ঝা নাক নাড়ানোর কোন চেষ্টা না করে ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠল। ডাক্তার এগিয়ে এসে বলল, ডেলিরিয়াম হচ্ছে মনে হয়। তুমি ঘুমের ওষুধ নিয়ে এস আমি দেখছি।
নার্স ঘর হতে বের হতেই ডাক্তার ঝায়ের কাছে এগিয়ে এসে বলল, ঝা–
ঝা নিজের নাম শুনে চমকে উঠে তাকাল। তার সামনে ডাক্তারের পোশাক পরে টুকি দাঁড়িয়ে আছে—শুধু তারও নাকের জায়গায় একটা শাড় ঝুলছে। ঝা আর্তনাদ করে বলল, সর্বনাশ তোমার নাকেও লাগিয়েছে?
ধুর বেকুব। এটা প্লাস্টিকের শূড়, আঠা দিয়ে লাগানো আছে। ভিতরে ব্যাটারী পাওয়ারের যন্ত্রপাতি দিয়ে নাড়া চাড়া করার ব্যবস্থা।
তুমি এখানে কী করে এসেছ?
সেটা অনেক বড় ইতিহাস। এখন বলার সময় নেই। শুধু শুনে রাখ আমি আর রোবি মিলে ডাক্তার আর অস্ত্রোপচারকারী রবোট সেজে তোমার নাকে অপারেশান করেছি।
সত্যি?
ছাই অপারেশন। প্লাস্টিকের একটা নাক আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছি। ভিতরে নাড়াচাড়া করার যন্ত্রপাতি আছে—শুয়ে শুয়ে নাক নাড়ানো প্র্যাকটিস কর। যদি ধরা পরে যাই আমার হবে জেল আর তুমি পাবে সত্যিকারের শূঁড়।
টুকির কথা শেষ হবার আগেই নার্স বড় একটা সিরিঞ্জে বেগুনি রংয়ের কী একটা ওষুধ নিয়ে হাজির হল। টুকি বলল, রোগী মনে হয় নিজেকে সামলে নিয়েছে। আজে বাজে কথা আর বলছে না।
সত্যি?
হ্যাঁ! টুকি ঝায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, নাড়াও দেখি তোমার নাক।
ঝা মুখে হাসি ফুটিয়ে তার নাক নাড়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু খুব সুবিধে করতে পারল না। নার্স শান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গী করে বলল, নার্ভগুলো এখনো জোড়া লাগে নি। একটু সময় নেবে।
ঝা মাথা নেড়ে বলল, আমার কোন তাড়া নেই।
দুদিন পর ঝা ছাড়া পেল, তাকে বিদায় দিতে এল সরকারি কর্মচারী, পুলিশ অফিসার এবং দয়ালু চেহারার মোটাসোটা কিছু মহিলা। ঝা বিছানায় শুয়ে শুয়ে ব্যাটারীর কলকজা লাগানো এই নাকটিকে এর মাঝে বেশ বাগে এনেছে। উপরে তুলতে পারে নিচে নামাতে পারে ডানে বায়ে দুলাতেও পারে। বিদায় সম্ভাষণ জানানোর জন্যে সে তার নাককে দোলাতেই হাসিখুশি চেহারার মোটাসোটা মহিলা খিলখিল করে হেসে বলল, তুমি সবকিছু ওলট-পালট করছ।
ঝা অবাক হয়ে বলল, কী ওলট-পালট?
বিদায় সম্ভাষণ একটা দুঃখের ব্যাপার। দুঃখের ব্যাপারে নাককে দোলাতে হয় না। নাককে তখন সোজা উপরে তুলে রাখতে হয়।
ঝা নাককে উপরে তুলে রাখার চেষ্টা করতে করতে আবার সবার কাছে। বিদায় সম্ভাষণ জানালো। পুরো ব্যাপারটি যত তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় ততই ভাল। তাকে নেয়ার জন্যে টুকি আর রোবি একটা ভাসমান গাড়ি নিয়ে একটু দূরে অপেক্ষা করছে। ভাসমান গাড়ি করে যাবে তাদের স্কাউটশীপে। সেই স্কাউটশীপে করে মূল মহাকাশযানে। সেটি এখন এই গ্রহটিকে ঘিরে একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরছে।
যথসময় ঝা ভাসমান গাড়িতে গিয়ে হাজির হল। ড্রাইভারের সীটে রোবি বসে আছে, ঝাকে দেখে বলল, উঠে পড়ন মহামান্য ঝা। আমরা আপনার জন্যে অপেক্ষা করছি।
ঝা উঠে নিজের সীটে বসতে বসতে বলল, ধন্যবাদ রোবি।
আপনার সেবা করতে পেরে আমার জীবন ধন্য মহামান্য ঝা এবং মহামান্য টুকি।
ঝা নিচু গলায় টুকিকে জিজ্ঞেস করল, রোবির ভাবভঙ্গী এত নরম, ব্যাপার
কী?
