টুকি এবং ঝা ভাল করে তাকিয়েও কিছু খুঁজে পেল না। জিজ্ঞেস করল, কোথায়? কিছু তো দেখছি না।
আপনাদের চোখ তো ইনফ্রারেড দেখতে পারে না তাই দেখছেন না। কোন চিন্তা করবেন না, আমি নিয়ে যাচ্ছি।
গ্রহের মাঝামাঝি এক জায়গায় সুড়ঙ্গের মত একটা গর্ত নিচে নেমে গেছে, ভিতর থেকে উষ্ণ এক ধরনের বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। ঝা মনমরা গলায় বলল, ঢোকার এই একটাই রাস্তা?
রোবি বলল, হ্যাঁ! ঢোকার এবং বের হবার একটাই রাস্তা।
ঝা বলল, টুকি মনে আছে চুরি বিদ্যার ডিপ্লোমা কোর্সে আমাদের সবচেয়ে প্রথম কি শিখিয়েছিল?
মনে আছে। যেখানে ঢোকার এবং বের হবার রাস্তা মাত্র একটা কখনো তার মাঝে চুরি করতে ঢুকবে না।
তাহলে ঢোকা কী উচিত হচ্ছে?
আমরা তো এখন চুরি করতে ঢুকছি না, ঢুকছি ডাকাতি করতে।
ঝা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, অ।
অন্ধকার সুরুঙ্গ দিয়ে টুকি এবং ঝা নিচে নামতে শুরু করে। সুরুঙ্গের বাইরে স্কাউটশীপ নিয়ে রোবি অপেক্ষা করছে। বের হয়ে এলেই তাদের নিয়ে পালিয়ে যাবে। স্কাউটশীপের মাথায় ছোট আলো লাগানো রয়েছে। সেটা দিয়ে সামনে পথ আলোকিত করে তারা হাঁটতে থাকে। গাঢ় অন্ধকার, ছোট আলোতে সেটা দূর না হয়ে মনে হয় আরো জমাট বেঁধে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সুরুঙ্গ যত গভীরে নামতে থাকে অন্ধকার আরো গাঢ় হতে শুরু করে। অন্ধকারে হাতড়ে আরো কিছুদূর নেমে ঝা বলল, কিছু একটা গোলমাল আছে মনে হয়। এত অন্ধকার কেন? ভুল জায়গায় চলে এসেছি নাকি?
টুকি শুকনো গলায় বলল, ভুল জায়গা ন, ঠিক জায়গাতেই এসেছি। দেখছ না কী মসৃণ দেয়াল, নিখুঁত সিঁড়ি। হাত ধরার রেলিং।
কিন্তু আলো নেই কেন? লোড শেডিং হচ্ছে নাকি?
কী বল বোকার মত? লোড শেডিং কেন হবে?
অন্ধকারে যদি আছাড় খেয়ে যাই। পড়ে হাত-পা ভেঙে গেলে একটা কেলেংকারি হয়ে যাবে।
সাবধানে হাঁট।
সাবাধানে হাঁটতে হাঁটতে তারা এক সময় হারিয়ে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকার তার মাঝে নানা রকম গলি ঘুজি, কোনটার মাঝে ঢুকবে বুঝতে না পেরে ইতস্তত হাঁটাহাঁটি করতে করতে এক সময় তাদের আর বোঝার কোন উপায় রইল না তারা কোথায় আছে। ঝা ভয় পাওয়া গলায় বলল, কোথায় চলে এসেছি? এতো দেখছি গোলক ধাঁধার মত।
টুকি বলল, চিন্তার ব্যাপার হল। আমাদের পোশাকের পাওয়ার সাপ্লাই তো শেষ হতে চলল। একটু পরে তো আলো নিভে যাবে।
সর্বনাশ। ডাকাতির কাজ নেই। চল ফিরে যাই।
চল।
টুকি এবং ঝা উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে, ঘণ্টা খানেক হেঁটেও তারা কোন পথ খুঁজে পেল না এবং অবস্থা আরো খারাপ করে দেবার জন্যে প্রথমে টুকির এবং তারপর ঝায়ের মাথায় লাগানো বাতি দুটি নিভে গিয়ে তারা গাঢ় অন্ধকারে ড়ুবে গেল।
ঝা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, সর্বনাশ!
