা বলল, একটা জিনিস জান?
কী?
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই ব্যাপারটা আগে ঘটেছে।
কোন ব্যাপারটা?
এই যে আমরা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে নিজেদেরকে টেনে-ছেচড়ে নিচ্ছি। সেটা। আচ্ছা আমরা হাঁটছি না কেন?
টুকি বলল, আমরা হাঁটছি না, কারণ হাঁটলে পুলিশ আমাদের দেখে ফেলবে।
কিন্তু আমরা তো মহাকাশযান থেকে এসেছি। মনে নেই আমরা এম সেভেন্টি-ওয়ানে গেলাম?
টুকি ভুরু কুচকে মনে করার চেষ্টা করতে থাকে। মহাকাশযানের বিস্ফোরণে মাথায় চোট খেয়েছে। কী হয়েছে মনে করতে পারছে না ঠিক করে। মাথাটা ঝাকিয়ে বলল, হ্যাঁ! মনে পড়ছে আবছা আবছা। কোথায় জানি গেলাম?
ঝা মনে করার চেষ্টা করতে করতে বলল, ঠিক ভাল করে মনে পড়ছে না এখন। একটা মহাকাশযানে উঠে পড়েছিলাম ভুলে। হীরা চুরি করে–
মনে পড়েছে। টুকি মাথা নেড়ে বল, হীরা চুরি করে পালাবার জন্যে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলাম। ঐ দেখ আগুন জ্বলছে।
হ্যাঁ! তাড়াতাড়ি সরে পড়ি এখান থেকে।
টুকি আর ঝা দ্রুত গড়াতে গড়াতে সামনে এগুতে থাকে। প্যাচপ্যাচে কাদায় গড়াতে গড়াতে সামনে আকাশের দিকে মুখ করে টুকি বলল, কী বাজে বৃষ্টি!
ঝা হাসি হাসি মুখে বলল, মৌসুমী বৃষ্টি। একেবারে সময়মত এসেছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিউশান একেবারে ধুয়ে নিয়ে যাবে।
টুকি রেগে মেগে বলল, তোমার বৃষ্টির চৌদ্দগুষ্ঠির লিভারে ক্যান্সার হোক।
ঝা মুখের হাসিকে আরো বিস্তৃত করে বলল, এতো রেগে যাচ্ছ কেন? কী চমৎকার বৃষ্টি, দেখ না একবার। তিন চার ঘণ্টার মাঝে থেমে যাবে।
তিন চার ঘণ্টা? টুকি মুখ খিচিয়ে বলল, ততক্ষণ আমরা কী করব?
ভিজব। মঙ্গল গ্রহে বৃষ্টিতে ভেজার একটা টুর আছে। সাড়ে সাতশ ইউনিট দিলে দশ মিনিট ভিজতে দেয়। সিনথেটিক বৃষ্টি। আর এইটা হল একেবারে খাঁটি প্রাকৃতিক বৃষ্টি।
টুকি রেগেমেগে কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল। সামনে আবছা অন্ধকারে উঁচু মতন কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। উপরে হঠাৎ একটা আলো জ্বলে উঠে আবার নিভে গেল। টুকির হঠাৎ মনে হল সে আগে কোথাও ওটা দেখেছে, কিন্তু কোথায় দেখেছে কিছুতেই মনে করতে পারল না। ভয় পাওয়া গলায় বলল, ওটা কী—
(উৎসাহী পাঠকেরা ইচ্ছে করলে আবার বইয়ের গোড়া থেকে শুরু করতে পারেন!)