টুকি দাঁত কিড়মিড় করে বলল, এখন তো শুধু কথা বলছি, যখন রদ্দা লাগানো শুরু করব, তখন বুঝবে মজা
টাইরা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়েছিল। মধ্যবয়স্কা একজন মহিলা তার কঠিন মুখে কুটিল একটা হাসি ফুটিয়ে বলল, এক সপ্তাহের মাঝে আমি ওকে সিধে করে দেব। শুধু বিয়েটা হয়ে নিক।
ঝা টুকির হাত ধরে বলল, এখানে চেচামেচি করে লাভ নেই। চল আমরা যাই।
টাইরা জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাবে?
যেখান থেকে এসেছি সেখানে যাব।
এখন বাইরে যেয়ো না। আধপাগলা একটা রবোট ঘুরে বেড়াচ্ছে, কোথা থেকে এসেছে কে জানে, সবাইকে সমানে গালিগালাজ করে যাচ্ছে।
রোবি!
তোমরা চেনো সেটাকে?
চিনি। কোন্ দিকে গেছে?
উত্তরে-পাহাড়ের দিকে।
টুকি ঝায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, চল ঝা।
কেউ কিছু বলার আগে টুকি এবং ঝা ঘর থেকে বের হয়ে এল। তাদের পিছু পিছু মধ্যবয়স্কা মহিলা দুজন বের হয়ে বলল, সে কী! কোথায় যাচ্ছ তোমরা? তোমাদের জন্যে কত যৌতুক দিয়েছি জান?
টুকি ঝাকে বলল, পা চালিয়ে চল।
দেখা গেলে মহিলা দুজন এত সহজে তাদের যৌতুক দেওয়া স্বামীদের ছেড়ে দিতে রাজী না। তারা পিছু পিছু ছুটতে লাগলো। ঝা পিছনে তাকিয়ে বলল, দৌড়াও।
টুকি এবং ঝা পাহাড়ের দিকে ছুটতে লাগল পিছু পিছু ধাওয়া করে এল দুজন কঠিন চেহারার মহিলা, তাদের পিছু পিছু মজা দেখার জন্যে আরো অসংখ্য শিশু, কিশোরী, তরুণী, মধ্যবয়স্কা মহিলা এবং বৃদ্ধা। পিছন থেকে একটা দুইটা ঢিল এসে পড়ল তাদের গায়ে, টুকি এবং ঝা তখন উধ্বশ্বাসে ছুটতে শুরু করে। চুরি করাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্যে তাদের শরীরের যত্ন নিতে হয়, দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটিতে দুজনেই দক্ষ। কাজেই প্রাণপণে ছুটে সবার নাগালের বাইরে চলে যাওয়া তাদের জন্যে খুব কঠিন হল না। লাল রংয়ের পাহাড়টায় উঠেই তারা তাদের মহাকাশযানটাকে দেখতে পায়, বাইরে রোবি দাঁড়িয়েছিল, টুকি এবং ঝাকে কষে বকুনী দিতে যাচ্ছিল কিন্তু পিছনে বিশাল মহিলা বাহিনী দেখে সে সুড় সুড় করে মহাকাশযানের ভিতরে ঢুকে গেল। ছুটতে ছুটতে এসে টুকি আর ঝাও খোলা দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে শক্ত করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণেই মহিলা বাহিনী এসে মহাকাশযানটাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে।
টুকি গলা উঁচিয়ে বলল, রোবি, মহাকাশযানটা উড়িয়ে নিয়ে চল।
রোবি বলল, ঠিক আছে, যাচ্ছি। এক সেকেন্ড অপেক্ষা করে বলল, কিন্তু ভেবো না তোমাদের কাজকর্মের কথা আমি ভুলে গেছি–মহাকাশে নিয়ে গিয়ে তোমাদের বোঝাচ্ছি মজা।
প্রচণ্ড গর্জন করে যখন মহাকাশযানটা উপরে উঠতে থাকে ঝা তখন জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ভাবী স্ত্রীকে ফেলে রাখার দুঃখে নাকি একটু পরেই রোবি তাদের যে শাস্তি দেবে সেই ভয়ে সেটা ঠিক বোঝা গেল না।