টুকি দাঁত বের করে হেসে বলল, তোমার নাকে অপারেশান করার জন্যে যে ডাক্তার ঠিক করা হয়েছিল তাকে যখন খুঁজে বের করছিলাম তখন এক কাণ্ড হল।
কী কাণ্ড?
মনে আছে রোবির মেজাজের কথা?
মনে নেই আবার?
সেই মেজাজ দেখিয়ে ফেলল এক পুলিশ রবোটের সাথে। আর যায় কোথা তক্ষুণি ধরে কপোট্রনে অস্ত্রোপচার। রাগ বদমেজাজ যা ছিল তক্ষুণি পরিষ্কার করে সেই পুলিশ রবোট টেরাবাইট ভদ্রতা আর আদব লেহাজের সফটওয়ার ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমাদের রোবি সেই থেকে একেবারে মাটির মানুষ। তাই না রোবি?
রোবি বলল, আপনাদের সেবা করার জন্যে আমার জন্ম। এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির কাছে প্রার্থনা করি আপনাদের সেবা করতে করতে একদিন আমার কপোট্রনে শর্ট সার্কিট হোক।
ঝা দাঁত বের করে হেসে বলল, চমৎকার। এই তো চাই।
ভাসমান গাড়ি স্কাউটশীপের কাছে পৌঁছে গেল। দুজনে রোবির পিছু পিছু স্কাউটশীপে ঢুকে পড়ল। স্কাউটশীপে প্রাথমিকভাবে চালু করার সময় এক ধরনের স্পেস স্যুট পরতে হয়, নাকের কাছ থেকে প্রাস্টিকের শূড় ঝুলছে বলে তাদের স্পেস স্যুটের হেলমেট পরতে খুব অসুবিধে হচ্ছিল। ঝা বলল, টান দিয়ে খুলে ফেলব না কী এই নাক?
টুকি হা হা করে বলল, না না-এখনই না। এই এলাকা ছেড়ে পার হই আগে।
কিছুক্ষণের মাঝেই দেখা গেল টুকি এবং ঝাকে নিয়ে একটা স্কাউটশীপ মহাকাশের দিকে ছুটে যাচ্ছে।
যে নক্ষত্রের কাছে এসে তাদের হাইপার ডাইভ দেবার কথা টুকি এবং ঝা প্রায় তার কাছাকাছি চলে এসেছে। কয়েকদিনের মাঝেই তারা হাইপার ডাইভ দিতে পারবে। এম-সেভেন্টিওয়ানের মানুষের কলোনীর এলাকা মোটামুটি শেষ। এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু মানুষ বা রবোট থাকতে পারে কিন্তু বিপজ্জনক কিছু নেই। নানারকম যন্ত্রণার পর পৃথিবীতে শেষ পর্যন্ত ফিরে যেতে পারবে বলে মনে হচ্ছে সেটা চিন্তা করে টুকি এবং ঝা দুজনেরই মনে আনন্দের ভাব। রোবির কপোট্রনে এক টেরাবাইট দ্রতা এবং আদব লেহাজের সফটওয়ার ঢুকিয়ে দেওয়ার পর সে একেবারে পাল্টে গেছে। টুকি এবং ঝায়ের আরাম আয়েশের জন্যে রোবি মোটামুটিভাবে নিজের জীবন পাত করে ফেলছে। মহাকাশযানের গোপন রিজার্ভ থেকে ভালমন্দ খাবার বের করে দুই বেলা রান্না হচ্ছে সব মিলিয়ে মহাকাশযানে একটা স্কুর্তি সূর্তি ভাব। টুকি এবং ঝায়ের আনন্দের বড় কারণ অন্য জায়গায় বিদ্রোহী গ্রহ থেকে তারা যে পরিমাণ হীরা তুলে এনেছে পৃথিবীতে পৌঁছে সেটা বিক্রি করে তারা কয়েকশ বছর রাজার হালে থাকতে পারবে।