খাবারের আয়োজন ছিল সহজ, কিন্তু খুব সুন্দর করে টেবিলে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল। টুকি এবং ঝা খুব তৃপ্তি করে খেল। খাওয়া সেরে উঠতে গিয়ে হঠাৎ করে টুকি এবং ঝায়ের মাথা দুলে উঠে, কোনমতে টেবিল ধরে নিজেদের সামলে নিল। টাইরার স্বামী বলল, তোমরা হাঁটাহাঁটি করো না। তোমাদের খাবারের সাথে আমি ঘুমের ওষুধ দিয়েছি।
টুকি হতচকিত হয়ে বলল, কী দিয়েছ?
ঘুমের ওষুধ।
টুকি হঠাৎ করে এক ধরনের আতংক অনুভক করে। সত্যি সত্যি ঘুমে তাদের চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। কোন মতে কষ্ট করে চোখ খুলে রাখার চেষ্টা করতে করতে বলল, কেন দিয়েছে?
একা বাইরে গিয়ে কী বিপদে পড়বে। বাইরে শুধু দুষ্ট মেয়ে মানুষ আর নষ্ট মেয়ে মানুষ। তোমাদের মত সাদাসিধে পুরুষদের একা পেলে কী অবস্থা হবে জান?
টুকি আরো কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই গভীর ঘুমে তাদের দুই চোখের পাতা জড়িয়ে এল।
০৮. ঘুম থেকে জেগে উঠে
ঘুম থেকে জেগে উঠে ঝা দেখল তার পাশে একজন অপরিচিত মানুষ শুয়ে আছে। ঝা ভাল করে তাকাল এবং হঠাৎ করে বুঝতে পারল মানুষটি টুকি, কেউ একজন তার বিশাল গোঁফ জোড়া নিখুঁত ভাবে চেছে দিয়েছে বলে চিনতে পারছিল না। ঝা ধরমর করে উঠে বসল, হঠাৎ করে তার সবকিছু মনে পড়ে গেছে।
তারা ছোট একটা পাথরের ঘরে শুয়ে আছে, বুক পর্যন্ত কম্বল দিয়ে ঢাকা। ঝ কম্বল ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে উঠে বসে টুকিকে একটা ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করল। টুকি বিড় বিড় করে কিছু একটা বলে পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করছিল কিন্তু ঝা আবার তাকে ধরে একটা ঝাকুনী দিল। এবারে টুকি চোখ খুলে তাকিয়ে বলল, কে? কী হয়েছে?
আমি।
টুকি চোখ বড় বড় করে বলল, ঝা? তোমার একি অবস্থা? চুল কোথায় তোমার?
ঝা মাথায় হাত দিয়ে দেখল তার মাথা কেউ পারিষ্কার করে কামিয়ে দিয়েছে। টুকি দাঁত বের করে হেসে বল, তোমাকে পুরোপুরি গবেটের মত দেখাচ্ছে, মাথাটা কামিয়েছ কেন?
আমি কামাই নি। তোমার গোঁফ যে কামিয়েছে আমার মাথাও সে কামিয়েছে।
গোঁফ? আমার গোঁফ? টুকি লাফিয়ে উঠে বসে নাকের নিচে হাত দিয়ে হঠাৎ করে একবারে ঠাণ্ডা মেরে গেল। এই জগতে তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ছিল তার গোঁফ।
ঝা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, এখান থেকে পালানোর সময় হয়েছে।
টুকি নির্জীব গলায় বলল, কিন্তু আমার গোঁফ?
গোঁফ নিয়ে পরে চিন্তা কর। এখন উঠ। জেট প্যাক আর লেজার প্যাক খুঁজে বের কর।
টুকি মনমরা হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজেদের জিনিসপত্র খোঁজাখুঁজি করতে লাগলো। তাদের ঘুমের মাঝে কেউ একজন পোশাক পাল্টিয়ে ঢলঢলে আলখাল্লার মত কিছু একটা পরিয়ে গেছে, কাপড় জামাগুলোও এ ঘরে নেই।
ঘরের মাঝে শব্দ শুনে খুট করে দরজা খুলে গেল, টাইরার স্বামী উঁকি দিয়ে বলল, তোমরা উঠে গেছ?