০৯. মহাকাশযান ছেড়ে বাইরে গিয়ে
মহাকাশযান ছেড়ে বাইরে গিয়ে দুদিনের জন্যে হারিয়ে গিয়ে গ্রহের মেয়েদের সাথে একটা ঝামেলায় ফেঁসে যাওয়ার কারণে রোবি বাড়াবাড়ি রাগ করল। টুকি এবং ঝায়ের খাবার বন্ধ রাখল পুরো চব্বিশঘণ্টা এবং শাস্তি হিসেবে তাদেরকে দিয়ে মহাকাশযানের সবগুলো স্কু টাইট করালো। খাটো একটা স্কু ড্রাইভার দিয়ে স্কুগুলো টাইট করতে গিয়ে তাদের আঙুলের যা একটা দশা হল সেটি আর বলার। মত নয়।
মহাকাশযানে টুকি এবং ঝায়ের জীবন মোটামুটি দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়াল। হাবাগোবা রোবির কপোট্রনে রবোটদের নিজস্ব মানবিক অনুভূতি ঢুকিয়ে দেবার পর টুকি এবং ঝায়ের এক মুহূর্তে শান্তিতে থাকার উপায় রইল না। মাঝারী নক্ষত্রটার কাছাকাছি গিয়ে হাইপার ডাইভ দিয়ে পৃথিবীতে পৌঁছানোর আগে তাদের জীবনে শান্তি ফিরে আসবে সেরকম কোন আশাই নেই। নক্ষত্রটিতে পৌঁছাতে সপ্তাহ দুয়েক লাগার কথা, এই দুই সপ্তাহ একটি ডোতা যন্ত্রণা হিসেবে রোবি তাদের জীবনকে বিষিয়ে রাখবে টুকি এবং ঝা সেটা নিয়ে মোটামুটিভাবে নিশ্চিত ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল তাদের জন্য আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছে। বিস্ময়গুলো হালকা বিস্ময় নয় ভয়ংকর ধরনের বিস্ময়। ব্যাপারটা শুরু হল এভাবে।
মহাকাশযানের তিন-চতুর্থাংশ স্কু টাইট করার পর যখন টুকি এবং ঝা আঙুলের ব্যথায় ঘুমাতে পারছে না তখন একদিন তারা জরুরী চ্যানেলে একটা আবেদন শুনতে পেল, কাছাকাছি একটা গ্রহের কক্ষপথে একটা মহাকাশযান আটকা পড়ে আছে। মহাকাশযানে খাবার জ্বালানী শেষের দিকে। ট্রান্সমিটারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে বলে সেটি দূরে খবর পাঠাতে পারছে না। কাছাকাছি একটা সাহায্যের আবেদন পাঠিয়ে যাচ্ছে। একজন বিপদগ্রস্থ মানুষ অন্য বিপদগ্রস্থ মানুষকে সাহায্য করতে পারে না এই যুক্তিতে প্রথমে টুকি এবং ঝা ব্যাপারটাকে উপেক্ষা করে চলে যেতে চাইছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সেটা করতে পারল না। বিপদগ্রস্থ মহাকাশযানটিকে সাহায্য করার জন্যে তারা নিজেদের কক্ষপথ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিল।
মহাকাশযানটির কাছাকাছি এসে টুকি এবং ঝা যোগাযোগ করল, বিপদগ্রস্থ মানুষটি কাতর গলায় জানাল তারা স্বামী স্ত্রী এবং দুটি সন্তান নিয়ে চারজন মানুষ। মহাকাশ-দস্যুর একটি দল তাদেরকে মুক্তিপণের জন্যে ধরে নিয়েছিল, তারা কোনভাবে পালিয়ে এসেছে। তাদের ছোট মহাকাশযানটি এমনিতেই বিধ্বস্ত ছিল তার উপর মাঝপথে জ্বালানী এবং খাবার দুইই শেষ হয়ে গেছে, এখন কোন ধরনের খাবার এবং জ্বালানী না পেলে তারাও শেষ হয়ে যাবে।