মানুষটি নিজেই উঠে গেল কফি আনতে। মানুষটি লম্বা, হাঁটে সোজা হয়ে। পায়ের জুতো সাদা, ঠিক যে রকম অনুমান করেছিল। মানুষটি দুটি মগে কফি ঢেলে তার দিকে এগিয়ে আসে। লিডিয়ার সামনে একটা কফির মগ রেখে সে আবার তার চেয়ারে গিয়ে বসল। লিডিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?”
“না। কোনো অসুবিধে হয়নি।” লিডিয়া কফির মগে চুমুক দিয়ে বুঝতে পারল পৃথিবীতে এর চাইতে ভালো কফি হওয়া সম্ভব নয়।
“আমার নাম উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী। আমাকে বিল বলে ডাকতে পার।”
রিকার্ডো বলেছিল তাকে নাম ধরে না ডাকতে, কিন্তু লিডিয়া নাম ধরে ডাকল, বলল, “তোমাকে ধন্যবাদ বিল।”
রিকার্ডো বলেছিল সরাসরি তার চোখের দিকে না তাকাতে, কিন্তু লিডিয়া সরাসরি উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জীর চোখের দিকে তাকাল, এতো নীল। চোখ সে আগে কখনো দেখেনি।
উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী তার কফি মগে চুমুক দিয়ে বলল, “আমি তোমার রিপোর্টটা দেখেছি। তোমার চিন্তার স্টাইলটা আমার পছন্দ হয়েছে। তুমি কী আমাকে তোমার মত করে বোঝাতে পারবে মানুষ কেন পোষা কুকুরের বদল পোষা মানুষের বাচ্চা রাখবে?”
লিডিয়া একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, “মানুষ পোষা পশুপাখী রাখে সঙ্গ পাবার জন্যে। যে প্রাণী যত বুদ্ধিমান সে তত ভালো সঙ্গ দিতে পারে। মানুষ থেকে বুদ্ধিমান আর কোন প্রাণী আছে? তাই মানুষের বাচ্চা সবচেয়ে ভালো সঙ্গ দিতে পারবে। তুমি নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ আমার রিপোর্টে আমি পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি এই মানুষের বাচ্চাগুলো আইন মাফিক বাজার থেকে কেনা যাবে কারণ এরা পুরোপুরি স্বাভাবিক বাচ্চা হবে না। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে এই বাচ্চা গুলোর মাঝে কিছু পরিবর্তন করে কংগ্রেস থেকে পাস করিয়ে নিতে হবে যে দেখতে মানুষের মতো হলেও এরা আসলে মানুষ প্রজাতি নয়। এরা মানুষ এবং পশুর কাছাকাছি একটা প্রাণী। এরা হাসিখুশি হবে কিন্তু কোনো কথা বলবে না। এদের বুদ্ধিমত্তা হবে সীমিত, স্মৃতিশক্তি হবে দুর্বল। এদের আয়ু হবে সর্বোচ্চ দশ বছর। যারা এতোদিন বাসায় কুকুর পুষছে তারা এখন মানুষের বাচ্চা পুষবে।”
“তুমি কেন মনে কর কংগ্রেস থেকে এই প্রজাতিকে মানুষ নয় সেটা পাশ করিয়ে নেয়া যাবে?”
“আমি জানি তোমার অনেক ক্ষমতা। তাছাড়া কংগ্রেসম্যান আর সিনেটরদের টাকা দিয়ে কেনা যায়। আমরা কাজটা সহজ করে দেব বিজ্ঞানীদের সাহায্য নিয়ে।”
উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী তীক্ষ্ণ চোখে লিডিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “তুমি কীভাবে বিজ্ঞানীদের সাহায্য নেবে?”
“আমরা বলব এই মানুষের বাচ্চাগুলো আসলে কোনো মায়ের গর্ভে জন্ম নেয় না। এরা জন্ম নেয় ল্যাবরেটরির কৃত্রিম পরিবেশে?”
“এটা কী সত্যি?”