টুকি শুকনো গলায় বলল, চিন্তার বিষয় হল।
ঠিক তখন তাদের কানের কাছে থেকে কে যেন বলল, চিন্তার কোন ব্যাপার নেই ভাই। আমরা আছি?
ঝা ভয় পেয়ে একটা আর্ত চিৎকার করে বলল, কে? কে কথা বলে?
আমরা এই গ্রহের বাসিন্দা। আমার নাম রু। তোমাদের নাম কী ভাই?
ঝা কাঁপা গলায় বলল, আমার নাম ঝা।
টুকি বলল, আমার নাম টুকি।
কী সুন্দর নাম। আহা। টুকি এবং ঝ। ঝা এবং টুকি।
টুকি এতক্ষণে একটু সাহস ফিরে পেয়েছে, সে গলা উঁচিয়ে বলল, এখানে এত অন্ধকার কেন?
এতক্ষণ যে কথা বলছিল সে হঠাৎ চুপ করে গেল। টুকি আবার বলল, কী হল? রু—কথা বলছ না কেন? এখানে এত অন্ধকার কেন?
রু নরম গলায় বলল, অন্ধকার বড় আপেক্ষিক কথা। তোমাদের জন্যে যেটা অন্ধকার আমাদের জন্যে সেটা আলো।
তার মানে কী? আর তুমি কোথা থেকে কথা বলছ?
আমি তোমাদের কাছেই আছি সারাক্ষণ। এতক্ষণ তোমাদের মাথার ঐ বিদঘুটে আলোর জন্যে কিছু দেখতে পারছিলাম না বলে কথাবার্তা বলিনি। এখন ওটা নিভেছে তাই দেখতে পাচ্ছি–
দেখতে পাচ্ছ? এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে দেখতে পাচ্ছ?
ঐ যে বললাম ভাই, তোমাদের কাছে যেটা অন্ধকার আমাদের কাছে সেটা আলো। আমাদের চোখ হচ্ছে অবলাল সংবদী—যার অর্থ আমরা ইনফ্রারেড আলো দেখতে পারি। তোমার যেই আলো দেখতে পারো আমাদের চোখের রেটিনাকে সেটা নষ্ট করে দেয়। তাই এখানে তোমাদের আলো নেই।
তার মানে তুমি আমাদের দেখতে পাচ্ছ?
পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। এই যে তুমি শুকনো মত, ছোট ছোট গোফ। আর এই যে আরেকজন ছোটখাট পাহাড়ের মতন মাথায় ছোট ছোট চুল-হা হা হা। রাগ করলে না তো ভাই?
ঝা মাথা নেড়ে বলল, না, রাগ করি নাই।
তোমাদের ঘাড় থেকে কালো লম্বা মতন ঐ সব কী ঝুলছে ভাই? দেখে মনে হচ্ছে অনেক ভারী?
জিনিসগুলো ছোট, মাঝারী এবং বড় রেঞ্জের অস্ত্র কিন্তু সেই কথাটা এখন বলে কেমন করে? টুকি আমতা আমতা করে বলল, ইয়ে মানে এটা হচ্ছে যাকে বলে—
যাই হোক এটা কী সেটা নিয়ে পরে কথা বলা যাবে। এখন চল আমার সাথে তোমাদের নিয়ে যাই। আমাদের এই ছোট গ্রহে অতিথি খুব একটা আসে না, কেউ এলে তাই আমাদের খুব আনন্দ হয়।
ঝা কাতর গলায় বলল, কোনদিকে যাব? কিছুই তো দেখি না।
এসো, আমার হাত ধর— বলে অন্ধকারে একজন তার হাত শক্ত করে ধরল।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে একজন ঝায়ের হাত ধরে এগিয়ে নিতে থাকে, ঝায়ের হাত ধরে ধরে এগিয়ে আসে টুকি। কিছুক্ষণের মাঝে তারা আরো মানুষের কথাবার্তা শুনতে পায়, সবাই তাদের দেখছে কিন্তু তারা কিছু দেখছে না ব্যাপারটা চিন্তা করেই টুকি এবং ঝায়ের গায়ে কাটা দিয়ে উঠে।