টুকি কোন কথা না বলে চোখ পাকিয়ে তাকাল, তার দৃষ্টিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে মানুষটি বলল, তোমাদের জন্যে ভাল খবর আছে।
আমার ভাল খবরের দরকার নেই। টুকি মেঘ গলায় বলল, আমাদের জামাকাপড় জেট প্যক লেজার গান কোথায়? এক্ষুণি নিয়ে আস।
তোমাদের জামা কাপড় ধুয়ে দিয়েছি, যা নোংরা হয়েছিল।
জেট প্যাক আর লেজার গান?
ওই বিদঘুটে যন্ত্রগুলো? ওগুলো কী পুরুষ মানুষকে মানায়? সব ফেলে দিয়েছি?
ঝা গর্জন করে বলল, ফেলে দিয়েছ?
হ্যাঁ! মানুষটা মুখে হাসি ফুটয়ে বলল, তোমাদের ভাল খবর কী শুনবে?
না। টুকি ক্রুদ্ধকণ্ঠে বলল, ভাল খবরের কোন দরকার নেই। আমার গোঁফ কেন কেটেছ?
সেটাই তো বলতে যাচ্ছিলাম। তোমাদের বিয়ে ঠিক করেছি।
বিয়ে ঠিক করেছ?
হ্যাঁ! তোমরা যখন ঘুমাচ্ছিলে তখন তোমাদের দেখে পছন্দ করে গেছে। তবে তোমাদের মুখে নাকি বেশি চুল। তাই কেটে কিছু কামিয়ে দিয়েছি।
টুকি দাতে কিড়মিড় করে বলল, তাই কেটে কমিয়ে দিয়েছ!
তোমাদের কারা পছন্দ করল শুনবে না?
টুকি রাগে ফেটে পড়ে বলল, না, আমার শোনার কোন দরকার নেই।
ঝা নিচু গলায় বলল, একটু শুনে দেখলে হয় না?
টুকি চোখ লাল করে ঝায়ের দিকে তাকাল এবং সেই দৃষ্টির সামনে ঝা কেমন জান মেইয়ে গেল।
টাইরার স্বামী মুখে হাসি ধরে রেখে বলল, তোমাদের কোন আপনজন নেই, অভিভাবক নেই, ভারী ভাবনা হয় আমার। সে জন্যেই তো খুঁজে পেতে দুজন মেয়ে বের করেছি। ঠিক মেয়ে নয় মহিলাই বলা উচিত। মধ্য বয়স্কা মহিলা—খুব শক্ত ধরনের।
টুকি আবার গর্জন করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল ঠিক তখন বাইরে নারী কণ্ঠ শোনা গেল। টাইরার স্বামীর চোখ মুখ হঠাৎ আনন্দে ঝলমল করে উঠে, সে মধুর ভঙ্গীতে হেসে বলল, আমার স্ত্রী তোমাদের যাদের সাথে বিয়ে হবে তাদের তাদের নিয়ে এসেছে। বিয়ের আগে একটু পরিচয় হওয়া ভাল। তোমরা চাদর দিয়ে শরীর ঢেকে নেবে?
টুকি এবং ঝা চাদর দিয়ে শরীর ঢেকে নেবার কোন আগ্রহ না দেখিয়ে টাইরার স্বামীকে একরকম ঠেলে ঘর থেকে বের হয়ে এল। বাইরে দুজন মধ্যবয়স্কা মহিলা টাইরার পিছনে দাঁড়িয়েছিল, তাদের চুল ছোট করে ছাঁটা, ক্রুর দৃষ্টি এবং মুখে সৈনিক সুলভ কাঠিন্য। টুকি এবং ঝাকে দেখে দুজনে কেমন যেন আঁৎকে উঠে। টুকি কঠোর গলায় বলল, এখানে এসব কী হচ্ছে? আমাদের জিনিসপত্র কোথায়? কে তোমাদের আমাদের চুল দাড়ি গোঁফে হাত দিতে বলেছে? কত বড় সাহস আমাদের খাবারে ঘুমের ওষুধ দিয়েছ?
টাইরা অবাক হয়ে বলল, ছিঃ ছিঃ! পুরুষ মানুষ এভাবে কথা বলে কখনো?