“না। কিন্তু আমরা পৃথিবীর একাধিক ল্যাবরেটরিতে এটা করে দেখাব। যখন দেখানো হবে একটা স্তন্যপায়ী প্রাণী ল্যাবরেটরির কৃত্রিম পরিবেশে জন্ম নেয়ানো সম্ভব হয়েছে তখন সবাই মেনে নেবে এই প্রযুক্তি আছে। জার্নালে প্রকাশিত তথ্য কে অবিশ্বাস করবে?”
“একটা মিথ্যা গবেষণার ফল কীভাবে জার্নালে ছাপাবে?”
লিডিয়া শব্দ করে হাসল, বলল “আমার যে দুটি গবেষণা দিয়ে আমি বিজ্ঞানী মহলে পরিচিত হয়েছি দুটিই ভূয়া। রাজনীতিবিদদের যেভাবে কেনা যায় বিজ্ঞানীদেরও সেভাবে কেনা যায়। সবারই একটা মুল্য থাকে–সেই মূল্য দিতে রাজী থাকলে এগুলো খুব সহজ।”
“মানুষের যে বাচ্চাটকে পোষা প্রাণী হিসেবে বিক্রি করতে চাও সেটা দেখতে কেমন হবে তুমি ভেবেছ?”
লিডিয়া মাথা নাড়ল, বলল, “ভেবেছি। তবে আমার ভাবনটাকে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা এটার জন্যে অনেকগুলো জরীপ নিতে পারি।”
উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী বলল, “তবু তোমার ভাবনাটা শুনি।”
“বড় বড় চোখ। চাপা নাক। মুখে হাসি। মানুষ থেকে আলাদা করার জন্যে দুই পায়ে দাঁড়া করানোর প্রয়োজন নেই। গায়ে পশম। নিউট্রাল জেন্ডার অর্থাৎ ছেলেও না মেয়েও না। এরা মানুষের প্রজাতির না সেটা প্রমাণ করার জন্যে বাড়তি কিছু ক্রমোজম দেয়া যেতে পারে।”
“আর কিছু?”
“কখনো চেহারার মাঝে দুঃখ বেদনায় ছাপ পড়বে না। যখন কষ্ট পাবে তখনও হাসবে। যন্ত্রণা পেলেও হাসবে। মানুষ কখনোই জানবে না তার ভেতরে কষ্ট আছে।”
উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “এই মানুষের বাচ্চার ব্যবসা করে কতো বিলিওন ডলার আসতে পারে তার যে হিসেবটি দিয়েছ সেটা আমি পরীক্ষা করে দেখেছি। সঠিক হিসেব। ভালো কাজ হয়েছে।”
“ধন্যবাদ।”
“আমি যদি তোমার এই প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন করতে চাই কতোদিন লাগবে?”
“তুমি কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে চাও তার উপর নির্ভর করবে। যদি টাকা পয়সা কোনো সমস্যা না হয় তাহলে দুই বছর।”
“ঠিক আছে মেয়ে, আমি তোমাকে দুই বছর সময় দিচ্ছি।”
“ধন্যবাদ।”
“তুমি এখন যেতে পার।”
লিডিয়া উঠে দাঁড়ল, বলল, “শুভ রাত্রি।”
“শুভ রাত্রি।”
লিডিয়া যখন ঠিক ঘর থেকে বের হয়ে যাবে তখন উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী তাকে থামাল, বলল, “তুমি কী এই পোষা মানুষের বাচ্চার কোনো নাম ঠিক করেছ?
“করেছিলাম।”
“কী?”
লিডিয়া একটু ইতস্তত করে বলল, “এটাকে এনিম্যান বলা যায়। এনিম্যালের এনি এবং হিউমানের ম্যান। এনিম্যান।”
“ঠিক আছে লিডিয়া, তোমার এনিম্যান প্রজেক্ট সফল হোক।”
০৪. তিষা বাসায় ঢুকে তার মাকে বলল
তিষা বাসায় ঢুকে তার মাকে বলল, “আম্মু, বল দেখি এটার মানে কী?”